• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ১৭)

কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ১৭)

ব্রহ্মা শ্মশান খুঁজছি আর এদিক ওদিক মাটির রাস্তা চলে যাচ্ছে আধো জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে… আমরা কোন দিকে যাই ভাবতে ভাবতে  হঠাৎ নজরে এলো একটা টেরিফিক লিচুগাছ, সারাগায়ে মুহুর্মুহু ছত্রাক-ছোপ নিয়ে একহাঁটু ঘাসজাতীয়ের মাঝে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে এবং আশেপাশে আরও অনেকে। আমার পায়ে সেই গন্ধ এখনও বেরোচ্ছে, অসংখ্য ঢিল ঝুলছে প্রাচীন এই শরীর থেকে – এর তরাইয়ে পঞ্চমুণ্ডির আসন, একসময় গো-অশ্ব-বানর-শৃগাল এবং এক চাঁড়ালের অবিবাহিতা কন্যার করোটি পাহারা দিত আমার এই সিংহাসন। হয় এঁনাকে নমস্কার করো, অথবা এগিয়ে যাও গ্রামের দিকে। এগিয়ে এলাম, রাস্তার ধারে সাইকেল রেখে শ্বেতশুভ্র ছত্রাকের কাছকাছি নিয়ে যাচ্ছি ক্যামেরা, নাক, হাত, রোম। কত কত আঙুল আকাশের দিকে তাক করে দাঁড়িয়ে আছো গাছ। কত অভিযোগ কত গ্যালন বিষেদাগার জমলে এই সমস্ত প্রচেষ্টা মাটি থেকে উঠে সোজা শূন্যকে ভেদ করতে পারে, নীল সাদা কালো চোখ উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে স্থির! আগে কোনো দিন আমার গাছকে এতো ঝলমলে রাগী মনে হয়নি। অথচ আমি সেই হাতে গিয়ে বসলাম, ছবি তোলো জগন্নাথ… দ্যাখো, আমার ছাল বুড়ো হতে হতে কখন কাঠ হয়ে যায় কীভাবে! কাঠের প্রতি আর ছালের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা আলাদা হয়। তুমি আমাতে জাল বোনো, ঝুলে থাকো, ইয়ারকি করো শিকার। অথবা আমায় আঁকড়ে ধরো, ছেড়ে দাও — আমার সৌন্দর্য্য বেড়ে যাবে। শুধু আঘাত আমায় কাবু করতে পারে না। তাই এই অংশটার নাম আমি দিতে পারতাম আশ্রয়। আমার নাম যদি ফ্লো হতো, তাহলে আমি নষ্ট হয়ে গেলাম প্রভু, নষ্ট হয়ে গেলাম! তুমি চেয়ে আছো রোমশ শরীর, পাংশু গোলাপি মুখ ; কী নাম কী নাম যারা ফুটে আছো অবহেলে! আকাশের সাথে ঠোঁট ছুঁয়ে এ কার সহোদরা! আমিগাছ তুমিগাছ, গাছ জন্ম থেকেই গাছ। তথাপি মানুষ জন্ম থেকেই হতে হয় ক্রমশ…
প্রয়োজনে ব্যারিকেড পরিয়ে দাও, তবু অম্বরকে আমি ছাড়ব না, আমি হামৃত্যু ধেয়ে যাব তার দিকে। শরীরে শরীরে ছুটে বেড়াও, এতো পতন এতো উত্থান সাজিয়ে রেখেছি প্রত্যঙ্গে, সে তো শুধু তুমি জয় করবে বলে। হও তুমি মাকড়সা হও, পিঁপড়ে হও কিংবা কাঠঠোকরা। আমি কুঁকড়ে গেছি তাণ্ডবে, তবুও সক্ষম চুষে নিতে রস। আমি ধিক্কার হবো মানুষের প্রতি একা। শীতকালে যেমন অনেক গাছের মাথা খারাপ হয়ে যায়… নিজের চুল ছিঁড়ে ফেলে নিজেই ন্যাঁড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কেউ খ্যাপাতে যাও, কিচ্ছু বলবে না ও, এখন আরও নিশ্চুপ, আরও নিজের মধ্যে গুটিয়ে যায় গাছ। এজন্যই কোনো ন্যাঁড়া গাছের নীচে কোনো মানুষকে দাঁড়াতে দেখবে না তুমি…
জগন্নাথ ছুটে গেলো, আমাদের কাটা কোমরের ছবি তুলতে, ফিরে এলে তারিফ করব। মানুষেরা চিরকাল ছুটে যেতে ভালোবাসে, ভালোবাসে একলা হয়ে যেতে। অথচ সমাজবদ্ধ মৌমাছি হামেশাই এদের ভীতি ও স্বাদের কারণ হয়। শিল্পীকে তারিফ করা শিল্পের কাজ নয় তবু। কত কী নোংরা থাকে দেহে – ক্যামেরায় নোংরাও সুন্দর হয়ে ওঠে, আর যৌনতায়। ছবি তোলো, অপূর্ব জ্বালামুখের মৃত অবয়ব। ছবি দেখে মনে হবে গ্রানাইট, ছবি দেখে মনে হবে লোভ, কুঞ্চিত কৃষ্ণ হয়ে গিঁথে গেছে সন্ধিতে। এই রোদ বাঁশপাতা থেকে ঠিকরে মটমটি পাতায় এসে পড়লেই আমরা প্যাডেল বাইব। নৌকো বাঁধা আছে ঘাটে, তাও কচুরীপানায় হাঁটবো — প্রথমে সাদা, তারপর নীল, না নীল নয় বেগুনি, সেখান থেকে হলুদ হয়ে ঝুপ করে সাদাকালো ফুটকি ফুটকি নতুন মাছরাঙা। তারপর দ্যাখা যাবে প্রজাপতি, পরিশিষ্ট চাদরের নামে সেজে আছে প্রিয় আকাঙ্খার উড়ানে। তুমি প্রজাপতি ভালোবাসো? আর শুঁয়োপোকা? শনের পাতায় শরীর দিতে ভালোবাসো কি? অথবা, জানো? খয়েরি ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন জন্মে আছে কেন কপালে! আমি ভালো হয়ে যাব এবার, পুকুরপাড় যতটা ভালো হয়ে যায় চাইলে!
যেহেতু খিদে পেটে বাড়ি ফিরতে আমার ভালো লাগে, তাই অনেক ফুলের অপেক্ষা আমি উপেক্ষা করতে পারি।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।