শীতের সাথে আমার আজন্ম মন কেমন লেগে থাকে! বিদেশের দিন গুলোতেও কনকনে ঠান্ডার রাতে একা হোস্টেলে চুপ শুয়ে থাকার সময় ভাবতাম কলোরাডো বা ট্রিনিটি নদীর জলের কথা । দেশের জীবন অনেক কিছু দিয়েছে, নতুন প্রত্যাশা, চ্যালেঞ্জ বা মন কেমন!প্রতি শীতেই অজানা অনেক কিছুই জেনেছি । বছর শেষের অফিস ব্যালকনি হোক বা সোনালী তরলের চুমুক…মন যখনই ভারী হয়ে মনকেমন,তখনই ভরিয়ে দিয়েছে। রাস্তায়,ক্যাবে, অফিসের কাঁচ,গলির ফাঁকে ফাঁকে দুরন্ত শীতেও কারো কারো মনে বা হাতের আঙ্গুলে জড়ানো বসন্ত উঁকি দিত। বেশ লাগতো, আজন্ম প্রত্যাশী দুটো মানুষের আবেশে একে অন্যকে টেনে নেওয়া । তা সে অফিস হোক বা দুর্গাপুরের অলিগলি বা পুরুলিয়ার মাঠে, সর্বত্রই।
হিংসে হত জানেন। এখনও হয়…খুব ।
তবে ভালো লাগে, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখেছি দুদিকে খুব বেশি হলে দুফুট মাত্র কিন্তু এত্তো বড় আকাশ। আর ঠোঁট ছোয়ানোর জন্য আকাশ তলা সবসময় ফাঁকা । কালকেও দেখলাম!ক্যাবের ভেতর…ট্রাফিকের লাল আর ওলা,উবেরের মাঝে মাঝে টুকরো বসন্ত। পেছন সিটের ওম ভাগের সময় কার্পণ্য করতে নেই । কলকল হাসি আর কাঁধে মাথা রাখা ভরসা গুলো ওই ভীড়ের মধ্যেও একান্ত।এফ এম থেকে ভেসে আসা গানের কলির মাঝেই অন্ধকার আর আলোর মাঝে দাঁড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখে রোদ্দুর ।
চুপ করে বসে দেখতে ভালোই লাগে,রাস্তার ভীড়ে একান্ত হতে চাওয়া দুটো হাত বা চোখের দৃষ্টি আর ঠোঁটে জিভ ছোঁয়ানো দুপুরের আলসেমি। ব্যালকনির উঁচু থেকে কোল ঘেঁষে বুকে স্থান দিতে চাওয়া মন খারাপ বা রেস্তোরার টুং টাং গেলাসের তরলে আঙ্গুল ভিজিয়ে দেওয়ার মত ইচ্ছেগুলো। সূর্যাস্ত রঙের ঠোঁট থেকে আলো শুষে নেওয়ার অদম্য ইচ্ছে গুলো যখন ক্যাবের ভেতর থেকে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে, গাড়ির ড্রাইভারের চোখে তখন বাৎসল্য বা শাসন । শরীরী প্রেম হোক বা মন কেমন,নীরব মুহূর্তে তাদের প্রশ্রয়ের হাসিটুকু অমূল্য। রাস্তার মোড়ে গাড়ি থামলে মনে হয় এই যাহ্! সময় শেষ ওদের, আরো একটু থেকে গেলে পারতো তো বা গাড়িটা একটু আস্তে চলতেও তো পারতো! হাসির সাথে আবার কবে দেখা হবে’র দৃষ্টি-প্রশ্ন,মন খারাপ করে দেয় মুহূর্তে।তখন শুধু মনে হয় ওদের ভালো হোক…