• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক প্রকল্পশ্রীরিয়্যাল ধারাবাহিকে প্রকল্প ভট্টাচার্য (পর্ব – ২ ।। দ্বিতীয় ভাগ)

নাম: পরিমলবাবুর পরিবারকথা

পর্ব ২: স্কুল অ্যাডমিশন (দ্বিতীয় ও অন্তিম পর্ব)   

(আগে যা ঘটেছেঃ  প্রসূন এবং জুঁইয়ের ইচ্ছে যে তাদের ছেলে প্রিয়মকে নতুন একটা স্কুলে ভর্তি করানো হোক। পরিমলবাবুর তাতে মত নেই। শেষে সবাই ঠিক করে, পরিমলবাবু নিজে গিয়ে স্কুলটা দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন প্রিয়মের স্কুল বদল করা হবে কি না।)
(আনন্দের প্রবেশ)
-চলুন কাকাবাবু, তৈরি তো? এবার আমরা বেরোব।
পরমা- আরে আনন্দ! কেমন আছ? শুনলাম তুমি নাকি স্কুল ইন্সপেক্টর হয়েছ?
জুঁই- উফফ, মা! তুমি না! ও হবে ইন্সপেক্টর! তাহলেই হয়েছে! ও কোয়ার্ডিনেটর!
পরমা- সেটা আবার কী! তাদের কী কাজ করতে হয়?
জুঁই- কোঅর্ডিনেশন, আবার কী!
আনন্দ- আমি বুঝিয়ে বলছি কাকীমা। এই গ্রুপটার বেশ কয়েকটা স্কুল আছে এই শহরে। তার পাঁচটা স্কুলের দায়িত্ব আমার ওপর।
পরমা- পুরো পাঁচখানা স্কুলের দায়িত্ব!! সে তো সাংঘাতিক ব্যাপার!!
জুঁই- ধুসসস, মা, তুমিও যেমন! ওর কাজ হল শুধু ভর্তির জন্য ছেলেমেয়ে খোঁজা। দালাল টাইপ।
আনন্দ- এই, দালাল বলিস না আমায় প্লিজ!
জুঁই- আচ্ছা বাবা আচ্ছা, এজেন্ট। এবার ঠিক আছে?
পরিমল- হ্যাঁ আনন্দ, আমি রেডি। প্রিয়ম কোথায়?
পরমা- বাব্বা! উৎসাহের আর সাজের বহর দেখে মনে হচ্ছে প্রিয়মের জায়গায় তুমিই ভর্তি হতে যাচ্ছ!
পরিমল- আরে, একটা স্কুল দেখেশুনে নিতে হবে তো! হলেই বা ক্লাস থ্রি, বেসিক পড়াশোনা তো এখনই শুরু হবে! তা ঠিকমতো দেখতে শুনতে গেলে…
প্রিয়ম- দাদু, ওঁরা কিন্তু জিকে-র কোশ্চেন করবেন, ভালো করে পড়েছ তো?
পরিমল- আরে! এ তো সত্যিই আমাকেই ভর্তি করাতে চাইছে দেখছি! চলো বাবা আনন্দ, আমরা এগোই!
(স্কুলে)
আনন্দ- দেখুন কাকাবাবু, একেবারে ঝকঝকে বিল্ডিং, সামনে অ্যাডিকোয়েট পার্কিং, ওদিকে নার্সারিদের খেলার জায়গা, তার পাশে ক্যান্টিন, কফি শপ, আর ওইদিকে…
পরিমল- বাবা, কিছু মনে কোরও না। আজকাল যেমন সেলফোনে ফটো তুলে গান শুনে লোকে ভুলেই গেছে যে ওটা আসলে কথা বলার আর যোগাযোগের যন্ত্র, এই স্কুলটাও আমার তেমনই লাগছে! পড়াশোনাটা হয় তো এখানে?
আনন্দ- আরে কী যে বলেন! এশিয়ার প্রথম এবং একমাত্র ল্যাংগুয়েজ ল্যাবোরেটরিওয়ালা প্রাইমারি স্কুল এটা!
পরিমল- আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি, তার মানে তো ভয়ানক কিছু ব্যপার! তা প্রিয়ম, তোর কেমন লাগছে?
প্রিয়ম- দাদু দেখ, ক্লাসে সিনেমা দেখাচ্ছে!
আনন্দ- ওটা হাইটেক ক্লাস রুম, অডিও ভিসুয়াল সিস্টেম…
পরিমল- একবার ম্যানেজমেন্টের কারো সঙ্গে কথা বলতে পারলে…
আনন্দ- আরে সেটাই তো আমার কাজ! আমি করেস্পণ্ডেন্টকে বলে রেখেছি আগেই, এখনই ডাকবে আপনাকে।
পরিমল- ইয়ে, আমি… একা ভিতরে যাবো!
আনন্দ- কিচ্ছু চিন্তা নেই আপনার কাকাবাবু! যা প্রশ্ন আছে করবেন। সব ডাউট ক্লিয়ার করে আসবেন।
(অফিস বয় ডাকে- মিঃ পরিমল, নেক্সট প্লিজ!)
প্রিয়ম- অল দ্য বেস্ট দাদু! ভালো করে সব আনসার দেবে, ছেড়ে আসবেনা কিছু!
(পরিমল ভিতরে যান)
-আসতে পারি?
-হ্যাঁ আসুন। বসুন।
-ধন্যবাদ।
-আপনিই তো মিঃ পরিমল?
-হ্যাঁ আমিই।
-ক্যাণ্ডিডেট কি আপনার ছেলে?
-না, প্রিয়ম আমার ছেলে প্রসূনের ছেলে। প্রিয়মের অ্যাডমিশনের জন্যেই…
-আচ্ছা। আপনার ছেলের অন্য কোনো ইস্যু আছে?
-আসলে ও তো এখনো আপনাদের স্কুলটা ভিতর থেকে দেখেওনি, বিশেষ কিছু জানেওনা। আর আমিও তো প্রথম এলাম, তাই এখনই কোনো তেমন ইস্যু…
-না না, বলছি, মিস্টার প্রসূনের আর কোনো সন্তান আছে?
-আজ্ঞে না।
-তাহলে প্রিয়ম হলো মিস্টার প্রসূনের একমাত্র ছেলে, তাই তো।
-হ্যাঁ।
-আর মিস্টার প্রসূনও হলেন প্রিয়মের একমাত্র বাবা, ঠিক?
-মানে!
-আহা, উত্তেজিত হবেন না। এগুলো প্রোটোকল।
-আচ্ছা। হ্যাঁ, প্রসূনই ওর একমাত্র বাবা।
-বেশ। এবার বলুন, আপনি কেন আমাদের স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করাতে চান।
-আমিও সেটাই ভাবছি।
-আপনি কি বিজ্ঞাপনে আমাদের নাম দেখেছিলেন?
-হ্যা, দেখেছি। মানে দেখতে বাধ্য হয়েছি। কানের কাছে দিন রাত্তির মাইক বাজিয়ে প্রচার করছিলেন যখন…
-ওক্কে, তার মানে, থ্রু প্রচার। আচ্ছা, এবার আপনার সম্পর্কে বলুন।
-আমার সম্পর্কে? কী বলব!
-আপনি কী করেন?
-অনেক কিছু।
-অনেক কিছু মানে? স্পেসিফিকালি?
-সকাল ঘুম থেকে উঠে দাঁতন করি। তারপর একটু প্রাতঃভ্রমণ। নিমাইয়ের দোকানে গিয়ে কাগজ পড়ি আর এক কাপ চা খাই। তারপর বেগ পেলে…
-ব্যাস ঠিক আছে ঠিক আছে! মিস্টার প্রসূন চাকরি করেন না ব্যবসা?
-চাকরি। সফটোয়ার ডেভেলপার।
-সিটিসি কতো?
-ঐ তো, মানে মাস গেলে সব কেটেকুটে হাতে পায় হলো গিয়ে…
-না না, ওঁর আই টি রিটার্ণস জমা দেবেন, গত দু-বছরের।
-মা গো!
-হ্যাঁ, প্রিয়মের মা কি হোম্মেকার, না ওয়ার্কিং?
-সরকারী স্কুল টিচার।
-গুড। কিন্তু তাহলে প্রিয়মকে বাড়িতে পড়াতে পারবেন না। আচ্ছা, আপনার এজুকেশন?
– হ্যাঁ, আমি এজুকেটেড।
-কোয়ালিফিকেশন প্লিজ?
-বি কম গ্র্যাজুয়েট।
-সেকি, এম বি এ ও করেননি!
-না। কিন্তু তার সঙ্গে নাতির অ্যাডমিশনের কী সম্পর্ক!
-আছে! অবশ্য আছে! একটা বেসিক কোয়ালিফিকেশন না থাকলে গাইড করবেন কী করে!
-গাইড তো আপনারা করবেন! কী বিপদ!
-আহা, সে তো স্কুল টাইমটুকু শুধু। দিনে কত ঘন্টাই বা স্কুলে থাকবে ও, বাকী সময় তো দাদ-ঠাকুমার কাছেই থাকবে! বলছেন প্রিয়মের বাবা মা দুজনেই চাকরি করেন, তাহলে আপনাদেরই দায়িত্ব নিয়ে ওঁকে গাইড করতে হবে না?
-বুঝলাম।
-এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি?
-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, আপনারা যা যা শেখাতে চান…
-না না, আপনাদের কী কী অ্যাক্টিভিটি জানা আছে? নাচ, গান, আঁকা…
-আমাদের! আমাদের কি সেগুলোও জানতে হবে!
-হবে বৈকি! আমরা প্রতি সপ্তায় যে প্রোজেক্ট ওয়ার্ক দেবো, সেগুলো তো আপনাদেরই করতে হবে!
-আর যদি সেগুলো না করা হয়?
-তাহলে পিটিয়ে করাবে।
-সেকি! এত ছোট ছেলেদেরও পেটাবেন নাকি!
-আর না না, PTA মানে পেরেন্টস-টিচার্স-অ্যাসোসিয়েশন এর দায়িত্ব তাকে বোঝানো ও সাহায্য করা।
-বুঝলাম। আচ্ছা, আপনাদের ফী কতো?
-আমরা খুব নমিনাল টাকা নিই, এই হাজার চল্লিশ।
-এক হাজার চল্লিশ টাকা?
-না না, চল্লিশ হাজার মতো। আপনি দুটো ইন্সটলমেন্টেও দিতে পারেন।
-আচ্ছা। আর আমার জন্যে?
-আপনার জন্যে, মানে?
-মানে, আমাকেও তো আপনাদের মনোমত বেসিক কোয়ালিফায়েড হতে হবে, এক্সট্রা কারিকুলার নাচাগানা শিখতে হবে, এই সবের জন্যে আর কোথায় যাবো, আমাকেও এখানেই ভর্তি করে নিন!
(পরিমল বেরিয়ে আসেন।)
প্রিয়ম- কী হলো দাদু?
পরিমল- হবে নারে, এই বয়সে নাচতে গাইতে বলছে…
আনন্দ- তার মানে! আপনাকে নাচতে বলছে! হাউ ডেয়ার! আমি এখনই গিয়ে…
পরিমল- না না, তা নয়। চলো বাড়ি চলো, আমি সব বলছি বুঝিয়ে। তবে মনে হয়না এখানে প্রিয়মকে ভর্তি করানো যাবে!
(বাড়িতে)
পরিমল- সবই তো শুনলে সবাই, এবার তোমরাই বল কী করা উচিৎ!
প্রিয়ম- জানো দাদু, তুমি যখন ভিতরে গেছিলে, একটা আন্টি এসে আমায় নাম জিগ্যেস করলো। আমি বল্লাম প্রিয়ম! তারপর বলল একটা রাইমস বলো।
জুঁই- ঠিকমতো বলেছ তো, সেদিন যে তোমায় শেখালাম বাটারফ্লাই বাটারফ্লাই?
প্রিয়ম- ওটা বলিনি, আমি বলেছি ঠাম্মার শেখানো কুমোরপাড়ার গরুরগাড়ি!
প্রসূনা- সর্বনাশ করেছিস! ঐ হাইটেক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটাকে একেবারে কুমোরপাড়া বানিয়ে দিলি! হা-হা-হা!  জিতে রহো বেটা! আপাততঃ স্কুল বদলের প্ল্যান ক্যান্সেল! তবে বাবা, তুমি এমবিএ-র একটা কোর্সে ভর্তি হয়েই যাও, আবার কবে কখন লাগে!!
(সকলের হাসি!)

সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।