• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৫৪)

পর্ব – ৫৪

অনেক রাতে ঘুম চোখে শ‍্যামলী দেখল তার পাশে কে শুয়ে রয়েছে। ঘরে চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। শ‍্যামলী দেখল সবিতা পিসি অঘোরে ঘুমোচ্ছে। তার গায়ের থেকে শাড়িটা সরে গিয়েছে। টেনে টেনে খানিকটা ঠিক করে দিতে চাইল সে।

ঘুম জড়ানো গলায় সবিতা জানতে চাইল, কি রে, এখন শরীরটা একটু ভালো লাগছে?
হ‍্যাঁ, লাগছে। পিসি, তোমার গায়ের কাপড়টা একটু ঠিক করে নাও।
একটুও সঙ্কুচিত না হয়ে সবিতা বলল, আমি তো তোর আরেকটা মা। বেটির কাছে মায়ের আবার লজ্জা কিসের?
না। ঘুমের ঘোরে যদি কাপড় ঠিক না রাখতে পারো তো নাইটি পোরো।
আলনার পিছন থেকে নিজের বাড়তি রাতপোশাকের থেকে একটা টেনে এনে পিসির গায়ে জড়িয়ে দেয় শ‍্যামলী।
হু। আমি বেওয়া মানুষ। আমি না কি এইসব পরে মেমবুড়ি সাজব?
বুড়ি হ‌ও বা কমবয়সী হ‌ও, নিজেকে ভালভাবে রাখতে হবে। যতটুকু বাঁচবে, ভালভাবে বাঁচতে চেষ্টা করো।
তুই আবার এতরাতে জ্ঞান দিতে বসলি। যাক, তোকে তো আমি জ্ঞান দিলে শুনবি না, আমাকেই শুনে যেতে হবে।
শ‍্যামলী বলল, জ্ঞান যদি ঠিকঠাক হয়, তাহলে শুনব না কেন?
সবিতা বলল, তাহলে বল্ তো, কাল সারাদিন তুই কি খেয়ে ছিলি?
পিসি, কাল আমি যতো চেষ্টা করছিলাম খাবার একটু ফুরসৎ করতে, দাদা ঝামেলা পাকিয়ে যাচ্ছিল। শেষে, অনেক পরে, দুটো রুটি তরকারি ফুটপাতের হোটেল থেকে আনিয়ে খেয়েছি।
ছি ছি, এমন করলে শরীর টিঁকবে কেন? আচ্ছা শ‍্যামলিমা, তুই যে সেই ছেলেদের কলেজের ক‍্যান্টিনে গিয়ে সবজি ভাত খেতিস, তারা বারণ করে দিয়েছে বুঝি?
না গো পিসি, ব‍্যাঙ্কে গিয়ে অতগুলো টাকা তোলার ব‍্যাপার ছিল। তারপর ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোন বিল মেটানোর পর কারখানায় ফিরে দেখি মূর্তিমান বসে আছেন।
কে বসেছিল? কার কথা বলছিস?
শ‍্যামলী বলল, কার কথা বলব আর। আমার নিজের দাদা। টাকা নেবেই বলে কি বিচ্ছিরি রকম ঝুলোঝুলি করছিল। কি করে যে ওর হাত থেকে বোনাসের টাকাগুলো বাঁচিয়েছি আমিই জানি।
আহা, বাছা আমার।
সবিতা শ‍্যামলীর মাথাটা আদর করে বুকের মধ্যে টেনে নেয়।
কি বলব পিসি, বাইরের লোকের সাথে লড়াই করতে বাধে না‌। সেই লড়াই করব বলেই তো লেখাপড়া শেখা। কিন্তু যার সাথে একসাথে বড় হয়েছি, খুনসুটি করেছি, দুষ্টুমি করেছি, তাকে যখন অবিশ্বাস করার পরিস্থিতি হয়, তখন জিতেও আনন্দ হয় না। কাল অরুণদার সাথে কথা কাটাকাটি করতে খুব বিচ্ছিরি রকম খারাপ লাগছিল। ফুঁপিয়ে উঠতে গিয়েও প্রবল পরাক্রমে নিজেকে সামলে নিল শ‍্যামলী। তারপর বলল, পিসি, আমি এবার একটু পড়তে বসি।
সে কিরে! এখন রাত আড়াইটে। এখন চুপটি করে ঘুমোও। ভোরে আমিই তোমাকে ঠেলে তুলে পড়তে বসিয়ে দেব।
সে হয় না পিসি। অনেক ফাঁকি পড়ছে। পুষিয়ে না নিলে হবে না। তা ছাড়া আমি তো খানিকটা ঘুমিয়ে নিয়েছি।
হ‍্যাঁ। ঘুম বলে ওকে! সাড়া দেবার ক্ষমতা নেই। আমি ভাবলাম দাঁতে দাঁত লেগে গেল কি না!
সে কি পিসি! তারপর?
তখন দেখি তোর রগের শিরা দপদপ করছে। সটান মেঝেতে শুইয়ে জল ঢেলে ঢেলে ঠাণ্ডা করলাম। তারপর আবার তুমি এই লীলেখেলা শুরু করবে। জেদ ধরবে, মাঝরাতেই পড়তে বসব। ন‌ইলে কলেজ থেকে তাইড়ে দেবে।
‘তাইড়ে দেবে’ বলতে নেই পিসি। বলতে হয় ‘তাড়িয়ে দেবে’।
হ‍্যাঁ। তোকে তাই করুক। আমি একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচি তা হলে।
শ‍্যামলী অভিমানী গলায় বলল, পিসি, তুমি সত‍্যিই চাও, আমাকে কলেজ থেকে তাড়িয়ে দিক?
না রে মা। তাই কখনও হয়? আমি অশিক্ষিত বেওয়া মানুষ। কখন কি বলে ফেলি ভুল ধোরো না ঠাকুর। মেয়েটাকে আমার বাঁচিয়ে রেখো।
চাঁদের আলোয় দুই নারী গলা জড়িয়ে পড়ে থাকে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।