• Uncategorized
  • 0

“পুরুষ” নিয়ে বিশেষ সংখ্যায় নবনীতা চট্টোপাধ্যায়

একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায়

সে একটা সময় ছিল …সুখের সময়| বাইরে থেকে বাড়ী ফিরে মূহুর্মূহু ফরমায়েশ জারী করা…জল দাও…শরবত আনো..গরম ডালভাতের সাথে একদম গরম আলুভাজা..লুচি ফুলকো হয়নি কেন?..আমার কাচা জামাকাপড় কোথায়..দরকারি কাগজপত্র..হাতঘড়ি. .ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি| ফরমায়েশ মেটাতে সেই কাকভোর থেকে সারাদিন পাগলের মত ছোটছুটি করে শ্রম দিচ্ছে যে শ্রমিক বধূটি তার কাজকর্মের দিকে বাজপাখির নজরে ব্যস্ত পুরুষটির মা ঠাকুমার দল| তাদের পুত্রটির যেন কোনো অসুবিধা না হয়| জীবনের অনান্য ক্ষেত্রে মা ঠাকুমা ইত্যাদির অবাধ্য হলেও এইসব ক্ষেত্রে পুরুষেরা তাদের বংশবদ হয়েই থাকতেন| কেন না এর সাথে জড়িত ছিল তাদের জীবনযাপণের সুবিধা ও আয়েশ| এই গল্প পঞ্চাশ..ষাট..সত্তর দশকের| তারো আগে আরো ভয়াবহ ছিল এই সুবিধাযাপন| গজেন্দ্র কুমার মিত্রের কলকাতার কাছেই উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই একাধিক সন্তান প্রসব ও অমানুষিক পরিশ্রমে অপুষ্টিতে মৃত বধূটির সৎকারের সময় শ্মশানেই ঠিক হয়ে যায় পুরুষটির দ্বিতীয় স্ত্রী( ভুল বললাম দ্বিতীয় শ্রমিক নারী)| অতি অল্পবয়সে বিবাহ হওয়া ও অমানবিক শারিরীক মানসিক পরিশ্রমে কাহিল অনেক বধূই অল্পবয়সে শেষ করতেন জীবন| নির্বিবাদে ধূমধাম স্বামীপ্রবর দ্বিতীয় বিবাহ করে আনতেন| আহা. এতগুলি মাতৃহারা সন্তান..ঘরসংসার..তার আয়েশ এইসব দেখাশোনা করার লোক চাই তো| ঠিক যেন আজকের থিওরি. ইউস করো ফেলে দাও|
ভারতীয় সমাজ কচ্ছপের নীতিতে বিশ্বাসী স্লো বাট স্টেডি…| নব্বইয়ের দশক থেকে বাইরের কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহন করতে শুরু করে| এই সময়ে আজকের যে পুরুষেরা শৈশব বা কৈশোর কাটিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই কমবেশি একটু সাবালক কেন না ছোটথেকেই মায়ের কর্মব্যস্ততার জন্য নিজের খাবার, জিনিষপত্র গুছিয়ে রাখা তারা শিখে গেছেন| তাই তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও কিছুটা পালটেছে| লাইফ পার্টনারের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে তারা এখন অবলীলায় ঘরে বাইরের সব কাজ সারেন| বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্ত্রীর অকালমৃত্যুতে এখন পুরুষটি একলা হলেও তার আগের সেই অসুবিধার বোধটি আর নেই| একা হাতেই সেরে ফেলেন নিজের যাবতীয় কাজকর্মগুলি এমনকি মাতৃহারা শিশুটির দায়িত্ব ও সামলান নিপুণ ভাবে|
পুরুষের এই মনোভাব পরিবর্তনের পিছনে আজকের মেয়েদের স্বচ্ছ দৃষ্টি ও চিন্তার যথার্থতা অনেকাংশে কাজ করেছে| ঘরে বাইরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে গিয়ে তারা অনেকাংশেই গন্ডী টেনে দিয়েছেন নিজেদের উপর আরোপ করা অহেতুক স্বেচ্ছাশ্রমের ভার| পুরুষকে শিখিয়েছেন সমদৃষ্টিমূলক মানসিকতার| এই উত্তরণে আখেরে পুরুষজাতির ই লাভ হয়েছে| অনেক পুরুষ ই এখন একলা জীবনে অভ্যস্ত| কারণ এই প্রজন্মের স্বামী হয়তো হায়দ্রাবাদ বা ব্যাঙ্গালোরে কর্মরত, স্ত্রী পুণে বা অন্য কোনো শহরে| অনেক সময় বিদেশেও| কাজেই এই কর্মব্যস্ততা নারী পুরুষ উভয়কেই একলা জীবনে অভ্যস্ত করে তুলেছে| আর কে না জানে জীবনে কোনো কাজ ই আটকে থাকে না| পরিস্থিতির চাপে মানুষ নিজেকে অভ্যস্ত করে নেয় অনেক অনভ্যাসের জায়গায়| আজন্মলালিত কু_অভ্যাসের বেড়াজাল ভেঙ্গে আজকের প্রজন্মের পুরুষ এখন অনেক মুক্ত মনের মানুষ|
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসে বেস্ট ম্যামি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড পুরস্কার পেয়েছেন পুণের বাসিন্দা আদিত্য তিওয়ারি যিনি একক পিতা বা মাতা হিসাবে পালন করছেন ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত একটি শিশুকে দত্তক নিয়ে| তিনি বিশ্বাস করেন যে পিতামাতা কোনো লিঙ্গ ভিত্তিক শব্দ নয়| একজন বাবা বা মায়ের একজন ভালো মানুষ হওয়া দরকার সর্বাগ্রে|
প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাসের পাথর ভেঙ্গে মুক্ত চিন্তা ও খোলা হাওয়ার প্রসারণে এগিয়ে এসেছেন যে সব একলা পুরুষ_ নারীপুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ আমরা টুপি খুলে তাকে অভিবাদন জানাই|
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।