• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ১৫) 

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ১৫

গত কয়েক ঘন্টা যে কিভাবে গেছে বল্টুদার তা ঈশ্বরই জানেন। বৌদিকে খুঁজে পেতে হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছিলো। তার উপর সামান্য জুতো চুরির অপরাধে একেবারে থানার লক আপে,এটা মেনে নিতেও কষ্ট হচ্ছিলো বল্টুদার। বৌদি কিন্তু বেশ মস্তিতেই রয়েছেন। আসলে একটা বড় আঘাতের পর মানুষের আচরন খুব স্বাভাবিক হয়ে যায় কখনো কখনো। বাকীরা অবাক হন। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
যাই হোক প্রায় ১২ ঘন্টা পর বৌদি ফিরেছে হোটেলের ঘরে। খাওয়া দাওয়া প্রায় নেই। থানায় কিসব খেতে দিয়েছিলো,সেসবও বৌদির মুখে রোচে নি। থানা থেকে বেড়িয়েই বল্টুদাকে বলেছিলো বৌদি..”আজ রাতের আইটেম কি গো?”
বল্টুদা খুব নরম গলায় উত্তর দিয়েছিলো,”করার তো কথা ছিলো অনেক কিছু,কিন্তু তোমাকে পাওয়া যাচ্ছে না এই টেনশানে সামান্য কিছু রান্না হচ্ছে। যাঁরা ঘুরতে এসেছেন আমাদের সঙ্গে তাদের মনটাও ভালো নেই। তারাই বললে বৌদি যতক্ষন না ফেরেন,ভালো খাওয়াদাওয়া বন্ধ।”
বৌদি অল্প খুশী হলেন কিন্তু রাগ হলেন আরো বেশী। “উত্তেজিত হয়ে বললেন,এমন হয় নাকি, অতিথিদের নিয়ে এসে কম খাওয়ানো,এক্ষুনি রান্নার ঠাকুরকে বলে দাও বাজারে যেতে, রাতে দেশী মুরগীর ঝোল,আর ময়দার রুটি হোক,সঙ্গে স্যালাড আর রসগোল্লা।”
বৌদির অনুরোধ মানে দাদার কাছে আদেশ। ফোন চলে গেলো হোটেলে। রান্নার ঠাকুর বেড়িয়ে পরলেন বাজারে। বৌদিকে খুঁজে পাওয়া আর রাতের স্পেশাল মেনুর কথা ততক্ষনে জেনে গেছে সবাই। দারুণ আইটেম। এর মধ্যেই কে একজন গিয়ে রান্নার ঠাকুরকে বলে এলো দেশী মাংসের সেদ্ধটা ভালো করে কোরো তো,না হলে যা শক্ত থাকে,ঠ্যাং চিবিয়ে খাওয়া যায় না। রান্নার ঠাকুর সেই ভদ্রলোকের দিকে তাকালেন,দেখে মনে হচ্ছে দাঁত বাঁধানো। মুচকি হাসলেন রান্নার ঠাকুর।
রাত তখন প্রায় সাড়ে আটটার কাছাকাছি। বৌদিকে নিয়ে বল্টুদা ফিরছে থানা থেকে। সঙ্গে বল্টুদার সঙ্গে যারা গিয়েছিলো,তারাও। বাজারের উপর থেকে আসতে আসতে বৌদি আস্তে করে বল্টুদাকে বললে “ওগো,পায়ে যে জুতো নেই।”
বল্টুদার হঠাৎ মনে পরলো। রিক্সা থামিয়ে একটা জুতর দোকানে ঢুকলো বল্টুদা। নতুন জুতর সারি,আবার ডিসকাউন্টে জুতও বিক্রি হচ্ছে। বৌদি বল্টুদাকে বললো.. “বুঝলে,এখানের জুত কেমন হবে বুঝতে পারছি না,তাই বেশী দাম দিয়ে নতুন কোনো জুত না নেওয়ার থেকে ডিসকাউন্টের জুত কিনে নিলেই হয়।”
বল্টুদার যুক্তিটা পছন্দ হলো। একপাশে রাখা আছে সারি সারি ডিসিকাউন্টের জুত। একটু পুরনো মতন দেখতে,কিন্তু কন্ডিশন ভালো এবং দামেও অনেকটা সস্তা। বাছতে বাছতে একটা জুতর দিকে চোখ চলে গেলো বৌদির। কি আশ্চর্য, এ যে অবিকল তার জুতর মতই দেখতে। সমুদ্রের পাড় থেকে যে জুতটি চুরি হয়েছিলো,আর যা চুরি হওয়ার পর থেকেই এত ঝামেলা। বৌদি পায়ে পরে দেখলো,একেবারে তার পায়ের মাপেই যেন তৈরি করা। নিজের পায়ের জুত পড়তে সামান্যতম অসুবিধে হয় না,নতুন জুত বা অন্যের জুত পড়লে সেটা হয়। এবং এই জুতটি পড়তে এতটুকুও অসুবিধে হলো না বৌদির। অবাক হলেন বৌদি। তাহলে কি? রহস্য ক্রমাগত গভীর হচ্ছে।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।