মানিক পাঁচালী -তে সুশোভন কাঞ্জিলাল

মানিক বাবুর এভেন্জার্স

ভারত থেকে পালিয়ে নিজের অপরাধ জগৎ সৃষ্টি করেছে কুখ্যাত অপরাধী মাগনলাল মেঘরাজ কোন অজানা এক জায়গায়। আড়ালে থেকেই নাশকতামূলক কাজ করে চলেছে সে বিদেশী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে। তার গোপন গবেষণাগারে চলছে বায়োকেমিক্যাল উইপন নিয়ে পরীক্ষা।
মাগনলাল – উইপন রেডি হুয়া রে গবেষক!
নাকি ফিরসে বানায়েগা বুড়বাক!!
গবেষক – রেডি আছে জাহাঁপনা
নাম দিয়েছি করোনা
ছড়িয়ে দিলে একটু ভাইরাস
মানবজাতির সাড়ে সর্বনাশ!
এরপর দেখতে দেখতে এই মারণ ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো। বলাইবাহুল্য বিদেশী শক্তির চক্রান্তে আর মাগনলালের মদতে।
চারিদিকে লকডাউন চলছে। বাড়িতে আর সময় কাটছে না। ফেলুদা টিভিতে খবর দেখছে। সারাক্ষন সেই এক খবর। তাই আমি ভাবলাম লালমোহন বাবুকে একটা ভিডিও কল করি। ভদ্রলোক আমার থেকেই আজকাল স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে শিখছেন। জটায়ু আমায় দেখে তো আহ্লাদে আটখানা।
জটায়ু – আরে ভায়া তপেস! কেমন আছো তোমরা? তোমার দাদা কোথায়?
ফেলুদা – এইখানেই আছি! আছেন কেমন? বাড়িতে নাপিত ডাকিয়ে চুলটা তো ভালোই কাটিয়েছেন!
জটায়ু – কি করে ধরলেন মশাই?
ফেলুদা – কানের পাশের সমান করে ছাঁটা চুলগুলো দেখে তো আপনার প্রখর রূদ্রও বলে দিতে পারত।
লালমোহন বাবু – খাসা খাসা মশাই! আচ্ছা ফেলুবাবু আপনার মগজাস্ত্র দিয়ে এই মহামারী আটকানো সম্ভব নয় কি?
ফেলুদা – দেখুন লালমোহন বাবু আমি তো আর বায়োকেমিস্ট নই যে কোরোনার ভ্যাকসিন বানাবো! তবে সিধু জ্যাঠা যেই তথ্যগুলো দিলেন তাতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এই ভাইরাস কৃত্তিম। মানুষের বানানো। আমি তদন্ত করে সেই শয়তানদের মুখোশ খুলে দিতে পারি বড়জোড়।
আমি জটায়ুকে জিজ্ঞাসা করলাম – তা কি করছেন সারাদিন বাড়িতে বসে!
জটায়ু – এই এভেন্জার্স সিরিজটা দেখছি কাল থেকে ভাই। বেশ থ্রিলিং! আচ্ছা ফেলুবাবু এভেন্জার্সরা সত্যি থাকলে আজকের এই পরিস্থিতি সামলে দিত বলুন! কত লোক মরছে! কত লোক খেতে পাচ্ছে না! কত লোক আটকে পড়েছে!
আমি বললাম – আচ্ছা ফেলুদা আমরা পারি না কিছু করতে?
ফেলুদা বলল – প্রফেসর শঙ্কুকে সঙ্গে পেলে ভালো হতো রে। ওনার আবিষ্কৃত মিরাকিউরল ব্যবহার করলেই সব রোগের মতন এই রোগেরও নিরাময় সম্ভব! ওনার আরো সব আবিষ্কার ভীষণ ভাবে কাজে লাগতো এই দুঃসময়ে। কিন্তু এই লকডাউনে গিরিডি থেকে আসবেনই বা কি করে?
আমি বললাম – গুপী বাঘাদের পেলেও তো অনেক উপকার হতো।
ফেলুদা – হ্যা রে! অভুক্ত লোকদের হাতে হাতে তালি মেরে খাওয়ার পৌঁছে দিতে পারত। যেখানে খুশি যাওয়ার ক্ষমতা তো ওদের জুতো জোড়ায় আছেই।
আমি বললাম – আর বাকি সময়ে টিভিতে গান বাজনা করে সবাইকে বাড়িতে আটকে রাখতে পারত। মনোরঞ্জনও করতো।
জটায়ু – তো সেইদিক দিয়ে আমাদের তারিণী খুড়োই বা কিসে কম জান! সারাদিন রেডিওতে বসিয়ে দিলেই হলো। সারাদিন অবিরাম গল্প বলে সবাইকে আকৃষ্ট করে রাখবেন।
ফেলুদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল – সবই তো হতে পারত। কিন্ত এখন তো কিছুই আর সম্ভব না।
জটায়ু – হোয়াই নট!
আমি ধরিয়ে দিলাম জটায়ুকে – আমাদের সৃষ্টিকর্তাই তো আর নেই। মানিকবাবু বেঁচে থাকলে..
জটায়ু – কে বলল! উনি আছেন! উনি থাকবেন! ডিপ ইন আওয়ার হার্টস!!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।