গল্পকথায় প্রজ্ঞাপারমিতা ভট্টাচার্য

ভালোবাসা

ক’দিন ধরেই সকালবেলা মীরাদির বাবার চিৎকার ‘হ্যাট হ্যাট। এই হ্যাট। যাঃ যাঃ। এই শুনছো ঐ কোণা থেকে কঞ্চিটা দাও দেখি। শালাদের ঠ্যাং গজিয়েছে বড়। একেবারে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এসেছে। নাম নীচে নাম। ‘
পাড়ার লালির বাচ্চগুলো কী গোলগাল। সুযোগ পেলেই মীরাদিদের ছাদে উঠে পরে।
মীরাদির মা ও বাড়ির বড় জেঠি এক্কেবারে সহ্য করতে পারেনা আপদগুলোকে। পাশেই কোথাও দাঁডিয়ে দেখছিলো। এবার জেঠুকে ধমকে বললো ‘ঐ হ্যাংলা মা কে বিদেয় করো আগে। এঁটো থালা নামানোর আগে ঘুরঘুর কেঁউ কেউ। কাল মীরা কচিটা নিয়ে আসবে। বড় ছটফটে বাপু। কামড়ানো আটকাবে কে। মেরে তাড়াও। ‘
নীচের ভাড়াটে ঘরের বুঁচি বলে বসলো। ‘লালির চারটে বাচ্চা জেঠি। খুব খিদে। পাতের একটু ভাত দিলে খেয়ে সিঁড়ির তলায় বাচ্চা নিয়ে দুধ খাওয়ায়।’
‘এইসব একদম এ বাড়িতে না। খাবার দিতে হয় অন্য জায়গায় গিয়ে দেবে। বেশ নির্দেশের সুর জেঠির গলায়
যা মার দিয়েছি এ মুখো হচ্ছেনা আর। হ্যা হ্যা হ্যা। জেঠুর হাসির আওয়াজ আসছে।
ভালো রান্নার গন্ধ আসছে। জেঠি মাংস রাঁধছে। ঐ তো মীরাদি বান্টিকে নিয়ে এসে গেছে। বান্টি টলমল পায়ে একাই হাঁটছে। হাত ধরবেই না। সিঁড়িতে উঠেই সুরসুর করে হিসু করে দিলো। মীরা দি রেগে উঠতেই জেঠির গলা ‘একদম কিছু বলবিনা মীরা। কচি বাচ্চা বোঝে কী? ও তো গঙ্গাজল। কিচ্ছু হবেনা। সোনা দাদুভাই। এসো কোলে এসো। ‘
কয়েকবার বান্টিকে দেখলাম কার একটা বড় চটি পরে ছাদ পেরিয়ে সিঁড়ির মুখে আসতে। কখনও জেঠু কখনও দিদি টেনে নিয়ে গেলো।
দুপুর শেষে সবে বিকেল। বুঁচি ঢাকা চৌবাচ্চার উপরে বসে পা দুলিয়ে আচার খাচ্ছে।

এই বুঁচি দেখতো বান্টি তোদের ঘরে ঢুকেছে কিনা? ‘
বুঁচি একগাল হেসে বললো ‘পিশি বান্টি এগলা পুরো সিঁড়ি নামতে পারে গো? ‘
সে কথায় ভ্রূক্ষেপ না করে মীরাদি চেঁচিয়ে উঠলো ‘আরে দেখনা তোদের ঘরে। ছেলেটা নেই তো ‘
নাঃ নেই বুঁচিদের ঘরে। আমাদের ঘরেও এলো। নেই। পিছনের বারান্দায়। নেই।নেই কোথাও নেই।
খেয়ে উঠে জেঠিতে দিদিতে সুখ দুঃখের কথা হচ্ছিলো বান্টি তো পাশেই শোওয়া। জেঠি যে কুকুরের তাড়নায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে, কোনদিন যে মা কুকুরটা পা দেবে ভেঙে এইসব কথা চলছিলো। একটু চোখ লেগেছে কি লাগেনি। ‘ও মা মা বান্টি কোথায় গেল? ‘–‘দেখ ছাদে ঘুরছে। কোথায় যাবে দরজা দেওয়া আছে ‘—কই দরজা বন্ধ? তখন মাসী কাজ করে গেলনা। দরজা বন্ধ হয়নি ‘–‘কী সব্বোনাশ। দেখ দেখ। ‘
‘ও দিদা ও পিশি বান্টিকে কে নিয়ে এলো দেখো। ‘হুড়মুডিয়ে সদরের সামনে এসে সবাই দেখে ইয়া বড় চটি পায়ে বান্টি আর তাকে পথ থেকে তাড়িয়ে বাড়ির দরজায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে লালি।
বুল্টির সে কী হাততালি দিয়ে হাসি। আজ লালি বাড়ি থেকে দূরে বসেছিলো। ঠিক নজর করেছে শুনশান রাস্তায় কচি ছেলে বেড়িয়ে পরেছে। মা কী বসে থাকতে পারে। ঠিক পৌঁছে দিয়ে গেলো।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।