• Uncategorized
  • 0

প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা

মোজাফফর আহমদ

জন্ম ৫আগস্ট ১৮৮৯
প্রয়াণ ১৮ডিসেম্বর ১৯৭৩

লিখেছেন – মানিক বৈরাগী

আজ কমরেড মোজাফফর আহমদ এর ৪৬তম মহাপ্রয়াণ দিবসে  পাঠস্মৃতি থেকে শ্রদ্ধা জানাই
মুক্তিকামী মানুষের পক্ষ থেকে।
তাঁকে লিখতে বসে  রেফারেন্স হিসাবে কোন বই-ই আমার হাতের কাছে নেই।উইকিপিডিয়াতেও তেমন কোন তথ্যসূত্র নাই যা আছে, তাও মনোপুতঃ হয়নি।তাই নিজ পাঠস্মৃতি ও শ্রুতি নির্ভর করে আজকের লেখা।
কমরেড মুজফফর আহমদ, ভারতের স্বাধীনতা স্বাধিকার আন্দোলন,স্বাধীনতা প্রাপ্তির অন্যতম দিকপাল। বাঙ্গালী কমরেড। জন্ম নিবাস চট্রগ্রাম (সাবেক নোয়াখালী) সন্দিপ উপজেলায়। আমৃত্যু জীবন কাটিয়েছেন নিখিল ভারতের আন্দোলন সংগ্রামের প্রয়োজনে।
ভারত স্বাধীনতা লাভের পর স্থায়ীভাবে কলকাতায় বাস করেন। প্রয়াণও কলকাতায়। পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতে যে ক’টি রাজ্যে বামফ্রন্ট বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলো তা কিন্তু কমরেড মুজফফর আহমদ -এর রাজনৈতিক অবদান।
আজ আমরা আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে সাম্যের, অসাম্প্রদায়িক, বিপ্লবী, মানবতার কবি অভিধায় ভূষিত করি,তাও কমরেড মুজফফর আহমদ এর সংস্পর্শ ফল।
পশ্চিমবঙ্গে কমরেড জ্যোতি বসু,কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কে চিনি ওনারা কমরেড মুজফফর আহমদ এর সৃষ্টি।যে ভুপেন হাজারিকাকে আমরা ভালোবাসি, তিনিও মুজফফর আহমদ এর সংস্পর্শ ধন্য।যদিওবা ভুপেন হাজারিকা  বুড়াকালে ক্ষমতার লোভে বিজেপিতে যোগদান করেন।
কমরেড মুজফফর আহমদ এর সংস্পর্শ পেয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ভারত স্বাধীনতা লাভের পরও কংগ্রেস ও বামদের যে সমন্বয় হয়েছিল অনেক বাম নেতা কিন্তু জওহর লাল নেহেরুর সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেছেন বা ভাগ নিয়েছেন। কমরেড মুজফফর আহমদ তার কোনটাই করেননি। তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলেছেন।
৬০দশকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিভক্তিতে জড়াননি।তিনি খুব দ্রুত বিপ্লবও চেয়েছেন বলে কোথাও পড়িনি। মাও চিন্তাধারা বা মাওবাদীদের গঞ্জনাও খুব সহজ ভাবে হজম করেছেন।
আবার সোভিয়েত রাশিয়ার কথায় অন্ধভাবে কলকাতায় বিনা বৃষ্টিতে ছাতা ধরেননি,কোলকাতা কসমোপলিটান শহরে।
কমরেড মুজফফর আহমদ নিজেই সি পি আই গড়েছেন। সি পি আই কে নিয়ে অপরাপর  অনেক বামপন্থী রাজনৈতিক দল নিয়ে ইস্যু ও নির্বাচন কেন্দ্রিক জোট গঠন করেন। সেই জোটের নাম বামফ্রন্ট। তার ফলাফল ভারতের পশ্চিম বঙ্গ সহ বেশ ক’টি রাজ্যে বামফ্রন্ট দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় ছিল।এখনো কয়েকটি রাজ্যে ক্ষমতার কাছাকাছি, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে।
কমরেড মোজাফফর আহমদ ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদের ভারত বিভক্তি নিয়ে যে ভাষ্য দিয়েছিলেন তা আজ বর্তমান ভারতবাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। টের পাচ্ছে পাকিস্তান।
কমরেড মোজাফফর আহমদ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ কে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন করেছিলেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অসুস্থ অবস্থায় বিবৃতি দিয়ে বামফ্রন্টের সকল কমরেডদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, লক্ষ লক্ষ শরনার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।কলকাতার মাঠে ময়দানে গণসঙ্গীত শিল্পী ও দল গুলো কেও শরনার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর গণগীতি রচনা করে গানের আয়োজন করে চাঁদা তুলতেন শরনার্থী শিবিরের জন্য।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি অসুস্থ ৬০বছর উমর তিনি লাভ করেছিলেন। তাঁর ৫৭বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
বাংলাদেশের অনেক বামপন্থী শরনার্থী ও ন্যাপ সিপিবি ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে গেরিলা কমান্ড বাহিনীকেও তিনি অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহায়তা করার নির্দেশ দেন।
আজকের এই দিনে ৬০বছর বয়সে তিনি মহাপ্রয়াণ লাভ করেন। কমরেড মোজাফফর আহমদ সোভিয়েত ইউনিয়ন এর স্রষ্টা কমরেড ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন ও কমরেড জোসেফ স্টালিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট যখন ধীরে ধীরে  কমরেড মোজাফফর আহমদ এর নীতি ও আদর্শ বিচ্যুত হতে লাগলো একপর্যায়ে তার স্থান দখল করে নিলো তৃণমূল কংগ্রেস,বিজেপি।
দুঃখের বিষয় হলো কমরেড মোজাফফর আহমদ এর প্রয়াণের খবর কলকাতার কোন পত্রিকায় ঠিক মতো প্রকাশও করেনি।এমনকি খোদ তাঁর হাতে গড়া পার্টি সিপিআইএম এর পত্রিকায় দশদিন পর খবর প্রকাশিত হয় সিঙ্গেল কলামে।
এ নিয়ে কবি সমর সেন খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। আঘাত পেয়ে একটি উপসম্পাদকীয় ও লিখেছিলেন(পাঠস্মৃতি থেকে)। কমরেড সমর সেন তাঁর প্রথম কবিতার বইটি কমরেড মোজাফফর আহমদ কে উৎসর্গ করেছিলেন।
তবে কেলকাতা মিউনিসিপ্যাল ভবনটি কমরেড জ্যোতি বসু কমরেড মুজাফফর আহমদ এর নামে নাম করেন। (পাঠস্মৃতি থেকে)।
মুজাফফর আহমদ এর দুটি বই বেশ সমাদৃত
১-আমার জীবন ও ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি
২-কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা
আজ বিশ্বের অন্যতম দুই বিপ্লবী কমরেড জোসেফ স্টালিনের জন্মদিন সাথে কমরেড মোজাফফর আহমদ এর মহাপ্রয়াণ দিবস।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে যখন পার্টি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল তখন কমরেড মোজাফফর আহমদ ও গভীর আঘাত পেয়েছিলেন।
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বাম আন্দোলনের করুণ পরিনতির দিকে তাকিয়ে বলছি,আপনারা আবারও কমরেড মোজাফফর আহমদ কে আঁকড়ে ধরুন। ক্ষমতায় আসবেন।
একই অবস্থা ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের, তারাও কমরেড মাওলানা আবুল কালাম আজাদ থেকে যখনই বিচ্যুত হয়েছে,তখনই তারা ক্ষমতা হারিয়েছে। বর্তমান ভারতীয় কংগ্রেসের এই করুণ অবস্থার জন্য মাওলানা বিচ্যুতি, মাওলানা ও তার ডায়েরিটি আমৃত্যু বন্ধু জওহরলাল নেহেরুকেই উৎসর্গ করেছিলেন কমরেড সম্বোধন করে।
দুঃখের বিষয় কমরেড মোজাফফর আহমদ এর কোন নাতি মোজাফফর আহমদ এর রাজনীতি ও দর্শনে শেষ পর্যন্ত ঠিকে থাকতে পারেনি।
ওনার জামাতা কবি আব্দুল কাদির এর অনেক অবদান বাংলা সাহিত্যে। তাঁর অনন্য অবদান হচ্ছে কবি কাজি নজরুল ইসলামের রচনা সমগ্র প্রকাশ। যা আজ বাংলা সাহিত্যের পাঠকের ঘরে ঘরে।
আজ কমরেড মোজাফফর আহমদ এর ৪৬তম মহাপ্রয়াণ দিবসে মন ও মগজ থেকে ঘেটে যা পেয়েছি তাই লিখলাম।
এ অপরাধ অমার্জনীয় প্রিয় পাঠক।
তবুও বিপ্লব স্পন্দিত বুক লিখতেই বাধ্য করলো।
কমরেড মোজাফফর আহমদ লাল সালাম, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
কমরেড মোজাফফর আহমদ জন্ম ৫আগস্ট ১৮৮৯ সনে মহাপ্রয়াণ ১৮ডিসেম্বর ১৯৭৩।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।