• Uncategorized
  • 0

“পুরুষ” নিয়ে বিশেষ সংখ্যায় শমিত কর্মকার

সেই নামে আর ডাকে না বাবা

নাটোরের বনলতা সেন সাহিত্য জগতের এক উজ্জ্বল নাম। আগে ছিল পূর্ব বাংলায় এখন বাংলাদেশ। আর ‘বাবা’ র সেই দেশ থেকে বাল্য বয়সে কলকাতায় চলে আসা। মাহারা এবং বাবাকে রেখে ছোট বয়সে কলকাতা শহরে চলে আসা। কলকাতায় স্কুলের পড়াশোনা শুরু হয় আত্মীয়-পরিজনদের কাছে থেকে।বাল্যকালে মাতৃহারা সেই ‘বাবা’ ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে, স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তারপর টেকনিক্যাল কলেজ। মনের মাঝেই দুঃখকে বেঁধে রেখে শুরু হয় সংগ্রাম পরিবেশে টিকে থাকার জন্য। পড়াশোনার পর্ব শেষ হতেই শুরু হয় কিভাবে পয়সা রোজগারের পথ পাওয়া যায়। এরই মধ্যে নিজের ইচ্ছা কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে (সলিল চৌধুরীর একটি নাটকের দল) নিয়মিত নাটক করা। এরপর বিভিন্ন মঞ্চ নাটক করতে থাকে। গান কে ভালবেসে তৈরি করে ফেলে গানের ডায়েরি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তার কণ্ঠে ভর করেছিল গাইতেন তার গান। কখনো কখনো গেয়ে উঠতেন দুরন্ত ঘূর্ণি বা রানার চলেছে তাই ঝুম ঝুম ঝুম ঘন্টা বাজছে রাতে। ডাইরির প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত তারই গানের স্বরলিপি।
মনকে শক্ত করে সমস্ত শখের জিনিস কে বিসর্জন দিয়ে সেই ‘বাবা’ যোগদান করলেন রেলওয়ে সার্ভিস এ। চলে গেলেন নিজের বেড়ে ওঠা শহর কলকাতাকে ছেড়ে অন্য রাজ্যে। চলতে থাকলো তার পয়সা রোজগারের সংগ্রাম।নিজের মাকে হারিয়ে বাবাকে দেশে রেখে দুঃখকে বুকে বেঁধে দুবেলা চলতে থাকলেও কাজ আর কাজ। নির্দিষ্ট একটি বয়সে আত্মীয়-পরিজনদের তারণায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়লেন, শুরু হলো নিজের সংসার। আবারো সেই ‘বাবা’ চলে এলেন কলকাতায় আবার সেই নিজের শহরে কাজ। শুরু হলো কলকাতায় এবং ভারতের প্রথম ভূগর্ভস্থ রেল তথা মেট্রো রেল। সেখানেই ‘বাবা’ চলে এসে কাজ শুরু করলেন। দমদম থেকে টালিগঞ্জ কত লোক তখন বাবাকে চেনে, চলেছে চশমা পরা ‘বাবা’ তখন আকাশ বাণী ভবনে নেবে সোজা অফিসে। রঞ্জি স্টেডিয়াম তথা ইডেন গার্ডেন এর নিচে তখন তার সেই অফিস ঘর। চলতে থাকে শুধু কাজ আর কাজ,পরে তিনি পার্ক স্ট্রিট এর প্রধান কার্যালয় চলে আসেন স্থায়ীভাবে। সেই ‘বাবা’ তার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে কখনও কখনও কলকাতায় চলে আসতেন। ছেলে তখন দুচোখ মেলে কলকাতা শহরকে শুধু দেখতো। সেই ছোট্ট ছেলে বাবার হাত ধরেই অফিসে ঢুকতো ওই কাকু সেই কাকুর ভালোবাসা পেতে পেতে।অফিসের কোন সোশ্যাল ফাংশনে সেই ছোট্ট ছেলে বসে পরতো তবলায় হাত রেখে দিদির সাথে সঙ্গোত করতে। এইভাবেই ‘বাবা’ধীরে ধীরে ছোট্ট ছেলেকে বড় করে তুলল। ছেলের কোন কষ্টে সেই বাবাই বলে উঠতো ‘বাবা আমি তো তোমার পাশেই আছি চিন্তার কি আছে’।
এখন কাজ থেকে অবসর গ্রহণের পর ‘বাবা’ চলে গেছেন ফিরে না আসার দেশে। ছেলে আজ বড়,চাকরি করলেও লেখালেখি এবং ছবি আঁকা তার প্রথম প্রেম। যখন সে শান্তভাবে বসে থাকে মনে পড়ে সেই ‘বাবা’কে।আর শোনে না তার ডাক যে তাকে মিষ্টি সুরে ডাকতো,সেও
পারে না তার বাবাকে ডাকতে ‘বাবা তুমি কোথায়’।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।