দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৪৩)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ৪৩
১৪২
টেবিলে মিষ্টির প্লেট রেখে সবিতা অতিথিদের অনুরোধ করলো মিষ্টি মুখ করতে। নকুড় নন্দী মিষ্টির দিকে তাকালেন না। তাঁর স্ত্রীও অন্যদিকে চেয়ে রইলেন। সবিতা শ্যামলীকে ইঙ্গিত করলো যে অতিথিদের যেন সনির্বন্ধ অনুরোধ করে। শ্যামলী তার পিসির কথায় কান দিল না। এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠতে শশাঙ্ক পাল উঠে গিয়ে ঘরের কোণে টেবিলের কাছে গিয়ে ফোন ধরলেন, তার পর নকুড়ের দিকে চেয়ে বললেন “দাদা, আপনার বাড়ি থেকে ফোন করেছেন।”
নকুড় ধীরে সুস্থে উঠতে উঠতে মন্তব্য করলেন, “সবাই জানে, একটা দরকারি কাজে এসেছি, তবু কেন …”
তার পর ফোন ধরে দু একটা কথা বলার পরই যন্ত্রণায় মুখ বিকৃত করে বলে উঠলেন “ হে ভগবান, এই কথা শোনার জন্যে আমায় বাঁচিয়ে রেখেছ?”
চিন্তিত মুখে শশাঙ্ক বললেন, “ কি হয়েছে দাদা? কোনো খারাপ খবর?”
তীব্র মনোবেদনায় উত্তর না দিতে পেরে নকুড় নন্দী দেওয়াল ধরে নিজেকে সামলাতে চাইছিলেন। দ্রুত পায়ে রমানাথ এগিয়ে এসে তার বাবাকে সামলে নিতে চাইল। নকুড়কে চেয়ারে বসিয়ে রমানাথ জানতে চাইল তাঁর শরীর খারাপ করছে কি না। শশাঙ্ক পাল ব্যস্ত হয়ে উঠতে রমানাথ তাঁকে বসতে বললেন। তারপর বাড়িতে ফোন করে জানতে পারলেন তাঁর বাবার গুরুদেবকে নারী নির্যাতন, বধূ নির্যাতন আর প্রতারণার দায়ে উত্তর প্রদেশের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
নকুড় যন্ত্রণাদীর্ণ স্বরে বললেন রমানাথ, কিছু কর বাবা। মানুষটাকে বাঁচা ।
তাঁকে আশ্বস্ত করতে রমানাথ বললেন, ”আচ্ছা, বাবা, কাল একবার খবর নেব।“
মায়েরা চোখে আঁচল চাপা দিয়েছেন। শশাঙ্কের কাছে উঠে গিয়ে শ্যামলী বললো, “বাবা তুমি খুব ভাল করে কিছু না জেনে এ ব্যাপারে জড়িও না।“
শশাঙ্ক মাথা নিচু করে বসে রইলেন। নকুড় তাঁকে উদ্দেশ করে বললেন, “ এই বিপদের দিনে গুরুদেবের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে না তুমি?”
শশাঙ্ক নিচু গলায় বললেন “দাদা, দোষ নেবেন না, আমি একটা মেয়ের বাপ। নারী নির্যাতন, বধূ নির্যাতন শব্দগুলো শুনলে আমায় একটু থমকে যেতেই হয়।“
নকুড় গিন্নি বললেন, “ কারা এই সর্বনাশ করলো রমা?”
রমানাথ বললেন, “আমি ফোনে যে খবর পেলাম, তা আমায় যাচাই করতে দাও, তার পর দেখছি।”
সবিতা বললো, “দাদা, খাবার তৈরি , দুটো মুখে দিয়ে তারপর যাবেন।”
নকুড় বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, “এখন আমার মাথা ফাটছে, আমার মুখে খাবার রুচবে না।”
রমানাথ বলল, “তা হয় না বাবা, আজ আমাদের এ বাড়িতে খেয়ে যেতেই হবে, না হলে শ্যামলী ভাববে তুমি ওকে সত্যি স্নেহ করো না।”
শ্যামলী মাথা নিচু করে বসেছিল । সে উঠে দাঁড়িয়ে বললো “আমি কতকগুলি প্রশ্ন তুলেছিলাম। আমায় চতুর্দিকে নানা কুমন্তব্য শুনতে হয়েছে বলে একটা অভিমানও ছিল। কিন্তু খাওয়া দাওয়া না করে যেতে দেব না। সে হতেই পারে না।“
শশাঙ্ক পাল বলে উঠলেন, “গুরুদেবের যে এমন একটা কিছু হতে যাচ্ছে, আমি আগেই আঁচ করেছিলাম ।“
নকুড় উত্তেজিত গলায় বললেন “ সে কি? তুমি কি আন্দাজ করেছিলে?”
রমানাথ বললেন, “বাবা, সে সব কথা থাক। কাল ভাল করে জেনে বুঝে তার পর কি করবে না করবে স্থির কোরো। এখন ডান হাতের ব্যাপারটা সেরে নিই গে চলো।“
কথাটা শুনে রমানাথকে খুব ভাল লেগে গেল শ্যামলীর।