• Uncategorized
  • 0

“পুরুষ” নিয়ে বিশেষ সংখ্যায় শর্মিষ্ঠা সেন

হে ঈশ্বর, মানবী হও

সেই এক রাজা কুন্তীভোজ এবং তাঁর পালিতা কন্যার বহুশ্রুত গল্প, সবার জানা..
বার্তা পৌঁছল হঠাৎ ,দুর্বাসা আসছেন, রাজ আতিথ্যে
প্রাসাদে সাজ সাজ রব , অথচ রাজার মনে শঙ্কার মেঘ !
রাজা শক্তিমান,তবে সর্বশক্তিমান মহর্ষি,
মহর্ষি দুর্বাসা , যাঁর খ্যাতি স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল ত্রিভুবনে৷
অবশ্য মন্দ লোকে বলে কুখ্যাতি ৷
তাঁর আঙুলের ডগায় অভিশাপ, দৃষ্টিতে রোষ, জিহ্বায় কঠোর শব্দের ঝঙ্কার !
এহেন ব্যাক্তির সেবার ভার নিলেন সদ্য তরুণী কুন্তী ৷
‘রাজকন্যা’ কুন্তী? নাকি ‘ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো’ এক সামান্যা নারী ? যার থাকা না থাকায় পিতৃকুলের বংশরক্ষা আটকায় না ৷
তদুপরি, কুন্তী পালিতা কন্যা বই তো নন!
দুইজন পিতা , তবু কই বটবৃক্ষের নিশ্চিন্ত স্নেহচ্ছায়া?
শূরকন্যা পৃথা ,জন্মলগ্নেই জন্মদাতার স্নেহবঞ্চিতা,
কোন এক পূর্বশর্ত অনুযায়ী ৷
প্রশ্ন স্বাভাবিক , পালক পিতা বলেই কী কুন্তীকে মহাক্রোধী দুর্বাশার দিকে ঠেলে দেওয়া?
কুন্তীভোজের মনের গোপন কথাটি কবি বলেননি ৷
আমরা তর্ক করতে পারি পিতা বনাম কন্যার সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে ! যদিও —
মহাভারতকার এঁকেছেন এক স্নেহপরায়ণা কন্যার ছবি , যে পিতার দুঃশ্চিন্তা লাঘবে বধ্যপরিকর !
যথাসময়ে দুর্বাসার আগমন ৷
মহা তেজস্বী, উগ্রচন্ডা, প্রচন্ড এক ব্যাক্তিত্ত্ব ৷
মাসের পর মাস কাটে খামখেয়ালে ৷
মিষ্টভাষী , সর্বকর্মপটিয়সী কুন্তী তপস্বিনীর নিষ্ঠায় পূজা সামগ্রী ,পঞ্চব্যাঞ্জন সাজিয়ে ভোর থেকে দুপুর, দুপুর থেকে রাত, রাত থেকে আবার ভোর সেবাকর্মে !
অবশেষে বৎসর অতিক্রান্ত হলে দুর্বাসা তৃপ্ত হন ৷
বলেন , ‘নারী, মন্ত্র দিব এমন , দেবতারে আহ্বানে পাবি চিরকাল ৷’ বরদান শেষে হৃষ্টচিত্তে দুর্বাসার প্রস্থান ৷
সদ্য যৌবনা কুন্তী কৌতুহলী হন ….আবার মনের লাগাম টানেন অজানা আশঙ্কায় ৷
শেষে ক্ষণিকের চপলতায় স্মরণ করেন সূর্যদেবকে…
আসেন স্বয়ম্প্রভ দেব , কুমারী নারীর আহ্বানে ৷
নারী সম্বিত ফিরে পান তৎক্ষনাৎ , এ কী উভয়সঙ্কট !
একদিকে পিতৃকুলের সম্মাণ অন্যদিকে দেবতাকে প্রত্যাখানের স্পর্ধা ! ভেসে যান কুন্তী….
অদম্য রতিসুখে যথাসময়ে আসে কানীনপুত্র কর্ণ ৷
জন্মমাত্রই নাড়ীছেঁড়া ধনের গোপন বিসর্জন মায়ের,
কবচ কুন্ডলেই পিতার দায়িত্বমুক্ত প্রেমিক সূর্য ! অবশ্য, নারী ভোগী দেবতাকে প্রেমিক বলা যায় কিনা সন্দেহ ৷
ঘটনা প্রবাহে শিশু কর্ণ বড় হয়ে ওঠে অধিরথ এবং রাধার আশ্রয়ে ৷ কুন্তী- সূর্যপুত্র, সূতপুত্র পরিচয়ে ৷
কুমারী কুন্তীর বুক ফাটে তবু মুখ ফোটেনা ৷
এরপর আসেন পান্ডু , স্বামী হয়ে ৷
পিতৃসুখ বিধাতা লেখেন নি, বোধকরি স্বামীসুখ- বঞ্চনার ইতিহাসও আঁতুড়েই লেখা হয়েছিল তাঁর ৷
সপত্নী মাদ্রী আর এক অক্ষম পুরুষের ভার !
কুন্তীর ডাকে পর পর আসেন ধর্ম, পবন,ইন্দ্রদেব
সন্তান না হলে পান্ডুর রাজ্যপাট যায় যে !
নিজের তিন সন্তানের পর মন্ত্রের ভাগ দেন মাদ্রীকেও ;
আসেন অশ্বিনীকুমারদ্বয় !
সম্ভোগ এবং পুত্রপ্রাপ্তি ৷ সহজেই লিখে ফেলা যায় ৷
বহুগামিনী কুন্তীর মনের খবর কেউ রাখেননি !
অবশ্য দেবতা ছুঁলে নাকি নারী এঁটো হয়না ! প্রসাদ হয়
তবুও কিছু প্রশ্ন থেকে যায় ….
কুন্তীর দুর্দশার দায় কার ?
দুই পিতার? মহর্ষি দুর্বাশার ? প্রথম পুরুষ সূর্যের?
নাকি কামার্ত পান্ডুর ? যাঁর পান্ডুরোগেই হঠাৎ মৃত্যু ?
নাকি ধর্মের, পবনের, ইন্দ্রের ? যাঁরা শুধু যন্ত্রের মতো গর্ভে বীজ বপন করেই খালাস ?
একাধিক পুরুষ কুন্তীর জীবন ভাঙাগড়ায় , সঙ্গতে আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়া বিধাতাপুরুষ !
বিধাতাপুরুষ , তুমি নারী হলেও কী এমনই হতো?
কুন্তীদের কী একফোঁটাও সুখ দিতে নেই ?
যুদ্ধক্ষেত্রে এক সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে আরএক সন্তান ভিক্ষা ! এ কেমন নির্মম বিনিময় , হে ঈশ্বর !
কুরুক্ষেত্রের শেষে তাই বুঝি অরণ্যেই আশ্রয় ৷
সকলের অগোচরে প্রাণ বিসর্জন ৷
হে মহাভারতকার , এ কী লিখে গেছেন ?
এতটুকুও শান্তি দিতে নেই শেষবেলাতেও !
ধিক্ আপনার কলমকে !
যে কলম মহাকাব্যের কুন্তী, গান্ধারী, দৌপদীকে আগুন ছাড়া কিছু দিতে জানেনা , তাঁকে সহস্রবার ধিক্ !
শুনেছি ঈশ্বরও পুরুষমানুষ !
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।