দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৪২)
পর্ব – ৪২
১৪১
“ দেখুন, চিঠির সই আপনার বলছেন, তাহলে কি লেখা আছে চিঠিতে এটা বলার কোনো মানে হয় না!”
শ্যামলীর মা বাসন্তীবালাও চোখে আঁচল চাপা দিয়েছেন। “ওরে শ্যামলিমা, তুই এই শেল এতদিন বুকে চেপে ছিলি। আমাদের জানতেও দিস নি। “
রমানাথ বললো, “আমার কিন্তু একটা কথা বলার আছে। আমার বাবা মোটেই লেখাপড়া জানেন না। শুধুমাত্র নামটুকু সই করতে পারেন। ফলে এ চিঠির তলায় বাবার সই থাকলেও, চিঠির বক্তব্য কি সেটা বাবার জানা নেই।“
নকুড় নন্দী নিস্পৃহ তাকিয়ে থাকেন।
শশাঙ্ক পাল বলেন “ দাদা, এ চিঠি আপনি কাকে দিয়ে লিখিয়েছেন?”
অসহায় ভাবে নকুড় নন্দী বলেন, “ তার নামটা আমায় বলতে বাধ্য কোরো না ভাই।“
শ্যামলী বললো “দেখুন জ্যেঠু, আপনি চান আর না চান, আপনি একটা চিঠির তলায় সই করলে, আপনি নেহাত না বুঝে সই করে ফেলেছেন এটা কেউ মেনে নেবে না। আমি তো নেবোই না। আমার মান সম্মান জড়িয়ে যায় এতে।“
রমানাথ বললেন, “ও রকম কথা বোলো না শ্যামলী , আমি যখন বলছি আমার বাবা একেবারেই লেখাপড়া জানেন না, শুধু সইটুকু কোনো মতে শিখেছেন, আর সেটা স্পষ্ট ভাবে আমার বাবা মায়ের উপস্থিতিতে বলছি, তাহলে সেটা তোমার বিশ্বাস করা উচিত।“
শক্ত গলায় শ্যামলী বলে, “রমানাথ বাবু, আপনি জানেন না, এই বিষয়টা নিয়ে কোর্টে বিচারকের সামনে পর্যন্ত বিপক্ষের উকিল আমায় বিশ্রি ইঙ্গিত করেছেন । আমার কলেজে এ কথা কে বা কারা রটিয়ে দিয়েছে। আজ জ্যেঠু যদি না বলতে চান কে তাঁকে দিয়ে এভাবে সই করিয়ে নিয়েছে, তাহলে আমায় আইনের পথে যেতে হবে।“
হতাশ গলায় নকুড় নন্দী বলেন, “ আমি নিরুপায়। তার নামটি বলতে আমায় বাধ্য কোরো না।“