• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৭৯)

পর্ব – ৭৯

৭৮

গত রাতের ক‍্যাশ ব‌ই আর কালেকশন ব‍্যাগে পুরে নিয়ে কারখানার দিকে জোর হাঁটা লাগালো সে। পিছনে পিছনে একটা রিকশা ঝড়ঝড় করতে করতে এগিয়ে আসছে। রিকশাওয়ালা ডাকছে, ও ছোড়দি.. ছোড়দি শোনো…
শ‍্যামলী কয়েকবার তার ডাক উপেক্ষা করে একসময় বিরক্ত হয়ে বলল, কী হয়েছে?
রিকশাচালক বলল, ছোড়দি, আমার রিকশায় উঠে পড়ো।
শ‍্যামলী বললো, রোজ আমি হেঁটে হেঁটেই যাই। আমি হেঁটেই যাব।
ওঠো দিদি। তোমরা রিকশায় উঠলে আমাদের দুটো পয়সা হয়। বৌ বাচ্চাদের খাওয়াতে পারি।
শ‍্যামলী বলল, আর কাউকে খুঁজে নাও ভাই। আমি হেঁটে যাব।
নাছোড়বান্দা রিকশাচালক বলল, পুজোর দিন, তোমার কাছে ভিক্ষা না করে কাজ চেয়েছি দিদি।
ইয়ার্কি পেয়েছ না? কাজ চেয়েছি! যাও তো বিরক্ত কোরো না।
ছোড়দি, তোমার বাবা কিন্তু এমন ছিল না। দয়ার শরীর। কেউ কেঁদে পড়লে, তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিত না।
শ‍্যামলী ঠিক করল রিকশাওয়ালার কোনও কথায় কান দেবে না। বাবা খুব ভাল। আর সে খুব খারাপ। বাবার দয়ার শরীর। আর সে পাষাণী।
বেশ। শ‍্যামলী পাষাণী। শ‍্যামলী হৃদয়হীনা। শ‍্যামলী গোঁয়ার।
বাড়িতে একটা ছবি টাঙানো আছে। ছবি নয়। সেলাইয়ের কাজ। ছবির মতো করে বাঁধানো। “বিশ্ব যদি চলে যায় কাঁদিতে কাঁদিতে,
আমি একা বসে রব কর্তব‍্য সাধিতে।।”
ছোটবেলা থেকেই শ‍্যামলী  দেখছে কথাটা। পূজার ঘরে দিদিমার স্মৃতি হিসেবে রাখা আছে। ছোটোবেলায় মাকে জিজ্ঞাসা করত, মা, এই কথাটার মানে কি!
মা তাঁর বোধবুদ্ধি অনুযায়ী বলতেন, নিজের কাজটুকু একমনে করে যেতে হবে। কে কি বলল অতো দেখতে হবে না। মেয়ে জিজ্ঞাসা করত, বিশ্ব কোথায় চলে যাবে?
মা বোঝাতেন, বিশ্ব মানে সব লোকজন।
মেয়ের প্রশ্ন থামত না, বলত, মা, কাঁদতে কাঁদতে চলে যাবে কেন?
মা আর পারতেন না। এই মেয়েটা বড্ড বাঁদর। পিঠে এক চাপড় দিতেন। বাঁদর মেয়ে। খালি প্রশ্ন। যতোই বুঝিয়ে বলো আবার খু়ঁটিয়ে প্রশ্ন। বাঁদর কোথাকার। এত মারছি, তবু দ‍্যাখো বেহায়া মেয়ের চোখে জল নেই!
এখনকার শ‍্যামলী বলে, না কাঁদতে জানি না, কপাল চাপড়াতে জানি না। দেবতার অনুগ্রহ চাই না। দৈবে বিশ্বাস করি না। শুধু পুরুষকারে বিশ্বাস করি। পুরুষ। এই পুরুষ মানে পুংলিঙ্গ যুক্ত প্রাণী নয়। পুরুষ মানে পার্সন। ব‍্যক্তি। হ‍্যাঁ, তোমরা শোনো, মেয়েদেরও পৌরুষ থাকে। মাও সে তুং হাসেন। বলেন “ক্ষোভকে পরিণত করো ঘৃণায়, অশ্রুকে আগুনে।”
মা, ওই কথার মানে হল নিজের যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে কাজ করার সময় কেউ ইমোশনালি ব্ল‍্যাকমেল করলে, তাকে রুখতে হবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন বলেন, “তোর আপনজনে ছাড়বে তোরে, তা বলে ভাবনা করা চলবে না।”
এমন সময় সামনে তাকিয়ে দেখল গেটে তার সামনে হেডমিস্ত্রি হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে আছে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।