• Uncategorized
  • 0

বর্ণপরিচয় – Film Review

বর্ণপরিচয়, grammar of death

বাংলা টলিউডে যে কজন নতুন প্রজন্মের পরিচালকের ওপর আমার অসম্ভব ভরসা, তাদের মধ্যে একটি নাম হল মৈনাক ভৌমিক। একের পর এক,যেমন- বেডরুম, মাছ মিষ্টি মোর, টেক ওয়ান, ফ্যামিলি এলবাম এমনসব ছবি উপহার দিয়েছে যে মৈনাকের ছবির কথা হলেই এক আলাদা উচ্ছ্বাস তৈরি হয়। এবারের পুজো মরশুমে মৈনাক হঠাৎই নিজের সেফ জোন থেকে সরে গিয়ে বল নিয়ে গোলপোস্টে ঢোকানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু ব্যাপারটা যে কখন আউটসাইড হয়ে গেল তা বোঝাই গেল না। বর্তমানে একটা জিনিস লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বেশ কয়েক বছর ধরে যে সব থ্রিলার ছবি বাংলাতে তৈরি হচ্ছে তার নামকরণ কিন্তু সাহিত্য আশ্রিত। সেই শুরু ‘হইসে’ ২২শে শ্রাবন থেকে, আর তার পর পর আরো বেশ কিছু ছবি দেখতে পাওয়া গেল। যেমন, মেঘনাদবধ রহস্য, সাহেব বিবি গোলাম। খুঁজলে হয়ত আরো দু একটি পাওয়া যাবে। এবারের ছবি একেবারে সাহিত্যের ইতিহাসের ভিতকেই ধরেছে, নাম- বর্ণপরিচয়, grammar of death.
মূলতঃ ছবিটি দুর্গা পুজাের প্যান্ডেলের মতো দুটি খুঁটিতে ঝুলে আছে। এক খুঁটিতে দেখা যায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর অপঘাতে মৃত্যু হলে অর্ক (আবির) মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আক্রোশে একের পর এক খুন করতে থাকে।
আর ওপর খুঁটিতে ঝুলে রয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সবচেয়ে যোগ্য অফিসার ধনঞ্জয়, যে নিজের জীবনে একমাত্র unsolved কেস অর্কর পেছনে পড়ে গিয়ে নিজের জীবনে একা হয়ে যায়। তার জেদের জন্য তার জীবন থেকে সরে যায় তার স্ত্রী, পুত্র, একসময় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত তাকে ছেড়ে দেয়। পুরো ছবিটাই মূলতঃ এই দুই খুঁটির মধ্যেই রয়ে গেল। প্রায় পাঁচ বছর পর আবার অর্ক ফিরে আসে চোর পুলিশ খেলতে এবং সে চিঠি লিখে খেলায় আমন্ত্রণ জানায় ধনঞ্জয় কে। শুরু হল তাদের লুকোচুরি খেলা, একের পর এক খুন আর খুনের জায়গায় পাওয়া যায় পরের খুনের ক্লু। এই হল ছবির গল্পের মূল কথা। এবার আসা যাক কিছু বিচার্য বিষয়ে
গল্প না তো কালো হল, এমনকি ধূসর পর্যন্ত হয়নি। পুরো সাদা গল্প। থ্রিলারের নাম গন্ধও পেলাম না। সব ক্লু আর রেখে যাওয়া সংখ্যা দেখে কি অদ্ভুতভাবে সমস্ত অঙ্ক, পুরাণ, বেদ-বেদান্ত সব একাই ধনঞ্জয় কি সুন্দর সময়মত সেরে ফেলে, মনে হতে থাকে যেন ঈশ্বর নিজে এসে সব ক্লু খুলে খুলে দিচ্ছে। গল্প কাঁচা, আর তার চেয়েও কাঁচা ছবির চিত্রনাট্য। মৈনাক নিজেও বলেছেন যে ডার্ক নাইট ছবির প্রভাব রয়েছে চিত্রনাট্যে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হল, শুধু ডার্ক নাইট নয়, বরং ২২শে শ্রাবণ, v for vendatta, শার্লক হোমসের প্রভাবও যথেষ্ট রয়েছে। একটা দৃশ্যেও নতুন কিছু দেখতে পেলাম না। সংগীতে অনুপম রায় নিজের সত্ত্বা বজায় রেখেছেন ঠিকই কিন্তু এতবেশি গতির তারতম্যের কারণে গান ছবিকে এক কাঁটা ওপরে ওঠাতেও ব্যর্থ। এই ছবির কাঁচি যার হাতে ছিল তিনি আমার আরেক প্রিয় মানুষ, সংলাপ ভৌমিক। সে যথেষ্টই খেটেছে তা দেখে বোঝা যায়, কিন্তু যদি স্টকেই ভালো শট না থাকে তো সেক্ষেত্রে এডিটর আর কি করবে! পুরো ছবিটা আমার কাছে পেঁয়াজের মতো মনে হল। ভালো কিছুর আশায় খোলস ছাড়াতে ছাড়াতে একসময় শূন্য। তবে এই খোলস ছাড়াতে গিয়ে যে একমাত্র ঝাঁঝ পেলাম তা হল বর্তমান সময়ের দুই কিংবদন্তি অভিনেতার জুটি। যীশু নিজের চরিত্রে যথাযথ। আবির বরং কিছু কিছু জায়গায় অতিনাটকীয়তার আশ্রয় নিয়েছে। তবে এই দুই বড় শিল্পীর মাঝে পড়েও প্রিয়াঙ্কা কি সুন্দর নিজের চরিত্রের সাথে চুপচাপ গোল মেরে উঠে যায়।
বর্তমান সময়ে যেভাবে একের পর এক বিশ্বের চারিদিকে থ্রিলার সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, শর্ট তৈরি হচ্ছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আপনি এভাবে ছেলেখেলা করতে পারেননা, এটা কিন্তু সকল নির্মাতাদের বুঝতে হবে। সবশেষে বলতে অপেক্ষা রাখে না যে চরম হতাশ।

Anirban Chatterjee – জন্ম তৎকালীন বিহারের অন্তর্গত ‘কয়লার রাজধানী’ নামে পরিচিত ধনবাদ শহরে। প্রাথমিক শিক্ষা ওখানেই হয় পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের লাল মাটির দেশ পুরুলিয়ায় আসায় বাংলা সাহিত্যের সাথে পরিচয় ঘটে এবং ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায় পরিণতি পায়। সাথে নানান ভাষার সাহিত্য পড়তে শুরু করে। লেখা শুরু হয় গল্প দিয়ে। ২০০৯ সালে প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হয় লিটিল ম্যাগাজিনে। ২০১১ সালে আশাবরী প্রকাশনী থেকে প্রথম বই প্রকাশিত হয় “অনির্বাণ”, তারপর “অনুভব”। ২০১৮ সালে অনির্বাণের কয়েকটি কবিতা নিয়ে নতুন ধরার শ্রুটিপাট করার চেষ্টা করেন সতীনাথ ব্যানার্জি ও কয়েকজন আবৃত্তিশিল্পী র দল। সাহিত্যের পাশাপাশি অনির্বাণের নেশা সিনেমা। নিজে একসময় বাংলা সিনেমায় সহ- পরিচালকের কাজও করেছে এবং কয়েকটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিও করেছে। অভিনয় করে জাতীয় স্তরে পুরস্কৃত।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।