সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ১১)
কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ১১)
শিবলিঙ্গ জুড়ে এখন অবশ-অবশ ভাব জাগছে। তারাদের আসার আবেশ জমতে শুরু করেছে। হালকা বৃষ্টির ফোকড়ে লাল চায়ের মতো চুমুক ভাসছে সামনে, আমি উপকূল ভুলে যাচ্ছি। দূর থেকে শুনছি একটা সমুদ্র দুর্যোগ-স্নানে নামছে। এই আবিল প্রত্যাশা কেউ করেনি কোনোদিন, করবে এমন সাহস কই? আশঙ্কা হতে দ্বিধা দ্বন্দ হতে নির্দয় তবিয়তে থাকার বহাল আমাদের কম নয় কারো! তবুও তো প্রেমের মতো উষ্ণতা আমাদের দরকার। দরকার নুনের হয়ে মিশ্রন তৈরী করা। অথচ ঘুমে চোখ জড়াতে চাইছে, হাই উঠছে সমস্ত সুখ ও দুঃখকালের; তোমার আড়ষ্ট স্বর জেগে থাকুক বিঁধে আমার গলায়, আমার চিন্তন থেকে লৌহকণা অবধি আমাদের জাগা রাত হবে রাতজাগা সুতনু সঙ্গম। এখন আমার সেই প্রেমিকাটির কথা মনে পড়ছে, যেমন কিছু গান শুনলে নাক জ্বলে যায়, ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায় কন্ঠনালী, আটকে যায় শ্বাস, নিজের চোখকে আমরা বিশ্বাস করি না তাই, জানি না ওরা ঘেমে ওঠে কিনা, কিন্তু এগুলো হয়, তবু ঝড় নামে না কখনও, আদিম মাটির কুঁড়েঘর অবধি নেমে যায় বৃষ্টিদিন, যে আমায় বলেছিল – ছেলেরা এতো রাতের মতো হয় কেন, কই ভোর ভোর কোনো ছেলেকে তো আমি বিকেলবেলায় হাঁটতে দেখিনি কোত্থাও!…
দুহাতে নর্দমা নিয়ে পিচের রাস্তা বরাবর অসংখ্য ঘুমন্ত কুকুরের পিঠ টপকে টপকে আমি হাঁটি, এক আকাশ হেঁটে দ্যাখা পাই তার আঁকা সিঁদুরে মেঘ। কিন্তু বাঁচবার মতো কোনো ধ্বনি লেখা আছে কিনা সেখানে, তা আমায় জানতে দেয়নি তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও পেলবতা। তবু চেষ্টা করা যাক আরও কিছুটা আলোর কথা ভাবতে, সেই চেষ্টায় আরও কিছু সলতে পাকানো যাক। তারপর কষ্টার্জিত সমস্ত রোদ ঢেলে দেবো। এখনও যারা ভাবছে – কেন আমরা সিন্ধুর তীরে মহেঞ্জদারোতে আজও বসবাস করে চলেছি, তাদের থামতে বলো না। এগিয়ে যাক সমস্ত অন্ধকার, আমরা ধীরেধীরে আলোয় বেঁধে দেবো সকল পথ। আমাদের আমার ঘুম যতটা
তেজস্ক্রিয় ছিল ততটা তার তাদের নয়, শুধু একঝাঁক বেবি ইলেকট্রন, হরিয়াল আর ভুঁইচাপা ফুল, তারাদের অশনি পাহারাদার। তবু আমাদের ছিল মুলতুবি মন, আমাদের ন্যারোগেজ মেমোরি লেন ছিল ছলশূন্য এক অতিকায় মাছ। তার ভেতরের শক্তি আমাকে ডুবিয়ে নিচ্ছে, আমাকে ঘুমিয়ে নিচ্ছে রোদের ভেতর, আমায় উল্কি শেখাতে আসছে যেসব বিখ্যাত চিলেরা তাদের হাতে পায়ে উবড়ে নেওয়া নখের অস্বস্তি, কাঠের আলনায় নৈশ অভিযান এবং তার ব্লুপ্রিন্ট রাখা। নূপুরের মতো বেজে ওঠে আলটপকা ফড়িং এবং আমাদের পুষ্টি – পিপীলিকাভুক প্রশ্রয় পেয়ে গেছে যারা। চারিদিকে রঙিন ঘরবাড়ি আর ছোটাছুটি, করমচার ক্ষেত আর মেলে ধরেছি সন্ধ্যা। এই একতলা বাড়ি, টালির বারান্দা, প্লাস্টার, বালির পেছনে পাঁচ আঙুলের থাবার দাগ একদিন
ঐতিহ্য হয়ে যাবে। কোথায় কোন্ প্রাণীর পরাজিত লুন্ঠিত পাকস্থলীতে নাকি বাতাসের গ্রাসে ব্যাকটেরিয়ার খাদ্যভাণ্ডার একদিন জীবাশ্ম হয়ে যাবে। শুদ্ধ লোকাচার জলাঞ্জলি দিয়ে, শ্রাদ্ধ-শান্তির শেষে যখন ঝাড়া হাত-পা’য় নিষিক্ত ভ্রমণের নীলকন্ঠ তুলতে গেছি, ঠিক তখনই ভিন্নজাতের কিছু শামুক লাফাতে… লাফাতে… ছড়িয়ে দিয়েছিল, ছিটিয়ে দিয়েছিল, মাখিয়ে দিয়েছিল ইস্তেহার। তবু বাদামের ক্ষেত থেকে উথলে উঠলে হাওয়াকল, দেখতে দেখতে তুমি বদলে নিচ্ছো নতুন রেলওয়ে ট্র্যাক, কাঁধের ওপর সংসার রেখে পাহারা দিচ্ছো বাগান, বালিহাঁস, গলার থেকে ছিঁটকে আসছে ঢেউ ; আমি দূর থেকে শুনছি তোমার বুকের ভেতর জন্ম নিচ্ছে গাছ.