প্রবন্ধে তনিমা হাজরা

প্রেমের আইনি বেআইনি সম্মান অসম্মান

প্রেমজ(love)বা ব্যবস্থা বিবাহ (arranged) যাইহোক বিবাহ মানে দুটি নারী পুরুষের একত্রে বসবাস এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সামাজিক ও আইনমাফিক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর।
প্রেমজ বিবাহে প্রেমের সাঁকো দিয়ে যাত্রা শুরু। অনেক ক্ষেত্রে এই বিবাহ বেশ সফল আবার অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখি মাঝপথে প্রেমের শিশির বিন্দু গুলি পরিস্থিতির উষ্ণায়নের ফলে একেবারেই শুকিয়ে যায় কিংবা অন্তঃসলিলা হয়ে ওঠে, বাইরে থেকে যার আর্দ্রতার আভাস সচরাচর  মেলে না হয়ত বিরূপ পরিস্থিতিতে উদ্বেলিত হয়ে পুনর্জাগরণ ঘটলেও ঘটে অথবা সমঝোতা বা বিচ্ছেদে পরিণতিপ্রাপ্ত হয়।
তবে সবক্ষেত্রেই কি তাই? না তা নয়।তবে  ভালবাসা জিইয়ে রেখে সাথে সাথে চলা, দুটি মানসিকতার বৈপরীত্য ও সামঞ্জস্য মিশিয়ে অত্যাশ্চর্য মেলবন্ধন হওয়া,  একজন আর একজনের পরিপূরক হয়ে একসাথে বেঁচে থাকা এই জোড়ি খুব বিরল। দুটি নারী পুরুষের এই বিরল বন্ধুত্বের জন্য প্রেমজ বা ব্যবস্থা বিবাহ যেকোনো বিভাগ থেকে যোগসূত্রই একটি সফল সম্পর্কের দিগন্ত খুলে দিতে পারে।।
প্রেম বস্তুত এমনই অনুভব যা জোড়াতালি দিয়ে বানানোর বা কাঁচি দিয়ে কেটে নির্মূল করার বিষয় নয়। তাই বিবাহিত-বিবাহবহির্ভূত, আইনি-বেআইনি, সম্মানজনক-অসম্মানজনক এইসব শব্দের খেলা নেহাতই এক সামাজিক ভন্ডামি। আমাদের মন যাকে স্বীকৃতি দেয় অনেক ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের মধ্যে তাকে লুকিয়ে রাখি আবার অনেক ক্ষেত্রে তাকে প্রকাশ করে ফেলি। প্রেমের অঙ্কুরোদগমের ইতিহাস কিন্তু বলে দুটিই সমান নির্ভেজাল সত্য।
আমাদের সমাজ বিবাহিত মানসিক ও শারিরীক  সম্পর্ককেই ক্লেদহীন এবং উৎকৃষ্টতর বলে ষ্ট্যাম্প দিয়ে থাকে। এই অনুশাসনের মধ্যে সমাজকে বেঁধে রেখে আমরা ভেতরের অনেক ক্ষয়রোগকেও ধামাচাপা দিয়ে সুস্থ বলে তকমা লাগিয়ে রেখে সামাজিক পিরামিডটিকে অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করি।
আর বিবাহ বহির্ভূত দুটি নারী ও পুরুষের মানসিক ও শারিরীক সম্পর্ককে ক্লেদাক্ত এবং নিকৃষ্টতর বলে ব্যাখ্যায়িত করে থাকি। যদিও বিবাহহীন, আইনের সম্মানহীন বহু ভালবাসা যুগে যুগে নিজেদের জয় ঘোষণা করে এসেছে সদর্পেই এবং নিজ দায়িত্বেই নিজস্ব আন্তরিক বলিষ্ঠতায়।
দুটি নারী ও পুরুষের  মধ্যকার ভালবাসা আসলে একটি সুরেলা যাপন যেখানে বাদ্যযন্ত্রগুলি নিয়মিত দায়িত্বসহকারে ছন্দে বেজে ওঠে। আর এটি যখন কোনো কষ্টকর প্রয়াস নয়, এক সাবলীল, স্বতঃস্ফূর্ত ছান্দিক যাত্রা তখনই এর নাম প্রেম।।
আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিকৃষ্ট বাসনাবহুল সম্পর্কগুলিকে আমরা প্রেম আখ্যা দিয়ে ফেলি বলেই প্রকৃত প্রেম   স্থুলতা দোষে দুষ্ট হয়ে যায় এবং এর নান্দনিকতার সম্মানহানি ঘটে এবং এর স্বর্গীয়তার পরমার্থকে আমরা আইন বেআইন বিচার বিভাগ করার ঔদ্ধত্য দেখাবার ধৃষ্টতায় অপমানিত করবার দুর্জয়  সাহস পেয়ে যাই।
প্রকৃত প্রেম হলো শুধু দুটি নারী পুরুষের দীর্ঘায়িত নিজস্ব ঐকান্তিক যাপন, নিবিড় আন্তরিক সহাবস্থান, অবিচ্ছেদ্য, গভীরে প্রথিত অমোঘ টান এর মধ্যে আইনি বেআইনি সম্মান অসম্মান সামাজিক স্বীকৃতি অস্বীকৃতি বলে কোনো অনুশাসনের গন্ডি কাটার উপায় কোনোদিন কারো ছিল না আর ভবিষ্যতে থাকবেও না।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।