• Uncategorized
  • 0

“পুরুষ” নিয়ে বিশেষ সংখ্যায় চার অক্ষর

লাজুক দিবস

দেড় যুগ আগের কথা। ফেসবুক ইন্সটা হোয়াটস্যাপ তখন নিজ নিজ মাতৃজঠরে (পিতৃ জঠর তো হয় না, পুরুষ পেট কল্পনা করলেই হয় অরন্যদেব নয় লোমশ মেদবহুল জোয়ানের আরক পরায়ণ নোয়াপাতি, সেক্ষেত্রে “জঠর”-এর থেকে “অন্তর” শব্দটি লাগসই, সুবিধা অনুযায়ী বুঝে ফেলুন)। আইন কলেজে পাঠরত এক তরুণ তার লেজ সবে মোটা হচ্ছে, পিঠে দু জোড়া ডানা সবে গজাচ্ছে। তার কানের ভেতর ঘুরেফিরে বেজে চলে রুপম শিলাজিত চন্দ্রবিন্দু পিঙ্ক ফ্লয়েড লিঙ্কিঙ পার্ক আর মেটালিকার নির্ঘণ্ট। বাহন বলতে নিজস্ব দু চাকার সাইকেল এবং বন্ধুর বাইক। পাঁচ মিনিটে একটা করে আবশ্যিক বিড়ি। সন্ধ্যা একটু ঘন হলে ফুসফুস থেকে ঘিলু অব্দি অশুভ ধোঁয়া। সে যে গ্রহ থেকে এসেছে তার নাম মফস্বল। সে যে বাড়ি থেকে এসেছে তার নাম মধ্যবিত্ত। সে যে স্কুলে পড়েছে তার নাম বালক বিদ্যালয়। বালিকারা ছিল না এমনটি নয় কিন্তু ক্লাস সিক্স পেরোতেই সে সব বালিকারা কেমন অচেনা গম্ভীর দিদি সুলভ হয়ে গেল যে পামেলা অ্যানডারসন, টি ভি সিক্স আর রাতের পুতুল তুমি মার্কা বই গুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা ভাবাই যায় না, শেয়ারিং তো দুরস্থান। আমাদের সেই তরুণটি অবশ্য কলেজে উঠে মনে মনে মুচকি হাসে নিজের বালক বেলার কথা ভেবে। হাসি পায় কারণ সে এখন পূর্ণ বয়স্ক বাঘ। সে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হালুম হালুম স্বপ্ন দেখে। তা একদিন সেই তরুণ এর হালুমপনা চোট খেলো ধূমকেতুর মতন আগত সহপাঠিনীর জন্য। কোথা থেকে কি হইল ঠাউর করিতে অপারগ হইল সে। আর তার ঘুম আসে না, উল্টে বুকের ওপর কাঁকড়াবিছে পায়চারি করে। কোথায় মেটালিকা? কোথায় লিঙ্কিন পার্ক? কোথায় চন্দ্রবিন্দু? তার ষ্টেজে কালো চশমা পড়ে অঞ্জন দত্ত আসেন। ঈষৎ টলতে টলতে রাজেশ খান্না আসেন কিশোর বাবু কে সঙ্গে নিয়ে। কি এমন তার অনন্ত দুঃখের হেতু সে খুঁজেই পায় না। বাঘের এমন অম্বল হোলো সে হালুম বলতে ভুলেই গেল প্রায়। ক্লাসের ডাইরেক্টিভ প্রিন্সিপাল অফ ষ্টেট পলিসি র বিশ্লেষণ গ্যায়া তেল বেচনে, তখন তার পেন থেকে ফোয়ারার মতন বেরোয় গদ্য কবিতার পর গদ্য কবিতা। শব্দ গুলো হতাশার, অন্তমিল বিষাদের আর একদিন তার সে সব কালজয়ী কবিতা এবং না পাঠানো চিঠির ওপর দিয়ে বিয়ে বাড়ির সাদা ধবধবে গাড়ি হুশ করে বেরিয়েও যায়। ঘটনা পরম্পরায় সেই বিষাদ তাড়িত তরুণ নিজের রক্তে বিলিরুবিন বাড়িয়ে ফ্যালে। ডাক্তারবাবু বলেন কেস জন্ডিস। মৃত্যুমুখ না হলেও বাতাবিলেবুর কোয়া আর দৈনিক পেঁপে সেদ্ধ তার সম্বিৎ ফেরায়। তার হলদেটে চোখ তাকে প্রত্যেক দিন আয়নার জানলা থেকে বলে “ধুত্তোর”। অবশেষে খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন ঘটে। গদ্যকবিতার দিন শেষ। একটি গোটা সেমিসটার ইন দা ভোগ অফ অ্যাফোরসেইড জন্ডিস। অগত্যা পড়াশোনার ডবল ধামাকা। তরুণের ভাগ্যাকাশে এই সময় আগত হন এক বিদুষী প্রফেসর। জাঁদরেল সুন্দরী। তরুণের নিতান্তই কপাল ভালো অমন ম্যাডামকে পেয়ে কারণ সবচাইতে কঠিন সাবজেক্টের নাম হলো গিয়ে সোশিওলজি আর গোদা গোদা থিওরির ভারে দাঁত কিড় মিড় করতে করতে ভিমড়ি খাবার জোগাড় সেই তরুণের। তরুণের দেশে মর্কট শিক্ষাবিদদের সংখ্যা এতো বেশি যে ছাগলরাও নিজস্ব জনসংখ্যার নিরিখে তাদের ঈর্ষা করবে। আইন জানতে গেলে সোশিওলজির পাঠ নিঃসন্দেহে দরকার কিন্তু তা বলে গোটা বিষয়টিকে একটি পেপারে ঢোকানোর ফল হচ্ছে আমাশার রোগীকে একসাথে চার প্লেট বিরিয়ানি গেলানো । আর সেইসব পরম জ্ঞানী সিলেবাসের ঠাকুর দেবতার জন্য এক সেমিস্টার পিছিয়ে থাকা, জন্ডিস থেকে ফিরে আসা, প্রেমে ধাক্কা খাওয়া তরুণকে গিলতে হচ্ছিল ফেমিনিজমের ইতিহাস। বিধাতার বিকট পরিহাস। তা সেই তরুণটির অবস্থা দেখে দয়াময়ী সোশিওলজির ম্যাডামের বোধহয় মায়া হয়েছিল। ম্যাডামের বদান্যতায় শেষ অব্দি পেপারটি উতরে যেতে পেরেছিল বেচারা। তবে নিকষ অন্ধকারেও জোনাকি সুলভ টুকটাক উল্লেখযোগ্যতা থাকে বৈকি। একদিন সেই তরুণের জোনাকি দর্শন হয় অ্যান্টি ফেমিনিজম নামক চ্যাপ্টারে পৌঁছে। থিওরি বোঝাতে বোঝাতে ম্যাডাম তরুণকে জিগ্যেস করে বসেন ফ্যালোসেন্ট্রিক কথার বুৎপত্তি। তখনকার দিনে হ্যালো গুগল ছিলো না। তরুণের হাঁ মুখ দেখে ঈষৎ মজা পেয়েই ম্যাডাম জানিয়েছিলেন ফ্যালোসেন্ট্রিক কথাটা ফ্যালোস থেকে এসেছে এবং একই রকম স্মিত মুখ বজায় রেখে তরুণকে জানিয়েছিলেন ফ্যালোস কথাটার মানে হচ্ছে পেনিস। এই অভুতপূর্ব জ্ঞানপ্রদয়ন পূর্বক সেদিন তরুণ বেশ লজ্জাই পেয়েছিল। এমন কিছু আহামরি ঘটনা নয়, কিন্তু ভেবে দেখবেন, পুরুষ এর সঙ্গে তান্ত্রিক মানানসই, নারীর সঙ্গে বাদ। একটা দিনও আছে পুরুষদের জন্য। বাবা দের জন্য। সেই দিন কি পুরুষদের লজ্জা পাবার দিন? গুগল কে জিগাইলে সদুত্তর পাওয়া যাবে? কি বলেন আপনারা?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।