মানব সংগ্রামের কথা কই কবিতায় মানিক বৈরাগী

অভিবাদন সাধু

উদ্দাম তারুণ্য উচ্ছল স্বপ্নে বিভোর আগামী
পাহাড় সমুদ্র সমতল, নদী মেখলা, সুজলা সুফলা চারদিক
গোমট রাষ্ট্রে নরকের অন্ধকারে হায়েনার উল্লাস চারদিক।

কোথাও বসে তরুণী অনন্যানীর চোখে চোখ রাখা দায়
বসন্তের রঙ্গিন সকালে শিশির ভেজা ঘাসও আতংকিত অস্থির
রাজপথ অলিগলি পাড়া মহল্লায় নিষ্টুর নিরবতা।

তারুণ্য কি  মানে?এসব ব্যারিকেড কাঁটাতার
যারা ভেঙ্গেছিল  বৃটিশ উপনিবেশ  রাজ্য
তাদের রক্তের উত্তর পুরুষেরা ও আজ ফুটছে টগবগিয়ে
ভাংতে চায় ধর্মানুদনার  উম্মাদ রাষ্ট্রের উপনিবেশ।

উচ্ছল উজ্জ্বল স্বপ্নবাজ তরুণের জমায়েত  সবখানে
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় তারুণ্য বজ্রনিনাদ হাকছে বটতলে
মিছিল মিটিং শ্লোগান হেমাঙ্গের গানে জয়ধ্বনি তুলছে
নজরুলের বাধন হারা
“কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গেফেল করলে লোপাট ”
“এবার তোরা বাংলাছাড়” গানে গানে মাতোয়ারা
ঢাকা চট্টগ্রাম সিলেট রাজশাহী ব্যারিকেড ভাংছে
কন্ঠে  সুরে “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”
সাধু ও তাদের একজন
আরাধ্য তরুণীর স্বপ্ন চোখের স্বাধীনতা নির্মাণে
তারুণ্যের অধিকার নির্মাণে বই খাতা ফেলে
রাইফেল হাতে বনে বাঁদাড়ে ঘুরে শত্রুর খোজে।

রেসকোর্সের জনকের ঘোষণা ছুটে আলোর বেগে
ছুটে যায় পাড়া মহল্লা দুরপাহাড়ের সিলেটে
বন্ধুরা জোড়বাঁধে মাতৃমুক্তি শপতে বলিয়ান
উপরে আল্লাহ ভগবান ঈশ্বর মগজে মুহম্মদ
বুকে শেখ মুজিব

জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিব কে আনবো
বাশের লাটি তৈরি করো বাংলাদেশ স্বাধীন করো
চলে রক্তক্ষয়ী মরণপণ যুদ্ধ,মুক্তির যুদ্ধ
নয় মাসে লাখো শহীদ বীর গাজী নির্যাতিত ভগ্নী
স্বপ্ন বিভোর যোদ্ধা সাধুর স্বপ্ন ভাঙ্গে কাচের মতো
পঁচাত্তরে খুন হয় পিতা, পুড়ে স্বদেশ, বিক্রি হয় সেই যোদ্ধা
বন্ধুর তরে হারায় চোখ, বান্ধবীর তরে হারায় প্রেম।

পিতা হারানোর স্বদেশে তার আর হলোনা ঠাঁই
দিলোনা থাকার অধিকার,কেড়েনেয় মুক্তচিন্তা
নজরুল ইসলাম সাধু হারালো দেশ হারালো প্রেমিকা
প্রবাসে, পথে প্রান্তরে পরবাসে স্বজনহীনে তবুও দমেনি
ছুটেছে ইউরোপের দেশে দশে সভা সমাবেশে
স্বদেশ স্বচেতনা অবরুদ্ধ দেশের মুক্তিবারতা নিয়ে
অবরুদ্ধ বাংলাদেশের পতকা বুকে
রইলো আমৃত্যু উদার অকৃতদার সাধু
কমরেড সাধু  তোমায় জানাই লাল সালাম
লাল সবুজের পতকার অভিবাদন।
শোধন
২৯নভেম্বর ২০১৯
১৫অগ্রহায়ণ ১৪২৬
কক্সবাজার, বাংলাদেশ।

গণ হত্যা

শোণিতের জলে গা ধুঁইয়ে আমরা সভা করি
রাষ্ট্র সংঘের অধিবেশনে জাতী বিন্যাসের উদ্বেগ বাড়ে
উৎকন্ঠায় বিবৃতি দেই পুঁজি বিস্তারের।

বসে বিচার সভা, তাল গাছ আমার চাই চাই
নাহয়  ভেটো প্রদানের তোড়জোড়ের ফাকফোকরে
সাত হাজার নারী গর্ভবতি, অহিংস মন্ত্র উচ্চারণে
সব দেশে সব কালে “জোর যার  মুল্লুক তার”
মধুকরেরা  হুমড়ি খায় পদ্মাবতির রোসাঙ নগরে।

আমি পথ হারিয়েছিলাম কিতাব খানায়
তোমারা খোজেছে স্বর্গ পাতাল মর্ত্যে
আমি গুপ্ত হয়েছিলাম “মসনবী”তে।

তোমরা খোজেছ আমায় ধর্মাবলিতে
আমি হারিয়েছিলাম একাত্তরে,
তোমরা খোজেছ আমায় সভা মঞ্চে
তোমাদের সভা মঞ্চের অনল বর্ষণে
আমি জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়েছি ঢের
তবুও থামেনি তোমাদের অনল উদগিরণ।

একদা কনফুসিয়াস আমাদের প্রেরণার উৎস
মাও আমাদের প্রাণের স্বজন
আমি ধ্যান করতাম বোধিতলে
মহম্মদ আমাকে বলেছিল
কনফুসিয়াসের দেশে যেতে
ইয়েমেনে মা ও শিশু মরে সৌদির হামলায়
মহম্মদ কাঁদে,নব্য আইয়ামের বোমার আঘাতে
আমার মন কেমন কেমন করে।

আশুরার রাতে রক্ত নদির পাড়ে বসে
ব্যাবিলন কে ডেকে বলি, মঞ্চ
সাজাও রুমির
আমি আসব শায়েরি শুনতে।

আমি আর কোথাও যাব না
জাফরের মাজারে আরাকানের পথে পথে
বুদ্ধের হীন যান সংঘের মনুষ্য পোড়ার ছাই মেখে
সলিল সমাধি হবো, নাফের জলে ভেসে যাবো।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।