• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৭৪)

পর্ব – ৭৪

৭৩

স্নান করে শ‍্যামলী পড়তে বসল। এমন সময় ফোন। অরিন্দম সেন ফোন করেছেন।
গুড মর্ণিং শ‍্যামলী। একরাশ তাজা বাতাস ভেসে এল যেন।
শ‍্যামলী বলল, সুপ্রভাত। ভালো আছেন তো!
অরিন্দম বললেন, আজ পুজোর ষষ্ঠীতে তোমাকে একটা ভাল খবর দেব। খাওয়াতে হবে কিন্তু।
শ‍্যামলী হেসে বলল, নিশ্চয়ই খাওয়াব। আপনি অনেক দিন আমাদের বাড়ি আসেন না।
অরিন্দম আবদারের গলায় বললেন, কি খাওয়াবে বলো?
শ‍্যামলী বলল, আমাদের পাড়ার মিষ্টির দোকানটা খুব ভাল। সে আপনি ভালই জানেন।
অরিন্দম বললেন, না না, দিশি হলে হবে না। সাহেবী খাবার চাই।
শ‍্যামলী হেসে বলল, খাঁটি সাহেবী খানা খেতে হলে গ্র‍্যাণ্ড হোটেলে যাই চলুন।
অরিন্দম যেন লাফিয়ে উঠলেন, যাবে শ‍্যামলী? গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ব দুজনে।
মিস্টার সেন, আজ বাড়িতে আসুন। খাওয়াব। আধা সাহেবী। কেমন?
অরিন্দম বললেন, আধা সাহেবীটা কি জিনিস?
শুনুন, ডিম ফেটাবো। তাতে পাঁউরুটি ভেজাবো..
এইটুকু শুনেই অরিন্দম বললেন, উঁহু, এটা আবার সাহেবী কিসের?
শ‍্যামলী বলল, না না, আপনি পুরোটা শুনুন। ওটা মাখনে বাদামী করে ভাজবো,
অরিন্দম বললেন বেশ, তারপর?
শ‍্যামলী বলল, তার সাথে স‍্যালাড দেব। গাজর বীট আর পেঁয়াজ কুচি।
এই তোমার সাহেবী খানা?
শ‍্যামলী বলল, মিস্টার সেন, জানেন নিশ্চয়ই সালাদ একটি রুশ শব্দ। আর রাশিয়ার বেশিরভাগ জায়গাটা এশিয়া মহাদেশের ভিতরে হলেও, বেশ খানিকটা ইউরোপের মধ‍্যে। তাহলে কন্টিনেন্টাল হল না?
তার পর মিষ্টি করে বলল, তা মশায়, খবরটা কি?
অরিন্দম বললেন, গতকাল কলেজে তুমি কি একটা কাণ্ড করেছ, স্টেটসম‍্যান কাগজে তার ছবি ছেপেছে।
শ‍্যামলী বলল, হ‍্যাঁ কলেজের অনুষ্ঠান ছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞানী এসেছিলেন।
অরিন্দম বললেন, হ‍্যাঁ। ওঁর সাথেই তোমার একটা ছবি ছেপেছে কাগজে।
শ‍্যামলী বলল, ওহো এই খবর? আমি ভাবলাম কি জানি কি!
অরিন্দম অবাক হয়ে বললেন, এটা তোমার কাছে সামান্য খবর হল? এই বয়সে স্টেটসম‍্যানের মতো জাঁদরেল সাহেবী কাগজে ছবি কেউ ভাবতেই পারে না।
শ‍্যামলী বলল, জানেন মিস্টার সেন, একটা কাগজ পরদিনই বাসি হয়ে যায়। তা ছিঁড়ে ফুটের দোকানে তার উপর রুটি তরকারি দিলে আমার মজদুরের দল খায়। স্কুলের ছেলে খবরের কাগজের ঠোঙায় মুড়ি খাওয়া শেষ করে ঠোঙা ফাটিয়ে আমোদ পায়।
অরিন্দম বললেন, বুঝতে পারলাম শ‍্যামলী। তুমি বলতে চাইছ, অমন ইংরেজি কাগজে খবর বেরোনোকে তুমি কিছুই মনে করো না। এটাকে কিন্তু অহংকার বলে শ‍্যামলী।
শ‍্যামলী বলল, না না, এই যে সকালে উঠে আপনি আমাকে গুড মর্ণিং বললেন, আমাদের বাড়িতে আসবেন বললেন, এটার দাম আমার কাছে অনেক বেশি। একবার আপনারা দুইজন এসেছিলেন, কাঠচাঁপা ফুল এনেছিলেন, সে খুব মনে রাখি।
ক্ষুণ্ণ হয়ে অরিন্দম বললেন, এখন অক্টোবর মাসে আমি কাঠচাঁপা পাব কোথায়।
শ‍্যামলী বলল, আচ্ছা, আচ্ছা, আপনি আসুন তো আজ, আমি ফুলের গান শোনাব।
শ‍্যামলী, তোমার ছবি কাগজে ছেপেছে, এই আনন্দে কী নিয়ে যাব?
আমার একটা জারুল ফুলের গাছ চাই অরিন্দম দা। অনেক ডালপালাওয়ালা বড়ো গাছ। অনেক ফুল ফুটে আমায় মাতিয়ে দেবে।
অরিন্দম বললেন, হুম, বুঝেছি। আচ্ছা, আজ যাব কি না পরে কনফার্ম করছি।
শ‍্যামলী বলল, একটা কথা বলব অরিন্দম দা?
বলো।
শিঞ্জিনীদিকেও আমাদের বাড়ি নিয়ে আসবেন।
অরিন্দম বললেন, না, সে কি করে হবে, সে তো এলাহাবাদ গিয়েছে। সেখানে একটা কলেজে পড়াবে বলে কথা চলছে ওর।
ওহো, ওই জন‍্য মিস্টার অরিন্দম সেনের ফূর্তি আর ধরে না। যাই হোক, আপনি এখানে আসুন, কিন্তু ওঁকে বলে আসুন।
অর্থাৎ তুমি ঘুরিয়ে বলছ আমার আসার দরকার নেই।
শ‍্যামলী বলল, তা কেন অরিন্দম দা? কারোর মনে দুঃখ দেওয়াটা ভাল?
অরিন্দম বললেন, কেউ খামোখা দুঃখ পেলে আমি কি করতে পারি শ‍্যামলী?
শ‍্যামলী বলল, আচ্ছা, আপনি আসবেন। আপনি এলে আপনাকে নিয়ে আমাদের পাড়ার পুজোর ঠাকুর দেখিয়ে আনব।
পাড়ার ঠাকুর পুজো কী দেখব বলো তো? চলো যাই, কলকাতা ঘুরে আসি। যাবে শ‍্যামলী? অরিন্দমের গলায় মিনতির সুর।
কলকাতার ঠাকুর দেখায় খুব ঝক্কি অরিন্দম দা। অতো ধকল আমার স‌ইবে না।
দেয়ালের আয়নায় সবিতা পিসিকে দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি কথা থামিয়ে ফোন রেখে দিল সে।
সবিতা কোমরে দুহাত দিয়ে জানতে চাইল ফেরেণ্ডোর সাথে গল্প হচ্ছিল?
শ‍্যামলী একটু লজ্জা পেয়ে বলল তুমি এঁকে চেন পিসি। অনেকবার দেখেছ।
কিন্তু বলেই তার মনে হচ্ছিল, আমি কেন কৈফিয়ত দেবার সুরে কথা বলছি? একুশে পা দিয়ে আমি কি স্বাধীনভাবে কথা বলতেও পারি না?

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।