• Uncategorized
  • 0

মুক্ত গদ্যে আমিনুল ইসলাম

আলো-ছায়ার পাশাপাশি 

ছায়া দিয়ে ছায়া ঢাকা যায় না, আলোয় আলোকে স্পর্শ করা যায়।
অপেক্ষাকৃত কালো রং গুলে যায় গাঢ় কালোয়
বিস্তির্ণ আকাশ হয়ে যাওয়ার ছিল অথচ- এই সবুজ বন্ধনে জড়িয়ে পড়লাম। চকলেট-আইসক্রিম অনুপ্রবেশ রত ঠোঁটের কপাট রুখে দিতে উদ্ধত হলে, বারান্দায় নেমে আসে আলোর বন্যা। আলো মানেই কি শুধু উজ্জ্বলতা, শ্যাম বর্ণেরও আলো হয়। বিভিন্ন রঙের আলোর উদ্ভাবন হলে রেটিনার মাধ্যমে সংবাদ পৌঁছে যায় মস্তিষ্কের অপটিক নার্ভে। তখনি বাস্তব চিত্রটি দেখতে পায়। এখানে আলোচিত বিষয়টি হল আলো, সে উজ্জ্বল হোক, শ্যাম বর্ণ হোক আর রঙচঙে হোক সমস্ত আলোই বস্তুতঃ ছায়া ফেলতে সক্ষম। এই ছায়াগুলিকে যত্ন সহ তুলে রাখি ড্রয়ারে। আলো হল ক্ষমতা, আর ক্ষমতা থেকেই সৃষ্টি হয় গোষ্ঠি, আর – গোষ্ঠির রাজনীতি করনে আবির্ভাব ঘটে রাজনৈতিক দলের। পৃথিবীতে ধর্মনৈতিক ভাবেও মানুষকে ভাগ করা হয়। রাজনীতিতে ধর্মের মিশ্রণে গড়ে ওঠে অ্যান্টি-এনজাইম। মানব জাতীর লিভার ফাংশন নষ্ট করতে এর থেকে আর বিষাক্ত কিছু এমুহুর্তে নেই।
যাই হোক এখানে যে আলোর কথা বলবো সে আলো আর এই আলোর রূপ ও রং এক নয়। এ আলোর একান্ত আঙিনায় আলো ফেলে ফেলে নিজের ছায়া নিজেই দেখে বিভোর হয়ে পড়বেন অনেকেই। মাঝে মধ্যে দেখতে পাই এই আলোর আকষ্মিক ছায়া। কৃষ্ণচূড়া মেখে চিবুকের স্পর্শে জাগিয়ে তোলে শরীরের উষ্ণতা। ঘাম গড়িয়ে পড়ে কপালের চড়াই-উতড়াই।
জৈব শংসাধনে জেগে ওঠে অস্তিত্বের অন্তর্বাস।
আলো’কে একটি পার্থিব চরিত্রের রসায়নে আঁকতে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় সাবলম্বী দেহ রূপে গুরুত্ব আরোপ করার। দেহের আবির্ভাবে ছায়া সৃষ্টি অবসম্ভবী হয়ে ওঠে। আলো ও ছায়া’কে পাশাপাশিই রাখতে চাইছি, না রেখে  উপায় নেই। আসলে এখন ঠিক সাজিয়ে বলতে পারবো না প্রথম যে শব্দটি লিখেছিলাম সেটি আলো না ছায়া?
এখন ক্যানভাসে যে নারী চরিত্রদের ফুটিয়ে তুলতে হবে সেগুলিকে অবলোকন করার দায়িত্ব পাঠককুল মেনে নেবেন, সাজানোর দায়ীত্বটা নিজেই নিলাম। এখানে একটি স্বীকারোক্তি দেওয়া বাঞ্ছনীয়, যে মেক-আপের কাজে পারদর্শী নই, কিন্তু চেষ্টা করে দেখতে আপত্তি কোথায়?
একটি সুরঙ্গের ভেতর দিয়ে যুবতী ছায়া হাঁটছিল, আশ্চর্য তাকে অনুসরণ করলাম! মধুর সংস্পর্শে মৌমাছি যেমন, ঠিক সেই প্রগাঢ় আহ্বানে পিছুপিছু বাসস্টপে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে, তারপর কখন যে বাসে উঠেছিলাম বলতে পারবোনা। তাকে যতোবার দেখেছিলাম এরকম কিছু না কিছু হয়েছিল। তার সুগন্ধ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি কারণ সে বলেছিল – ‘তোমার ঈশ্বর নিরাকার’। তাই একটা নির্জন পথের বাঁকে হারিয়ে গিয়েছিল সে। ব্যাপারটা উপলব্ধি করেছিলাম অনেক কষ্টে। ঠিক তারপর থেকেই ফেলুদার স্টাইলে ঠোঁটে একবিন্দু আলো হয়ে মাঝে মধ্যেই জ্বলে ওঠে অকারণ। আসলে এই টুকরো টুকরো আলোগুলোকে একত্রিত করে একটি বড় আলোর বিচ্ছুরণ ঘটতে পারে, সম্ভাবনার কথায় বললাম। কখনো কখনো আলোগুলি ফুল হয়ে ফোটে বাগানে, তথন জীবনের সার্থকতা টের পাওয়া যায়। খুব অগুছালো হলেও, কোন ফুল কখনো শাখা থেকে ছিঁড়ে হাতে তুলিনি, এগুলো অনেকেই অক্ষমতা বলেই মানেন, এই অক্ষমতাগুলো মেনে নিয়েছি, মেনে নেওয়া অপেক্ষাকৃত ভালো মনে হয়েছে। কিছু কিছু ঘটমান বাস্তব রুঢ় হলেও মেনে নিতে পারলেই জীবন-যাপনে এক সরলতার আবির্ভাব ঘটে। যেমন সহজ-সরল জল নদী হয়ে হেঁটে যায় গ্রামগঞ্জের পাশদিয়ে এবং শীতকালে সাইবেরিয়া থেকে যেমন পাখিরা আসে এ দেশে। ঠিক তেমনি টুকরো আলোগুলো পরিযায়ী হয়ে এসেছে আবার চলেও গেছে আপন মনে। একটু একটু করে আনন্দ সঞ্চিত হয়েছে, ডিপ ফ্রিজে। আর সেভিংস অ্যাকাউন্ট জিরো ব্যালান্স হওয়ায় কোনো চাপ এযাবৎ পেতে হয়নি।
কতো আলো আকাশের তারার মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম উজ্জ্বল আলো হারিয়ে যায় চোখের থেকে।  অন্য এক আলোও ঠিক স্বভাব দোষে আড়াল হয়ে গিয়েছিল, আর সে আলোর রোশনাই এতো ক্ষীণ যে চশমার এপারে প্রবেশ করেনি।
“বাসস্টপে কিছুক্ষণ অথচ স্বপ্নে বহুক্ষণ”- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই লাইনের মতোই জীবনে আরও একবার অন্য একটি আলো এলো, এক বন্ধুর সঙ্গে। তখন বি.এ. সেকেন্ড ইয়ার (পাসকোর্স)। মেয়েটি ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়ে প্রথম কলেজে এসেছিল, পরিচয় হলো ভালো লাগল। জলের মতোই স্বচ্ছ তার আলো। আলোই আলোকিত হতে কে না চায়। দুই কি তিন দিনের কলেজ, এরই মধ্যে সে ঠিকানা নিয়েছিল। যাই হোক, ছেলে ও মেয়েকে বিশেষত আলাদা গুরুত্ব দিতে চায় না আজও। অবশ্য যেটুকু যাকে দেওয়ার ততটাতো দিতেই হয়, না দিলে ছিনিয়ে নেয় অধিকার। বেশ কিছুদিন চলে গেলে ঘটনাগুলো বিস্মৃতির পাতায় গা ঢাকা দেয়, আর নিশ্চিন্তে অন্যমনস্ক হয়ে অন্যথায় রওনা সাজায়।
এক-কি-দেড় বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, দিল্লি থেকে ফিরেছি হঠাৎ সেই আলোর সঙ্গে দেখা। টেনে হিজড়ে নিয়ে গেল স্টুডিও চিত্রায়ণে। না ছবি নয়, কিছু কথা, কিছু প্রস্তাব। ওর বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে শুনে ভেতর ভেতর একটু মন খারাপ হল, হওয়ারই কথা। গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত চলে এলো, একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া হলো, আমন্ত্রণও জানালো, বিকেলের বাসে চাপিয়েও দিলাম। ওদের বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা অনিচ্ছা দুটোই ছিল। মায়ের অনুরোধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলাম। ওদের বাড়িতেও গিয়েছিলাম, কেউ ওকে দেখতে আসেনি, সেদিন যা বলেছিল সব ওর মনগড়া। কিছু চেয়েও ছিল, আবেগ চেপে নিয়ে দেওয়া হয়ে ওঠেনি। ভেতরটা ফাঁপা হয়েগিয়েছিল কিন্তু দুঃখ হয়নি বরঞ্চ উল্টে ভালোই লেগেছিল। অনুনয় করে বলেছিল ‘যাওয়ার আগে রেজিস্ট্রি করে নাও না হলে-‘ , আসলেই তখন কোনো মানষিক প্রস্তুতিই ছিল না। ছুটি শেষ হলে, দিল্লির পথে রওনা দিয়েছিলাম, বর্ধমান স্টেশনে ছেড়েও এসেছিল আলো। খুব স্বার্থ নিয়ে, তাকে বলেছিলাম আর দেখা হবে না, ভেতরটা গুড়ো হয়ে গেলেও হাসিটা লাগিয়েই রেখেছিলাম। তারপর আর দেখাও হয়নি কখনো। গাড়ী ছেড়ে দেওয়ার পরও হাতটা অনেকক্ষণ ধরে রেখেছিল, ট্রেনের শব্দে পাও মিলিয়েছিল কিছুটা, শেষমেষ হাতটা ছাড়িয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। মা-বাবার খুব বাধ্য যে ছিলাম না তাই নয়, আবার একেবারে ‘হুজুরে-হাজির’ গোছেরও ছিলাম না। এখনো, কখনো-কখনো কানে জমে থাকা তার একান্ত কথোপকথন ব্যাথা হয়ে ফিরে এলে, পাশফিরে অন্য কথায় নিজেই যাতায়াত বদলে ফেলি। এই আলো-ছায়ার অন্তরালে নিজেকে লুকিয়ে রাখি সংগোপনে। তার পর অনেক দিন আলো হয়ে কেউ আর উদ্ভাসিত হয়নি রাতের অন্ধকারে, ঠিক অমাবশ্যার মতোই আলোহীন গুমোট অন্ধকারে নিজেই নিজেকে খুঁজেছি জোনাকির অপেক্ষায়। পতঙ্গ হয়েই আলোর বিচ্ছুরণে খুঁজে ফিরেছি নিজের ছায়া, পায়নি! পুড়ে গেছে ডানা। কোনো রকমে নতুন পালক সাজিয়ে ডানাগুলোকে আবার সতেজ করেছি, পায়রা উড়িয়ে দিয়েছি আকাশের নীলে। এই আলোর আকষ্মিক অন্তরঙ্গতায় হৃদয় পুড়ে পোড়ামাটির সুগন্ধ উঠেছে বার বার নিরলস নিরবিচ্ছিন্নতায়। কারো ক্ষতি হয়নিতো? হয়তো হ্যাঁ, নয়তো না, বস্তুত জানিনা বলাই শ্রেয়। আসলে অন্যের কষ্ট বোঝার সময় ছিলনা তখন, তাই যখন কেউ কাছে আসতে চেয়েছে নিজেকে সামলে সরিয়ে নিয়েছি দূরে। এভাবেই পুড়তে ভালো লাগতো, বিশ্বাস না হলে মোমবাতির কাছে জানা যেতে পারে। এতে যদি অপরাধ হয়ে থাকে সে অপরাধ মেনে নেওয়াটাও তখন যুদ্ধ জয়ের থেকে কোনো অংশে কম ছিল না। আসলেই ভেসে যাওয়া ব্রহ্মচারীর মতোই অনির্দিষ্ট ছিল জীবন, যাপন পদ্ধতিও সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্ছাস হতে চাইতো। তার পর যেটা ঘটে ছিল সেটাই শেষ পরিণতি হল, টুকরো টুকরো আলোগুলো একত্রিত হয়ে এক সুবিশাল আলোর ঝড় উড়ে এলো, যেন বিধাতার লিখন। মাস-ছয়েকের পরিচয় আর এক টাকায় কয়েন বুথ আজকের পার্থিব পরিচয় হয়ে উঠলো। এই আলোকে অবজ্ঞা করার দূঃসাহসিকতা ছিল না, দুর্বল ভগ্নপুরুষ হয়ে তাকে সমর্পিত করেছিলাম নিজের বিক্ষিপ্ত স্বরুপকে। তার কাছেই ঘাত প্রতিঘাতে আজও শিখে নিচ্ছি সংসারের সমস্ত রং ও সং। সং সাজার ইচ্ছে হাজার হলেও সবার মাথায় কোনো না কোনো সময় টিউমার হয়ে চাগিয়ে উঠবেই, কোনো প্রতিষেধক-এ কাজ হবে না তখন। হয়নিও, আর সারাতেও চায়নি এই অসুখ, এই অসুস্থতার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল অনন্ত সুখের মলম। নিজেকে নতুন করে প্রতিস্থাপন করতে পেরেছিলাম। এখন স্ত্রীই সর্বময় আলোর সমাহারে বানিয়েছে আকাশ,বাতাস তার সঙ্গে স্নায়ুর গভীর সংবেদন। পুরোনো তুলে রাখা আলোর ছায়াগুলোকে প্রখর রোদ অথবা বৃষ্টি আড়াল দিতে ছাতার মতোই ব্যাবহার করি। যত্নে রেখেছিলাম বলেই আজ ছায়ার আড়াল হচ্ছে। অনেকেই তাচ্ছিল্যে উড়িয়ে দেন এই সর্বময় আলো বা আলোর ছায়াগুলিকে। যখন ভেতরটা একেবারে শূন্য, ফাঁপা অনুভূত হয় ঠিক তখনই আকাশে পায়রা উড়তে দেখি, শিমুল তুলো, এরোপ্লেন, মেঘ আর নিজেও পুরোনো ডানায় ভর দিয়ে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, ভালো লাগে। কতো রং বেরঙের ফুল ফোটে, দেখে মুগ্ধ হই, এগুলোই ঠিক চেয়েছিলাম যা দেখছি চোখের সামনে। ছেলেবেলাও ফিরে পেয়েছি মেয়ের রূপে, ভাগ্য যদি থাকে এগুলো হয়তো তারই প্রতিদান। অবশ্য এগুলিকে কর্মফল হিসেবেই চিহ্নিত করি। সকলে সবকিছু সহজ-সরলভাবে মেনে নিতে পারেন না, দ্বিধাহীন মেনেছি সব।
কোনো উপদেশ ভাববেন না – শুধু কিছু টুকরো আলো-ছায়া রেখে দিলাম বালিশের পাশে, ঘুম থেকে উঠে যদি কথাগুলো কানে বাজে দেখবেন ওগুলো সব ময়ূরের ত
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।