• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ১৮)

কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ১৮)

অল্প চাইলেই যেসব দিকে আমি অনায়াস বেড়ে যেতে পারি সেসব দিকে ভোজ্যদ্রব্য বলতে শুধু কবিতা আর মানুষ ; অথচ সূর্যকে আমরা নক্ষত্রদের থেকে আলাদা করেই রাখি। অসমের একটি ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম জাতিঙ্গা, সেখানে প্রতিবছর বর্ষার পর ঘন অমবস্যার কুয়াশাচ্ছন্ন সন্ধ্যায় অজস্র পাখি আত্মহত্যা করে, হয়তো আবহাওয়ার কারণেই উচ্চতা থেকে ছিটকে এসে বাঁশঝাড়ে ধাক্কা খায় অথবা স্বেচ্ছায় ঝাঁপ দেয় মরণ কূপে, যারা ঝাঁপ দেয় না তাদেরকে উৎসর্গ করলাম এই মেঘ সংহিতা। কেননা, জলের মতো শুয়ে থেকে থেকে একদিন সবাইকেই বাষ্প হতে হয়, মেঘ হতে হয় সকলকে। আমাদেরও তেমন স্বপ্ন ছিল, বাষ্প জমিয়ে জমিয়ে বোমারু মেঘ হতে চেয়েছিলাম। ঠিক এমনই মেঘলা দিন – আকাশে ঝুলতো মেঘের ঝুরি; আমরা দরজায় টাঙিয়ে দিতাম ধৃতরাষ্ট্রের চোখ, আমাদের ব্লাউজ-শাড়ি ভিজে একশা, রাত জেগে আমরা ফসফরাস আলো পাহারা দিতাম, আকাশে নেবুলা দেখা দিলে ঈর্ষান্বিত কাছের পাঁচিলগুলোয় আমরা জানলা খুলে দিতাম পেয়ারা পাতার বইয়ে, প্রত্যেক সৎ মুহূর্তে আমার ঘুম আসতো না, আমি চমকে উঠতাম, পায়ে পায়ে নির্মেদ সময় আরও তাপ বর্জন করে শীতলতম রাত্রি পেতো। তারপর ধূলিকণার আশ্রয় হয়ে ওঠার পালা। একটু একটু করে উষ্ণতা ভুলে আমরা মেঘ হবো ভাবতাম। এক ঝাঁক অবাধ্য ম্যাকারেল মাছ, হ্যারিকেন আর আমার মা গুনগুন স্বরে মাঠা তাঁত আগলাতো বর্ষায়। আমাদের সব দুঃখরা ডাকসাইটে অন্ধকারে চড়াও হতো অন্ধকারাচ্ছন্ন চুলের ভেতর। আমি শব্দ হারাবার ভয়ে বিপ্ বিপ্ খিস্তির মালা পড়িয়ে দিতাম প্যাঁচার তারে! ধূসর নীল রঙের সরু স্তরবিশিষ্ট কিছু তন্তুমেঘের তলদেশ থেকে ঝালরের মতো বৃষ্টিকে আমি ঝুলতে দেখতাম যারা আজও পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়নি; পৃথিবীতে কেবলই মানুষের বাস। অথচ মেয়েমানুষকে নিয়ে আমি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। সে কতটা প্রয়োজন, অপরিহার্য কিনা – এসব কিছুই বুঝতে পারছি না। স্বদেশ সেন তাঁর শেষ ঝর্ণায় বলেছিলেন ‘নরম কাঞ্চনে টিপ উঠলে তবে না হ’ল মেয়ে-মানুষ।’ আরও অনেকভাবেই তো এই মানুষ হওয়া যায়। তবুও আমি
মানুষ!  মানুষ! চারিদিকে শুধু মানুষ দেখি, এটা কি মানুষের জঙ্গল? এখানে কি মুক্তাশা, তোমাকে পাওয়া যাবে না! একটা পরিষ্কার সুন্দর ঢেকুর তুলতে হলে আমায় কি মহান হতেই হবে? অন্তত মুণ্ডমাল ইতর শব্দের মতো কণা…! কেন যে অমন শর্ত রাখো পাতায় পাতায়, এ আমার না-কবিতা না-গদ্যের প্র্যাকটিস, দ্যাখো আবহমান চাঁদ যেন গলে পড়ছে এখানে, ওকে আতর দিয়ে কেউ ধরো, কেউ কেউ তো বলো একটা অমোঘ কারণ, কেন লেবু ফুল গর্জে উঠলে কারো কিছু যায় আসে না, অথচ গোলাপের চেয়ে বেশি নির্বিকার হলে মেঘ ডাকে! আমি তো অবান্তর ঘষতে ঘষতে এসে গেছি চটির তলায়, জোয়ারের দরজা ডিঙিয়ে কাঁঠালতলা, কলপাড়, উনুন, ব্লাউজের মতো ঝুলে থাকা দড়িতে হাতের দোসর হাত! অমীমাংসিত রমণীর বুকে পেসমেকার রেখে রোজ শুনি কুল পতনের শব্দ, প্রতিদিন ঝরে যায় পাতার মুখ, অপেক্ষার সংজ্ঞা শিখতে গিয়ে আমাকেও মাকড়সা হতে হয়, এতোটা পথ দু পায়ে সম্ভব নয় জেনেও    মানুষ !

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।