• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৪৮)

পর্ব – ৪৮

শান্তু বলল, টাকার জন‍্য আমায় কতক্ষণ ধরে হাপিত‍্যেশ করে থাকতে হবে?

শ‍্যামলী বলল, তুমি আমার কাছে টাকা চাইছ? আমার কাছে টাকা ক‌ই?
শান্তু ধমক দিয়ে বলল, ন‍্যাকামি করছিস না? তোর হেপাজতেই তো সব টাকা। আজ ব‍্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলেছিস, সেখান থেকে দে।
শ‍্যামলী বলল, ভুল করছ দাদা। কারবার বাবার। বাবা আমাকে কর্মচারী হিসেবে রেখেছেন। পেটভাতায় কাজ করি। আমার নিজের পকেটে দেবার মতো টাকা ক‌ই?
শান্তু বেশ রেগে গিয়েছে টের পেয়ে শ‍্যামলী বলল, বিশ্বাস না হয়, আমার ব‍্যাগ খুলে দ‍্যাখো।
মেয়েছেলের ব‍্যাগে হাত আমি দিই না। শান্তু জোর গলায় বলল।
“মেয়েছেলে” শব্দটা কট করে কানে লাগল। কিন্তু সে নিয়ে শান্তুকে সমালোচনা করল না শ‍্যামলী। বলল, সেটা সত‍্যি হলে তোমার বোন হিসেবে গর্বিত হতাম।
শান্তু বলল, তার মানে?
শ‍্যামলী বলল, মানেটা খুব সহজ দাদা। কেউ তোমার সামনে বিশ্বাস করে পার্স রেখে বাথরুমে গিয়ে থাকলে, সেই ফাঁকে তার ব‍্যাগ ঘাঁটাঘাঁটি করা মোটেও ভালো কাজ নয়।
 তুই বলতে চাইছিস, তুই বাথরুমে ঢোকার প‍র আমি তোর ব‍্যাগ খুলেছিলাম?
শ‍্যামলী বলল, ব‍্যাগে আমার তেমন কিছু নেই যে বাড়ির কেউ দেখলে বিশেষ সমস‍্যায় পড়ব। তবে অভ‍্যাস হিসেবে এভাবে ব‍্যাগ খুলে দেখাটার প্রশংসা করছি না।
 তুই আমাকে চোর বলছিস? শান্তু চিৎকার করে উঠল।
শ‍্যামলী বলল, চুরি করার মতো ব‍্যাগে কিছুই ছিল না। কিন্তু ব‍্যাগের চেন তুমি না খুললেই ভাল করতে।
টাকা দিবি কি না বল্, আমি টাকা না নিয়ে যাব না।
 ব‍্যাগ খুলে দেখেছ ব‍্যাগে টাকা নেই। এবার আর কি কি খুলে দেখতে চাও বলো। গায়ের জোরে তো তোমাদের বাধা দিতে পারছি না!
 রাগত স্বরে শান্তু বলল, “তোমাদের” মানে?
শ‍্যামলী শান্তভাবে বলল, একটা লোক ধর্ষণ করে ধরা পড়েছে। আর তার উপর কতকগুলো প্রতারণার মামলা। আবার শুনেছি বিয়ে লুকিয়ে সাধু সেজে ঘুরে বেড়ায় লোকটা। তার উকিল খরচা যোগাতে হবে আমায়! হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না।
 হিসহিস করে শান্তু বলল, তোর পার্সোনাল টাকা আমি মোটেও চাই নি। তুই কার সাথে হোটেলে শুয়ে রোজগার করিস, সে টাকার ভাগ আমি চাইব কেন? আমি আমার বাপের টাকা নিতে এসেছি।
এমন সময় বাচ্চা শ্রমিকটা মুখ বাড়ালো।
ছোড়দি, খাবার।
দাদা, তোমার নোংরা কথাগুলো আমি কানে নিলাম না। আর টাকা যাঁর, তাঁর কাছে যাও। আমার খাবার আনিয়েছি। দয়া করে আমায় একটু শান্তি করে খেতে দাও।
শান্তু বলল, বেশ। টাকা তাহলে তুই দিবি না? বীরুকাকা ঠিকই বলেছে বাবাকে তুই পকেটে পুরে রেখেছিস!
তোমার অবান্তর কথাগুলো আমায় আর ভাবায় না। তোমার বীরুকাকাকে বোলো, শ‍্যামলী পাল অটোমোবাইলে পেটচুক্তিতে কাজ করে আরো বোলো, এখনো কারবার শশাঙ্ক পালের হাতেই।
এমন সময় বাচ্চা ছেলেটা ঘরে ঢুকে পড়ে বলল, ছোড়দি এবার না খেলে ঠাণ্ডা হয়ে রুটি শক্ত হয়ে যাবে।
ওকে দেখে  মেঝেতে দুপদাপ শব্দ করে পা ঠুকে শান্তু বেরিয়ে গেল। আর শান্তু সত‍্যি সত্যিই বেরিয়ে গেল কি না, খানিকক্ষণ দেখে নিয়ে ছেলেটা বলল, ছোড়দি, করেছিস কী? দোকানে গিয়ে টিপিনকারি খুলে দেখি একগাদা টাকা…
অ্যাই, তোকে কতবার বলেছি, টিপিনকারি বলে কোনো কথা হয় না। টিফিন ক‍্যারিয়ার। চট করে টাকাগুলো দে।
তার হাতে টিফিনের কৌটো তুলে দিয়ে ছেলেটা হাসি মুখে চাইল। শ‍্যামলী কৌটো খুলে দেখে নিল সব টাকাটা ঠিক আছে কিনা।
তারপর বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু এঁকে দিল।
ছলছল চোখে সে বলল, দিদি, আমার গায়ে নোংরা।
তোর মতো পরিষ্কার আমি কাউকে দেখি নি রে। আয় আমার সঙ্গে খা।
তুমি খাও তো। আমি একটু দেখি, বদমাইশটা আবার এসে না ঢোকে।
ছিঃ, কি রে তুই? ও রকম করে বলতে নেই।
অবাধ‍্য ঘোড়ার মতো ঘাড় বাঁকিয়ে সে ছেলে বলল, তোর মায়ের পেটের দাদা, তাই আজ ওকে কিছু বললাম না।
আমি খাবার পরে খাচ্ছি। তুই সবাইকে এ ঘরে ডেকে আন্।
ছোড়দি আগে তুই খা। তারপর তোর স‌অব কথা শুনব।
তখন হেড মিস্ত্রি পরদা ঠেলে ঘরে ঢুকে বলল, একটা কথা ছিল।
শ‍্যামলী কড়া গলায় বলল, তার আগে আপনি বলুন, আমার পারমিশন না নিয়ে আপনি এতক্ষণ বাইরে থাকেন কি করে?

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।