• Uncategorized
  • 0

বিলু্প্তির পথে বিশ্বখ্যাত মাটির পুতুল

কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল কি হারিয়ে যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে?নানান কারণে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য৷ এখন এই শহরের ঘূর্ণির পুতুলপট্টির শিল্পীরা মাটির বদলে অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে মূর্তি তৈরি করছেন, সেটাও আবার বড় আকারের৷ ফাইবার গ্লাস, প্লাস্টার অফ প্যারিসের ব্যবহার বেড়ে গেছে ব্যাপক ভাবে। ১২ ইঞ্চির পুতুলের বদলে চার ফুটের একটি মানব মডেল তৈরি করলে অনেক বেশি মূল্য পাওয়া যাচ্ছে৷
কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত মৃৎশিল্পী সুবীর পালের মতে ‘‘ছোট প্রতিকৃতি তৈরি করলে ভালো মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না৷ একটা ছয় ইঞ্চির পুতুল তৈরি করতে দুদিন টানা সময় লাগে৷ কিন্তু সেটা বিক্রি করে ২০০থেকে ৫০০ টাকার বেশি পাওয়া যায়না আবার সেটা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ ক্রেতারা অনেক সময় এই মূল্য দিতে চান না৷ কিন্তু, ছয় ফুটের একটি ফাইবার কাঁচের পুতুল খুব সহজ ভাবে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে যায়৷ বাণিজ্যিক কারণেই বড় মূর্তির দিকে শিল্পীরা ঝুঁকছেন৷”
পুতুলপট্টির আরেক শিল্পী সঞ্জয় সরকার বলেন, পুতুল তৈরি করে যে অর্থ লাভ হয় , তাতে সুস্থভাবে জীবন যাপন করা যায় না৷ ওটাই আঁকড়ে থাকলে অর্থাভাব মেটানো যেত না৷ তাই অন্য দিকে ঝুঁকতে হয়েছে৷” ছোট পুতুল তৈরির জন্য পরিশ্রমও অনেকটা বেশি৷ সঞ্জয়ের বক্তব্য, ‘‘একটানা বসে কাজ করতে হয়, নড়াচড়া করা যায় না৷ সূক্ষ্ম কাজ বলে চোখের উপর খুবই চাপ পড়ে৷ দৃষ্টিশক্তি আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে যায়৷ এক দিকে রোজগার কম, অন্য দিকে শরীরের ক্ষতি তাই নতুন কেউ এই কাজে আগ্রহী নয়৷”
সুবীর-এর স্টুডিওতে সারা বছর মোট যত সংখ্যা মূর্তি তৈরি হয়, ছোট পুতুল তার মাত্র ১০ শতাংশ৷ মৃৎশিল্পে নতুন যাঁরা আসছেন , তাঁদের ছোট পুতুলে আগ্রহ না থাকা সঙ্কট বাড়িয়ে তুলছে৷ যে কাজে বেশি টাকা, সেই কাজে আগ্রহী হচ্ছে এই প্রজন্ম৷ সুবীর বলেন, ‘‘ছোট ফিগারের কাজ শিখতে ১০থেকে ১৫ বছর সময় লেগে যায় কেউ এতটা সময় দিয়ে শিখতে রাজি নয়৷ নতুন ছেলেরা কাজে ঢুকে রোজগার করতে চায়৷ তাই তারা ছোট পুতুল তৈরিতে আগ্রহী নয়৷ আমাদের পর আর কেউ থাকবে না যারা নিজে হাতে এই কাজটা করতে পারবে৷”
সুবীরের মত অনুযায়ী ‘‘কর্মসংস্থানের জন্য যারা আসছে, তারা বড় মূ্র্তি তৈরি শিখতে চাইবে ৷ ছোট পুতুলের কাজ তারা শিখতে চাইলে, শেখাবেই বা কে? আমার স্টুডিয়োতপ কাউকে শেখালে আমাকেই পারিশ্রমিক দিতে হবে৷ তাই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে৷ একটি প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার, যেখানে মিনিয়েচার হিউম্যান ফিগার তৈরি শেখানোর প্রয়াস নেওয়া হবে৷ তবেই এই ঐতিহ্য বজায় থাকবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।