ধারাবাহিক রম্যরচনায় ইন্দ্রাণী ঘোষ

ইচ্ছে মুলুক

আজ সবুজ ঘরে ঢুকে দেখি লাল রঙের বলটা টেবিলের নীচে ঝিমচ্ছে। আমার আবার তাঁর ঘাড়ের উপর পা টানটান করে শুয়ে থাকতে দিব্যি লাগে। কুমুকে আজ মেয়ে বগলদাবা করে নিয়েছে। খানিকক্ষণ পর কুমুকে বিছানায় রেখে মেয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। কুল্পিআলার ঘণ্টাটা তখন সবে একটা ঢং করে আওয়াজ করেছে। কুমু বললে ” নাও বুড়ো আজ মোড়ের মাথায় চলে এসেছে। দশ পয়সাটা দাও দিকি নি’। তা আমি বললাম “আজ আবার যাবে?কাল অতখানি সাঁতার কাটলে’। কুমু আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আমার হাত থেকে দশ পয়সাটি ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেল। উফ কি দাপট কুমুর সে নাকি নরম তুলতুলে একটা কচ্ছপ। যাবার আগে রক্তিমাভ কে বললে ” আর গড়াগড়ি না খেয়ে রেডি হ, আজ তুই গড়াবি , আমি পথ দেখাব’। ও হ্যাঁ রক্তিমাভ বিশাল লাল বলের নাম। কুমুর ভাবসাব দেখে জন্মক্যাবলা আমি আরও ভ্যে্বলে গেছি। আমি রক্তিমাভর দিকে তাকাতেই সে বললে ” যেমন আমার উপর পা টানটান করে শুয়ে আছ, শুয়ে থাক। বেশি ভেব না। আমরা আছি তো’। তা এমন আশ্বাসবানী শুনে মনের ভিতর কুলকুল করে ঝর্না বইতে থাকল। আমি টানটান হয়ে শুতে শুতে জিজ্ঞেস করলাম ” তা আজ কোথায় যাব?’ রক্তিমাভ বললে ” দেখি কুমু কি রঙের মোড়া আনে আজ, তাহলে বোঝা যাবে’। বলতে না বলতে কুমু এসে হাজির মুখে একখানি লাল মিনিয়েচার মোড়া। লাল মোড়াটির গায়ে আবার হীরের কুচির মত পাথর দিয়ে কারুকাজ করা।
কুমু এসে হুকুম করলে ‘চল, কুঁড়েমি কোর না, লোকে আবার আমাদের কচ্ছপদের গতি নিয়ে কথা বলে, তুমি সারাজীবন কুঁড়েমি করলে কেন বল তো?’ আমি আরাম করে পা ছড়ালাম, কুমু বললে ” হাত দুটো নাড়বে মাঝে মাঝে’ আমি ঘাড় নাড়লাম। এরপর কুমু বাতাস সাঁতরে সোজা ছাঁদ ফুঁড়ে ওপরে উঠে গেল, রক্তিমাভ আমায় নিয়ে উড়ল। উড়তে উড়তে বেশ শীত শীত করছিল। মেঘের পরে মেঘ জমেছে বাতাস রাজ্যের উপর ভাগে। আমি মেঘবালিকাদের জিজ্ঞেস করলাম’ হ্যাঁ গো নীচে যাবে না?’ তাঁরা খিলখিল করে হেঁসে পালালে।রক্তিমাভ আমায় পিঠে করে কুমুর পিছনে পিছনে আরও উঠে গেল। সে এমন এক রাজ্য কি বলি তোমাদের। আলোকের ঝর্নাধারার রাজ্য। সেখনে আলোর ঝর্নাধারারা আলোর নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছে। সে নদীতে সাত রঙের ঢেউ। লাল,নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনী, কমলা, ঘন নীল,। আর সেই দাড়িওয়ালা বুড়ো বসে আছে আলোর নদীর পাড়ে। বুড়োর পাশে এক রাজা ,মাথায় তাঁর মুকুট পরনে সাদা জড়ির পোশাক।
আমায় দেখলে না তাঁরা । আমি একটু কথা কইতে যাচ্ছিলাম, কুমু ইশারায় চুপ করতে বললে। আমি আর কথা বলি নি বাপু।
তারপর আলোর রাজ্য থেকে আমরা নামতে লাগলাম। বাড়ীর কাছাকাছি এসে কৃষ্ণচূড়া গাছটার মাথায় একটু দাঁড়ালাম।সূর্যি দাদার রাগটা তখন একটু পড়েছে।আর মনের সুখে তিনি কৃষ্ণচূড়ায় লাল আবির ছড়াচ্ছেন। আমরা ঘরে ফিরলাম।
এতক্ষণ পা টানটান করার পর এখন বাঁ পাটা ব্যথা করছে। কুমু এখন বিশ্রাম নিচ্ছে। রক্তিমাভ অল্প গড়াচ্ছে। দেখি কালকের দশ পয়সাটাও খুঁজে রাখি আগেই।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।