মেয়েদের অনেকগুলো হাত থাকে। অনেকরকম হাত। আজ ভাত খেতে খেতে সদাশিব খেয়াল করলেন পার্বতীর নুনের হাতটা ইদানীং খুব লম্বা হয়ে গেছে, এতটাই লম্বা যে সদাশিবের শৈশবের জোর করে গেলানো কান্নামাখা ভাতগুলোর স্মৃতি প্রায় ছুঁয়ে ফেলছে। উগরে আসা নাছোড় ভাতগুলোকে কোনরকমে একগ্লাস জল দিয়ে তাদের চেনা রুটে পাঠিয়ে দিলেন সদাশিব। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলেন পার্বতী ওই একই খাবার মহানন্দে খেয়ে যাচ্ছে তাঁর উল্টোদিকের চেয়ারে বসে। মহানন্দে শব্দটায় হয়তো একটা দৃশ্যগত ভুল থেকে গেল, কারণ পার্বতীর দুচোখের গোমুখ থেকে পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে নামছে, কিন্তু কি আশ্চর্য, তাঁর মুখমণ্ডলে খেলা করছে তৃপ্তির এক অপরূপ আলো।
টলারেন্স! হাঃ টেবিলকভারটাও আজকাল কত সহিষ্ণু হয়ে গেছে। নইলে পার্বতী যেভাবে থেকে থেকে বেচারিকে খামচে ধরছে, এমনকি নাকের চোখের যাবৎ জলপ্রপাত মুছে চলেছে, বেচারি মুখ বুজে সহ্য করছে কী করে?
ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস পড়তে চমকে উঠলেন সদাশিব। মুহূর্তের এক ভগ্নাংশের জন্যে। ওঃ একটি বুদবুদ, সাবানের যে রঙ্গিন ফেনা টিভি উপচে এই খাওয়ার ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে, তারই একটি বুদবুদ তাঁর ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলল। টিভির দিকে পিঠ ফিরিয়ে খেলেও নিস্তার নেই।
অবশ্য উলটোদিকে বসলেও প্যাসিভ দর্শক হওয়া তাঁর নিয়তি। পার্বতীর মুখের দিকে তাকালেই দৃশ্য গুলো পরপর দেখে ফেলতে হয়। ফেলতেই হয়। এই আনন্দ,এই বিষাদ, এই বিস্ময়, এই ভয়, এই জিঘাংসা- যেন আবেগের একটা মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন। কিংবা ফিউশন ফুড। পার্বতীর মুখের দিকে চেয়েই সদাশিব বুঝলেন এখন দেড়টা থেকে দুটোর মাঝবয়সী একটি হাপুস দুপুর। ‘হযবরল’ চ্যানেলে চলছে ‘কেন বৌ চৌরাস্তায়?’ কিংবা ‘কার কুত্তা কাকে কামড়ায়’ এই ধারাবাহিকটি। একবার সরলভাবে পারোকে শুধিয়েছিলেন (শাহরুখ খানের সৌজন্যে বেবাক পার্বতীদের এখন পারো বলে ডাকাটা যথেষ্ট ইন থিং) ‘কেন বৌ চৌরাস্তায়?’ না বলে ‘বৌ কেন চৌরাস্তায় ?’ বললে কানে একটু কম লাগত না? ’
এর উত্তরে চোখ মুছতে মুছতে পার্বতী বলেছিল ‘ ক অক্ষরটা খুব পয়া, ক-মুখো সিরিয়াল হিট হবেই’
‘কোন অনামুখো বলেছে?’ প্রায় বলে ফেলতে যান সদাশিব। কিন্তু পার্বতীর কান্নাভেজা চোখ তাঁকেও কাতর বা ক-ত রো করে তোলে। তিনি থ মেরে যান, কোন ক-থাই না খুঁজে পেয়ে। আঁতিপাতি করে মনে করেন পা র্বতীর প্রিয় ধারাবাহিক গুলোর নাম-
‘কই গো কোথায় গেলে?’
‘কাহিনী শাশুড়ি বৌয়ের’
‘কান্নার পর কান্না’
‘কাতুকুতু থেকে কিতকিত’
‘কিসের থেকে কী?’
যতই মনে করেন অনুরাগ বা কানুরাগ ততই প্রগাঢ় হয়। তাঁর এমনকি ক-এ কান্নার সেই আদি উৎস মনে পড়ে যায়। শান্তিপুর ডুবুডুবু নদে ভাসানো সেই সোনার গৌরাঙ্গ , ক উচ্চারণ মাত্র কৃষ্ণরূপ স্মরণে আসত যার, যুগপৎ ভেসে যেত চোখ ও পুঁথির পাতা, তার হাতেই বুঝি অশ্রুসজল বাণিজ্য সফল ধারাবাহিকের গোড়াপত্তন। নিজের আবিষ্কারে নিজেই মোহিত হলেন সদাশিব। পিঠ ফেনায় সিক্ত হলেও মগজটা দিব্যি অক্ষত আছে তো। কে কবে কী একখানা কবিতা লিখেছিল, সেটাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা যায়-
‘পৃষ্ঠে আছে বটে অশ্রুলেখা
মগজ এখনও তপ্ত, যাবে রুটি সেঁকা!’
তপ্ত মগজটি সাবধানে টিভির ধারাপাত থেকে বাঁচিয়ে উঠে পড়েন সদাশিব, চা জলখাবার ঘরে বসেই খেয়ে নেন আজকাল। জীবনের উত্তরকাণ্ডে এসে নিজের, একেবারে নিজের একখানা ঘর জুটেছে তাঁর। অবসরকালীন টাকা পয়সা যা জুটেছিল, কুড়িয়ে বাড়িয়ে এই একতলা বাড়ি। পার্বতীর বরাবর সাধ ছিল একটা ঠাকুরঘর। ছাদের চিলেকঠাটি প্রায় দেবায় নমঃ হয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু গড প্রপোজেস, টিভি ডিস্পোজেস। বাক্সায়নের মাধ্যাকর্ষণে পার্বতীর আর ওপরে ওঠা হল না। মহম্মদই পর্বতের কাছে গেলেন। মানে তেত্রিশ কোটির একটা অ্যাব্রিজড সংস্করণ টিভির মাথায় অধিষ্টিত হল।
আঁচিয়ে নিজের ঘরে আসেন সদাশিব। ঘর মানে দেবতাদের পরিত্যক্ত সেই চিলেকোঠা। ওপরে অ্যাসবেস্টস। ভাদ্রের পচা গরমে মাথাটা ক্রমে পচা ইলিশের মতো তলতলে হয়ে আসে। সেই সুস্বাদু মৎসগজের (মৎস+ মগজ) রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেঁদিয়ে যায় ঘানিভাঙ্গা সর্ষে তেলের মতো ঝাঁঝালো ঘুম। টুপ্টুপ লেবুর মতো কতক্ষণ সেই ঘন ঘুমতেলে চুবে ছিলেন কে জানে! হঠাৎ এক ঝাঁক পাখির ডাকে ভোরের প্রসিদ্ধ সঙ্কেত ভেবে পাশ ফিরে শুলেন। কিন্তু যখন আবার ডাকল, আবার, একই স্কেলে, নিখুঁত যান্ত্রিক সমতায়, তখন তড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন। আবার মাঙ্গলিক ‘ক’ মানে কলিং বেল বাজছে। সিঁড়ি ভেঙে তাঁকেই খুলতে যেতে হবে। কহানি আর কিস্যার আঠালো চক্রে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছেন পার্বতী, দরজা ভেঙে ফেললেও তিনি উঠবেন না।
মাথার মধ্যে কলিং বেলের সঙ্কেত পৌঁছলে ঘুমের ঘন কুসুম ঘেঁটে যায়। দরজায় এসে কমলা নাকি গেরুয়া রঙের দাপ্টে ঘাবড়ে যান সদাশুব। এ যে তেরে দোয়ার খাড়া এক নয়, তিন চার যোগী! এরা যে শুধু দর্শনে তুষ্ট হবে না, সোনা চাঁদি খসাবে, বিলক্ষণ বুঝতে পারেন। দুয়ারে হৃষ্টপুষ্ট কয়েকজন যোগীবরকে দেখে মাথায় বিপদ্ঘন্টি বেজে ওঠে। যোগ মানে যে বিয়োগ। তাঁর কিছু খসবে নির্ঘাত। সদাশিব নিরাসক্ত গলায় শুধোন-
‘কী চাই?’
‘মা মা মা’ নবীন বৈরাগীটি এগিয়ে এসে বলে
‘মাসীমা এখন ব্যস্ত আছেন’
এবার মুখ খোলার আগেই, পেছনে বুঝি কলসির কানার খোঁচা খেয়ে থেমে যায় নবীন, তার আর প্রেম বিলোনো হয় না। দলের হৃষ্টতম সন্ন্যাসীটি তার চেহারার ব্যাস্তানুপাতিকভাবে মিনমিনে গলায় বলে ‘মাসীমা নয়, আমরা আসছি মায়াপুর ভক্তি গদ্গদাংগ অখণ্ড গৌড়ীয় ধাম থেকে, মদীয় নাম গোবিন্দ অধম।’
এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে।
‘আমি ভাগবত ভ্রমর শ্রী রতনরাম অধমাধম’
‘আমি ভক্তিপ্রহ্লাদ শ্রী বলদেব অধমাধমাধম’
এই ধমাধম ধামাকার শেষে সদাশিব কোনরকমে উচ্চারণ করতে পারেন
‘অ’
ভাগবত ভ্রমর অদম্য উৎসাহে বলে
‘আগামী উৎসবের রসদ সংগ্রহের জন্যেই আমাদের আগমন। ১৮ ই ভাদ্র, চৌঠা সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার গৌর অষ্টমী। নেতাজি স্ট্যাচুর মোড় থেকে বাস ছাড়বে। মাথা পিছু পাঁচশো। সাত দিন শয়ন ও ভোজন বিনামূল্যে, সঙ্গে অ্যাটেস্টেড বাথরুম। অষ্ট প্রহর কীর্তন, ভাগবত পাঠ, ভোগ।’ ভোগ শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ভাগবত ভ্রমরের চোখদুটি ভক্তিতে বুজে আসে। ভক্তি বড় সংক্রামক। সিক্ত হতে গিয়েও অ্যাটেস্টেড বাথরুমের চৌকাঠে হোঁচট খেতে হয়। আজকাল বাথরুমও জাল হচ্ছে নাকি, মার্কশিটের মতো? তাই আসল বোঝাতে দরকার অ্যাটেস্টেড ছাপ? তাহলে তো ভক্তি গদ্গদাঙ্গের ব্যবস্থা ভালোই বলতে হবে।
এসব ভাবনা অবশ্য মনে মনেই খেলে বেড়াচ্ছিল। মুখে দিব্যি একটা নির্বিকল্প ভাব ফুটিয়ে রেখেছিলেন সদাশিব। বহুবছরের অভ্যাস তো। ফাইল আটকে রাখতে রাখতে ক্রমে বড় বাথরুম, ছোট বাথরুম কিংবা সংবেদনার মতো বদ অভ্যাসগুলো আটকে রাখা জলভাত হয়ে যায়। সদাশিবের নিরুত্তাপ মুখ দেখে যোগীবরেরা কিঞ্চিৎ ম্রিয়মান হয়ে পড়েছিল, হঠাত তাদের মধ্যে অসামান্য চাঞ্চল্য দেখা দিল। যেন নাস্তিক সদাশিবের শিরশ্ছেদ করতে সুদর্শন চক্র ধেয়ে আসছে। শিহরিত হয়ে সদাশিব পেছনে ফিরে দেখলেন, ওঃ এই কলিতেও কানুর কি ক্যারিশ্মা! সত্যিই সুদর্শন চক্র এবং সাকার। এই বয়সেও পার্বতী যথেষ্ট সুদর্শনা এবং তাঁর চক্রপথেই যে সদাশিব কলুর বলদের মতো ঘুরে চলেছেন তা অস্বীকার করে কোন আহাম্মক? পার্বতীর হাতে বরাভয়ের মতো একটি উচ্চ পর্যায়ের নোট। সে ব্যস্ত গলায় বলে ‘কাটুন বাবা, তাড়াতাড়ি কাটুন। ওদিকে বউটাকে চৌরাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছি।’ কাটুন মানে তো কেটে পড়াও হয়। অথচ যাবার কোন লক্ষণই নেই। কেমন ধীরেসুস্থে ঝোলার গভীর থেকে গোলাপি রসিদ বই বার করে ভাগবত ভ্রমর, কিছুমাত্র জিজ্ঞাসা না করে যেমন অনায়াসে খোপগুলো ভরে ফেলে তাতে বোঝা যায় এ বাড়িতে ওই গোলাপি বইটি প্রায় বেস্টসেলার পর্যায়ের। একখণ্ড কাগজ তাঁর হাতে এসে পড়ে, কারণ পার্বতী চকিতে অদৃশ্য হয়েছে বরদানের পরেই। সত্যিই তো বউকে আর কতক্ষণ চৌরাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা যায়? তার জন্যে যদি স্বামীকে পথে বসতে হয় সেও ভি আচ্ছা!
এতদিন অফিসে বেরিয়ে যেতেন, টের পাননি। এই ভক্তিরসাশ্রয়ী মেগাসিরিয়ালটি কত বছর ধরে চলছে কে জানে। ভক্তিগদ্গদাংগ ধাম মায়া হতে পারে, কিন্তু যোগীবরদের বিপুল উদর তো আর মায়া নয়। তা ভরাতে পার্বতীদের লাগে। সদাশিব দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবেন পার্বতীর ভক্তির হাতটা কত লম্বা কে জানে? নুনের হাতের থেকেও কি? নুনের চোটে তো অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে এসেছিল, কিন্তু ভক্তির হাতটা ফাস্ট ফরোয়ার্ড। এইভাবে চললে খুব শিগগিরি নিজের শ্রাদ্ধের লুচি, ছোলার ডাল থেকে ধোঁকা সবই গিলতে হবে। তাঁর শ্রাদ্ধবাসরে কৌতূহলী জনতাকে পার্বতী সোনামুখ করে জানাবে সদাশিবের মৃত্যুর কারণ। কপালে কেউটে কামড়েছিল কিনা। ক্লিক। ক্লিক। ক্লিক। খুলছে। খুলছে। নতুন রোজগারের রাস্তা। ‘কপালে কেউটের কামড়’ নামে তিনিই তো লিখে ফেলতে পারেন একটা মারকাটারি সিরিয়াল। কিন্তু তার আগে একটা মার্কেট সার্ভে করা দরকার। কী খাচ্ছে এখন জনগণ? জনগণ মানে তো পার্বতী। ডায়লগগুলো অবশ্য চোখা চোখা চাই। তবে তিনি ভক্তির পথেই হাঁটবেন। কলেজের বন্ধু সুখময় একবার বলতে গেছিল ‘ভক্তির পথে মুক্তি আসবে, যুক্তির পথে নয়’, তাড়াতাড়িতে সেটা দাঁড়াল ‘ভতকির পথে মুতকি আসবে যুতকির পথে নয়’ থেকে থেকেই কথাটা নিয়ে হাসির রোল উঠত। আজ অবশ্য একটুও হাসি পেল না। ভতকি শব্দটা একটু এদিক ওদিক করলেই দাঁড়ায় ভেটকি। ভক্তি তো ভেটকি মাছের মতোই। কাঁটাহীন। তাই এত জনপ্রিয়। সারা জীবন কাফকা, কুন্দেরা- অনেক কৃষ্টি হয়েছে। তাতে আর কিছু না হোক, কারখানার চিমনিগুলো সত্যিই চ-ই এমনি এমনি হয়ে গেছে! আর ধোঁয়া বেরোয় না। এবার তিনি ভকতির পথেই হাঁটবেন। ওই পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে। অবসরজীবনটা অর্থময় করে তোলা চাই তো, মানে দুই অর্থেই।
দুপুরবেলা পর্দা টর্দা টেনে ঘরটাকে প্রায় মাতৃগর্ভের মতো করে ফেলে পার্বতী। উষ্ণ অন্ধকার। যেখানে সিরিয়ালের চরিত্র আর পার্বতী মিলে মিশে একটা অবিচ্ছেদ্য মাধ্যম। চিত্রনাট্য লেখার প্রথম শর্ত এটাই। আজ সেই অন্ধকার ঘরের উজ্জ্বল প্রাণকেন্দ্রটিতে সাদা কালো রেখার হিজিবিজ সঙ্কেত। যেন কোন স্তোত্র উচ্চারণ করছে, এমনভাবে পার্বতী আবার ধ্যানমগ্ন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সাহস করে দ্বিখণ্ডিত গোলাপি কাগজটা বাড়িয়ে দেন সদাশিব। অনেকদূর থেকে, বোধহয় কৈলাস থেকেই পার্বতীর গলার স্বর ভেসে আসে-
‘টিভির মাথায় রাখো, ঠাকুরের পায়ের কাছে’ সদাশিব তাই করেন। সঙ্গে সঙ্গে একটা আশ্চর্য ব্যাপার ঘটে। কেবলে কারেন্ট চলে আসে। ক্যাথড রে টিউবের মুখ দিয়ে হুড়হুড় করে পড়তে থাকে শাস, বহু, ছোটিমা, বড়িমা, রাঙ্গাকাকা, সোনাবউদিরা। পড়তে থাকে তুলসিতলা, দ্গদগে সিঁদুর, কাপালিক, ভূত, ওঝা, মারণ উচাটন…. পার্বতী কিন্তু একটুও অবাক হয় না। তার ভাবখানা এমন যেন এটা গণেশের দুধ খাওয়ার মতোই জলভাত ব্যাপার। সদাশিব মুগ্ধ হয়ে দেখেন টিভির জ্যোতির্বলয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ছে পার্বতী, বাইরের পোড়া পৃথিবীর কোন সমস্যাই ছুঁতে পারছে না তাকে। তিনি সম্মোহিতের মতো বসে পড়েন পার্বতীর পাশে। ঠিক তখনই কান্নাভেজা একটা বউমুখের সিঁদুরে ফ্রিজশট। পর্দায় ভেসে ওঠে- সারিসারি নাম। পার্বতী আড়মোড়া ভেঙে বলে ‘আবার কাল’
কালের কি কুটিলা গতি! আজ নগদ, কাল ধারের মতোই পিছলে যায়,কোনদিন আসে না সেই কাল। আসে না, তাই শেষও হয় না। এই কালের কামড়ই কাল আবার টেনে আনবে পার্বতীকে, সঙ্গে হয়তো সদাশিবকেও। কিন্তু জিন্দেগিতে জানা যাবে না কাহিনীর শেষটা। কে যেন বলেছিল – জীবন বেশি লম্বা না সিরিয়াল? চিত্রনাট্য লেখার এটাই দ্বিতীয় এবং মোক্ষম শর্ত। আরে মশাই, এই সামান্য পৃথিবীটারই ল্যাজামুড়ো কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না, আর এ তো একটা প্রকাণ্ড কাল কারখানা!