• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ৮)

কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ৮)

যে-মানুষ নুনের পুতুল তাকে কাছে ডাকবার আগে, অশ্বে চড়াবার আগে ভালো করে দেখে নিই তার বাহ্যিক গঠন সুললিত অসৎ কিনা! চোখের অর্ধেক জানালা ঢাকা। আলো উড়ে যাচ্ছে ক্রমশ, আমের গুঁটি, কাঁঠালের ছড়িয়ে ছিটিয়ে, ফোনের ওপর চমক এসে পড়ছে, দুটো পাল্লার মাঝে তারার মুখ যেভাবে আবহাওয়া দপ্তর হয়ে উঠছে সেভাবে নারকেল গাছ আর সেভাবে স্মৃতির তালগাছ নাচছে, অন্ধকার হয়ে আসা লেবুগাছে জলের এঁটো লেগে আছে। তবু বারবার চমক চমক, অনর্গল লবন পড়ছে, বান্ধবী বলেছিল নতুন চার্জার লাইটে গভীর আঁধার পেতে কবিতা লিখো আমি চলে গেলে, আমি না থাকলেও লিখো চড়ুইকে ভুল করে হামিং বার্ড, তবু লিখো দিনের বেলায়ও তোমাদের উঠোন-পুকুরে কাঁঠাল আর আমের ছাতায় করে নেমে আসে আকাশ, আকাশেই নৌকা চলাচল। খুব গর্জনে সে কি ভয় পায় ফোনের ওপর চমক এসে পড়লে! সন্ধ্যায় ঘরের জানালা দিয়ে ইলেকট্রিকের আলো, কোল বিছিয়ে শুয়ে থাকে জমা জল, তার ওপর আলো, তার ওপর ব্যঞ্জন বৃষ্টির ছাঁট, আমি ঠান্ডা অবকাশ কানে মেখে নিই, কানেরা ভীষণ কথা শুনতে পারে, যে কোনো বকটিয়াশালিকচড়ুই…
মেঘের গায়ে শ্যাওলা জমতে দেখলে আমি আধুনিক অথচ মেঘের শরীরে যে এতো শাপ লেপ্টে থাকে তাকে তো অন্ধ বলছে না কেউ, সুদূর থেকে হেঁটে আসছে যার হাঁড়ির শব্দ আজ তার হ্যারিকেন জ্বালার সন্ধ্যা, পোকা উড়বার আলো, তাড়াতাড়ি শুয়ে শুয়ে না ঘুমানোর রাত। পাতা আটকে যাবে আজ সারা গায়েগাঁয়ে। সারারাত পৃথিবী গঠনের পার্বণ হবে। তারপর রাতের পিঠ থেকে হঠাৎ পড়ে যাবো খুব সকালে! এমন ছোটখাটো ভবিষ্যৎ আমি আকছাড় দেখতে পাই, এবার তার ভেতর দ্যাখার গম্ভীরা। খুব মজা হবে সারাদিন, ঠাকুমা উঠে গ্যাছে কাকভোরে, এগারো কাঠা বাড়ির থেকে একটা একটা পাতা, খুঁটে নেয় তারা ঠাম্মাকে, ঝুড়ির মধ্যে ভেজাভেজা শুকনো প্রাণ জড়ো হয়, চুল্লিতে দেওয়ার আগ পর্যন্ত শুয়ে থাকে ঘুমন্ত ঘিয়ের গন্ধে বেমানান ঠান্ডা ভাত। আমি উঠে আসি এরপর, আমার সাথে ওঠে না কেউ, পক্ষীও না, ঘোড়াও না, পতঙ্গদেরও এসময় দেখি না কোথাও…
এই সকালগুলোতে জানলা খুলতে ভয় পাই আমি, এর কারণ আমার জানা, কিন্তু বলব না। বললে অশুচিবায়ু হাতের মুঠোতে অস্ত্রক্ষত নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। এক বিপুল মশাকে রক্তছাড়া করবার আগে আমাদের ঘুমের কোটরে দেবদূত চোখ দুটি আকাশগোলা নদীর পুরুষে ভেসে ওঠে, তুমি দ্যাখো ঠিক লিখতে পারবে এসব নাটক। সেখানে তোমার পা নেই, আছে শস্যের রং ঝেড়ে বেছে নেওয়া নাটকের স্বচ্ছ  ধানজল। প্রতিদিন সকালে জানলা খোলার আগে সেই আলোজলধান ছিটিয়ে দাও মঞ্চের কাপকাঠিতে, তারপর পর্দায় তুমুল টান দিয়ে ফুলের কথা বলো, অন্তত ভদ্রতায় পাখি হতে শেখো। শুধু কেন পরমপুরুষ, পরমপিতা? আমরা পরমনারী বা পরমমাতা হই না কেন বলো, বলো আমাদের সিঞ্চিত ঘিলুতে অস্পষ্ট ধোঁয়ার মতো শুধুই দ্রাক্ষালতার আবাদ কেন? গাছ অর্থে পাগল এমন অভিসন্ধি আমাদের থাকে না বাঞ্ছায় তবু কেমন করে বায়োলজিক্যাল পোয়েম লেখার সময় হলে গাছ আর যোনি আগে চলে আসে তারপর শুধু শান্তি-সঙ্গম, গাছ আর গাছ থাকে না, হয়ে ওঠে সুঠাম  অ্যাক্রোপলিস পাতার স্টু, বেরঙিন চোখে বছর পাল্টে পাল্টে বন্ধ্যা শরীরে সেফটিপিন বিছিয়ে দেয় সে বা ওই পর্বেরই কোনো ফ্লোরা যারা নাইট্রোজেন স্থিতিকারী অথচ স্বপ্ন থেকে ফিরে এসে গাছ চোখমুখ ধোয় জল খায়, মাটিতে পা ডুবিয়ে বিশ্রাম নেয় দীর্ঘকাল। আমরা তাই ঘরের মধ্যে গাছ গড়ে তুলি, গাছের মধ্যে খুঁজি ঘর। আমরা কেমন তুলোর পুতুল, নুনের পুতুল গাঁধার পিঠে, আমরা যেমন কাছে ডেকে ঘোড়াকে বলি অশ্ব হতে

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।