বিদ্যাসাগরের জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর এতদিন পরও একটি প্রশ্ন অনুচ্চারিত হয়ে আছে — তিনি কি নাস্তিক ছিলেন? কেউ কেউ সোজাসুজি বলেও ফেলেছেন তিনি নাস্তিক ছিলেন।, আর তাঁর নাস্তিক হওয়ার সপক্ষে অনেক যুক্তির অবতারণা করেছেন। অনেকে নাস্তিক -আস্তিক মাঝামাঝি একটি হাইফেন টেনেছেন অর্থাৎ মধ্যপন্থা অনুসরণ করেছেন। আবার কেউ কেউ তাঁর চরম আস্তিকতার প্রেক্ষিতে যুক্তি দিয়েছেন। তবে তিনি সত্যিই কি ছিলেন, কি মনোভাব পোষণ করতেন তা কখনোই তিনি নিজে প্রকাশ্যে স্বীকার করেন নি। শুধু তাঁর আচরণ ও কর্মপদ্ধতির দ্বারা ওপর ওপর বিচার করা হয়েছে তাঁকে, তাই ঈশ্বর, ধর্ম সম্পর্কে তাঁর সম্যক কি ধারণা ছিল তা রহস্যজালে আবৃত।
তিনি নাস্তিক ছিলেন কি না তা আলোচনা করার পূর্বে নাস্তিক কাকে বলে তা ঝালিয়ে নেওয়া ভালো। যে ব্যক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্ব, পরকাল, আত্মা এসব স্বীকার করেন না তারা নাস্তিক। ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় হিন্দু নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ বংশজাত, সংস্কৃত ভাষা, সাহিত্য, স্মৃতি সংহিতায় পন্ডিত। ধুতি, চাদর, তালতলার চটি যাঁর ভূষণ, উপবীতধারী, বোধ হবার পর থেকেই হিন্দুর নিত্যকর্ম পদ্ধতি তিনি আপন বংশের অগ্রজদের করতে দেখেছেন, সেই বিদ্যাসাগর সম্পর্কে তাঁর অনুরাগী কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য লিখেছেন, “বিদ্যাসাগর নাস্তিক ছিলেন একথা বোধহয় তোমরা জান না, যাঁহারা জানিতেন তাহারাও কিন্তু সে বিষয়কে লইয়া তাঁহার সঙ্গে কখনো বাদানুবাদে প্রবৃত্ত হন নাই।” বিহারীলাল সরকার তাঁর ‘বিদ্যাসাগর’ রচনায় লিখেছেন, “নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের বংশধর বিদ্যাসাগর, উপনয়নের পর অভ্যাস করিয়াও ব্রাহ্মণের জীবনসর্বস্ব গায়ত্রী পর্যন্ত ভুলিয়া গিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর দয়া ও করুণার বশে সনাতন ধর্মের অন্যথাচারণ করিয়াছিলেন, এমন কি উপনয়নের পর সন্ধ্যা বন্দনাদির মন্ত্রও ভুলিয়া গিয়াছিলেন।” বিহারীলালের অনুযোগ এখানে দ্রষ্টব্য। অন্যদিকে বিদ্যাসাগরের অত্যন্ত স্নেহভাজন চন্ডীচরণ বন্দোপাধ্যায় লিখছেন, ” সুক্ষ্মতররূপে পরীক্ষা করিতে দেখিতে গেলে, তাঁহার নিত্য জীবনের আচার-ব্যবহার, ক্রিয়াকলাপ সম্পন্ন আস্থাবান হিন্দুর অনুরূপ ছিল না, অপরদিকে নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের লক্ষণের পরিচয়ও কখনও পাওয়া যায় নাই।” অর্থাৎ নৈষ্ঠিক হিন্দুর আচার-ব্যবহারের প্রকাশে তাঁর যেমন খুব একটা আস্থা ছিল না, তেমনই অন্যদিকে ‘রিফর্মড হিন্দু’ অথবা প্রগতিশীল ব্রাহ্মমতের প্রতিও আকর্ষণ ছিল না।
কোনো কোনো সময় ঈশ্বর, ধর্ম এসব নিয়ে তাঁর পরিহাস দেখতে পাই। কিছু কাহিনীর উল্লেখ করা যেতেই পারে এ বিষয়ে। এক খ্রিস্টান পাদ্রি কয়েকজন বালককে Salvation বা মুক্তি কি তা বোঝাতে প্রবৃত্ত হলে পাদ্রিকে ডেকে বলেন “ও বেচারাদের ছেড়ে দিন, ওরা নিতান্ত বালক, ওদের Salvation নিয়ে চিন্তা করার সময় রয়েছে এখনও, তার চেয়ে বরং আমাকে বোঝান, আমার বয়স হয়েছে, আজ বাদে কাল মরব।” পাদ্রিসাহেব বোঝাতে এলে কিছুক্ষণের মধ্যে বিদ্যাসাগরের শ্লেষ আর বিদ্রূপের বাণে বিদ্ধ হয়ে তাঁকে অনন্ত নরকবাসের অভিশাপ দিতে দিতে পাদ্রিসাহেব সে স্থান ত্যাগ করেন। শশীভূষণ নামে ব্রাহ্ম সমাজের এক প্রচারক চাঁদমোহন মৈত্র কে বিদ্যাসাগরের বাড়ী নিয়ে গেছেন অথচ বাদুড়বাগানে বিদ্যাসাগরের বাড়ী খুঁজে পেলেন না। অথচ শশীভূষণ বাদুড়বাগানেরই বাসিন্দা। পরে ঘটনাটি বিদ্যাসাগরকে মৈত্র মশাই বললে বিদ্যাসাগর শশীভূষণকে বলেন, “এত কাছে বাস করেও তুমি বুড়ো মানুষটিকে আমার বাড়ীতে আনতে এত বেগ দিয়েছো, তবে তুমি মানুষকে কি করে পরলোকের পথ দেখাচ্ছো? এখানে থেকে এখানেই যখন তোমার এত গলযোগ, তখন তুমি কি করে সেই অজানা পথে লোক চালান দাও? তুমি বাপু ও ব্যবসা ত্বরায় ত্যাগ কর, ও তোমার কম্ম নয়।” বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ধর্ম প্রচারকের ব্রত নিলে তিনি শ্লেষোক্তি করেন “তুমি নাকি কি একটা হয়েছো?” একবার সমুদ্রে ‘স্যার জন লরেন্স’ নামে এক স্টিমার ডুবে গেলে সাত-আটশ মানুষ জলমগ্ন হয়ে মারা যায়। মুহ্যমান বিদ্যাসাগর বলেন “দুনিয়ার মালিক কি আমাদের চেয়ে নিষ্ঠুর যে নানা দেশের নানা স্থানের অসংখ্য লোককে একত্রে ডুবালেন? আমি যাহা পারিনা, তিনি পরম কারুণিক মঙ্গলময় হইয়া কেমন করিয়া ৭০০-৮০০ লোককে একত্রে ডুবাইয়া ঘরে ঘরে শোকের আগুন জ্বালিয়া দিলেন। দুনিয়ার মালিকের কি এই কাজ? এই সকল দেখিলে কেহ মালিক আছেন বলিয়া সহসা বোধ হয় না।” পরলোকবিশ্বাসী ললিতমোহন চট্টোপাধ্যায়কে বলেছিলেন “হ্যাঁ রে ললিত, আমারও পরলোক আছে নাকি?” ললিত বলেছিলেন “আছে বৈকি, আপনার এত দান, এত দয়া, আপনার পরকাল থাকিবে না তো থাকিবে কার!” একথা শুনে বিদ্যাসাগর হো হো হেসেছিলেন। কৌতুকের বশে একবার কায়স্থবন্ধু অমৃতলাল মিত্র-র ভাতের থালা থেকে কাড়াকাড়ি করে মাছের মুড়ো খেয়ে ভট্টপল্লির ভট্টাচার্যদের রোষের মুখে পড়েছিলেন। একবার মহেন্দ্র গুপ্ত (শ্রীম) তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন “আপনার হিন্দুদর্শন কেমন লাগে? সপাটে উত্তর দিয়েছিলেন তিনি “আমার তো বোধ হয় ওরা যা বুঝাতে গেছে বুঝাতে পারে নাই।” হিন্দুদর্শনের সীমা সম্বন্ধে সচেতনতা বা কখনোসখনো বেদান্ত ও সাংখ্যদর্শনকে চুলচেরা বিচক্ষণতায় ভ্রান্তদর্শন বলতেও তিনি কুণ্ঠিত হন নি। এ সমস্ত ঘটনায় ওপর ওপর দৃষ্টিপাত করলে তাঁকে নাস্তিক বলা শ্রেয় নয় কি! কিন্তু তাঁকে বিশ্লেষণ করা কি অতই সরল! তাঁর নাস্তিকতার বিরুদ্ধাচরণও কতগুলি দৃষ্টান্তর সাহায্যে করা যায়। শেষজীবনে তিনি সমাজের তথাকথিত অকৃতজ্ঞ লোকেদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে নিজ ঘরে চিঠি লিখেছেন, “যতদূর পারি নিশ্চিত হইয়া জীবনের অবশিষ্ট ভাগ নিভৃতভাবে অতিবাহিত করব। “মানসিক বিপর্যয়ের সময়ও কোথাও এই চিঠিতে ঈশ্বর সান্নিধ্যলাভের আকাঙ্খা নেই, ঈশ্বর করুণার সাহায্যে মানসিক পীড়া নিবৃত্তির কামনা চিঠিতে নেই অথচ চিঠিপত্রাদির শিরোদেশে ‘শ্রীহরি’র নাম স্মরণ করতেন, উক্ত চিঠিতেও করেছেন। জনক-জননীর দেহান্ত হলে নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ সন্তানের মতো পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মও করেছিলেন। কাশীধামে ব্রাহ্মণের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন আমার মত কাহাকেও কোনদিন বলি নাই, তবে এই কথা বলি গঙ্গাজলে যদি আপনার দেহ পবিত্র মনে করেন, শিবপূজায় যদি হৃদয়ের পবিত্রতা লাভ করেন তাহা হইলে তাহাই আপনার ধর্ম।” ‘বোধোদয়ের প্রথম সংস্করণে ‘ঈশ্বর’-এর কথা নেই, তা নিয়ে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী অনু্যোগ করলে বোধোদয়ের দ্বিতীয় সংস্করণে ঈশ্বরের কথা লেখেন। কিন্তু সে ঈশ্বর নিরাকার। ইশ্বর, ধর্ম প্রভৃতি নিয়ে অনেকেই তাঁকে প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তিনি চুপ থেকেছেন কিংবা এড়িয়ে গেছেন। তাঁর যুক্তিবাদ, স্পষ্টবাদিতা ঈশ্বর এবং ধর্মমত সম্পর্কে কোন সদুত্তর দিতে পারে নি। সেগুলির না থাকার কথা যেমন প্রকাশ করেন নি তেমনই ঈশ্বরের স্বরূপ কি একথাও জোরালো ভাবে স্বীকার করেন নি। শুধুই মৌনতা। একস্থানে বলেছেন ” এ দুনিয়ায় একজন মালিক আছেন তা বেশ বুঝি, তবে ওই পথে না চলিয়া এ পথে চলিলে নিশ্চয়ই তার প্রিয়পাত্র হইব একথা লোককে বুঝাইতে চেষ্টা করিও না। লোককে বুঝিয়ে শেষটা কি ফ্যাসাদে পড়ে যাব?” রামকৃষ্ণ সহাস্যে বিদ্যাসাগর কে প্রশ্ন করেছেন “আচ্ছা, তোমার কি ভাব? ” মৃদু হেসে তিনি বলেন, “আচ্ছা, সেকথা আপনাকে একদিন বলবো। ” জনসমক্ষে তাঁর চিন্তন তিনি প্রকাশ করেন নি, হয়তো ভেবেছেন, হয়তো সদুত্তর পান নি, চিন্তার অতল গভীরে ডুব দিয়ে কোন প্রত্যয়ে আসেন নি। আর প্রত্যয় না থাকলে আগডুব বাগডুম বলার ব্যক্তি তিনি নন। যেখানে যুক্তি কাজ করে নি তিনি চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করেছেন। তাহলে কি তিনি সংশয়বাদী ছিলেন? কারণ, কোন সিদ্ধান্তে এলে তাঁর মতো দৃঢ় মনোবলের ব্যক্তি তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার ভাবতেন না। আমরা দেখি তাঁর উইলে তিনি নানা হিতকর্মে অর্থ বরাদ্দ করলেও দেবসেবা, মন্দির প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে এক কপর্দকও ব্যয়ের জন্য নির্দেশ দেন নি। কিন্তু সংশয়বাদী বললে তাঁকে ভুল ব্যখ্যা করা হবে। ধর্মগুরু সেজে ধর্মপ্রচার বা উপদেশদানে তিনি বিরত ছিলেন মানেই তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন নি। বরং ভেবেছেন ঈশ্বর যদি থাকেন তবে তার সাধনা একান্তভাবে ব্যক্তিগত ধ্যানধারণার বস্তু। প্রচারের মাধ্যমে, বিভিন্ন পথের ভ্রান্ত দিশা দেখিয়ে সাধনার সুড়ঙ্গপথে অ-বৈজ্ঞানিকভাবে প্রেরণ করার জন্য উৎসাহী তিনি হন নি। তাঁর কাছে ঈশ্বর, ধর্ম, সাধনা বাক্য ও মনের অগোচর। যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যায় এসব প্রকাশ করা যায় না। তাহলে তাঁকে আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করবো? তাঁকে আমরা বুঝবো মানব হিতৈষণার মধ্য দিয়ে। এখানেই আসে নবজাগরণের ধারণাটি। তিনি ছিলেন ‘কালের লোক’।
উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের প্রবাহে পথিকৃৎ ছিলেন রামমোহন, তারপরেই বিদ্যাসাগর। নবজাগরণের দুটি বৈশিষ্ট্য – মানবমুখীনতা বা হিউম্যানিজিম ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বা ইনডিভিজুয়ালিজম। মানবজীবনের মহত্ব, মর্যাদা এবং স্বাধীনচিন্তার মূল্য স্বীকার করাই নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য। অন্ধ অণুকরণ নয়, আপন যুক্তি ও ভাবনার আলোকে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির মাধ্যমে বিষয়ের গভীরতার অনুধাবন ও প্রকাশ। ঈশ্বর, ধর্ম প্রভৃতির ক্ষেত্রেও গোঁড়ামিকে বর্জন করে যুক্তির সাহায্যে বিচার করাকেই শ্রেয় মনে করেছেন বিদ্যাসাগর। তাই ঈশ্বর, পরলোকের স্বরূপ সম্বন্ধে কোন ধারনায় বা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন নি বলে হয়তো মৌন থেকেছেন। কোন বাদানুবাদে প্রবৃত্ত হন নি। বরং তিনি পিথাগোরাস-এর সেই নীতিকে আশ্রয় করেছিলেন, “Man is the measure of everybody. ” তিনি আত্মনিয়োগ করেন মানবহিতৈষণায়। তার ধর্মের প্রধান ব্রত মানব প্রীতি, মানব সেবা। মানুষের দুঃখে তার প্রাণ কেঁদেছে। মানুষকে ঈশ্বরের আধার মেনে নিয়েছেন। শিবজ্ঞানে জীবসেবাকেই পরমধর্ম স্বীকার করে নিয়েছেন। মানুষের দুঃখে তাঁর আকুলতার কথা আমরা সকলেই জানি। যেখানেই মানুষের দুর্দশা, ছুটে গিয়েছেন সেখানে। সাধ্যের অতীত দান করে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। অক্লান্ত পরিশ্রমে নিজের শরীর ক্ষয় হয়েছে। এমন কি মানুষের অকৃতজ্ঞতাও তাঁকে দমন করতে পারে নি। বালবিধবাদের দুর্দশায় কেঁদেছেন, বহুবিবাহের প্রতিরোধ দ্বারা নিজের অন্তরশায়ী অগ্নিগর্ভ পৌরুষের দিব্যালোকে অর্থহীন, মূঢ় ও নির্মম সমাজের ধারাকে অযৌক্তিক ও বিনাশযোগ্য প্রমাণ করেছেন। তবে যুক্তির দ্বারা মুক্তির চেয়েও মানবপ্রেমের দ্বারা কুসংস্কারের মুক্তিকে তিনি বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন। তাই রিফর্মড হিন্দু বা পশ্চিমঘেঁষা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ -এর মতো সমাজসংস্কার নয়, মানবপ্রেমের মধ্যেই মানবকল্যানের পথে অগ্রসর হয়েছেন। হিন্দু ধর্মের আচার অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে, ঝান্ডা হাতে সংস্কার করতে নেমে পড়েন নি, প্রথাগুলি থেকে সরেও আসেন নি, আজীবন উপবীতধারী থেকে, হিন্দু আচার অনুষ্ঠান করেওছেন, কিন্তু যখনই লোকাচারের সঙ্গে মানবধর্মের, হৃদয় ধর্মের বিরোধ বেঁধেছে, তিনি হৃদয় বৃত্তিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর ধর্ম ‘মানুষের ধর্ম’, তার ঈশ্বর মানুষ, তার পূজা মানবতা।