• Uncategorized
  • 0

মুড়িমুড়কি -তে সুকান্ত ঘোষ

সুকান্ত ঘোষ, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, পৃথিবীর এদিক ওদিকে চাকুরী করে বেড়ায়। তবে নিজেকে নিমো গ্রামের ছেলে বলেই ভাবতে ভালোবাসে।

বাবুর বিয়েতে জগা

বাবুর বিয়েতে বরযাত্রী গিয়ে আমড়া পাড়ার ব্যাপারটা তো আগের বার বুঝিয়ে লিখলাম, কিন্তু তার আগে খেতে বসে যে জিনিসটা হয়েছিল সেটাও মনে হয় লিখে রাখা দরকার। তো হয়েছে কি গুটকে কচুরী দিয়ে টিফিন সাঁটিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে তো খিদে বাড়াচ্ছিলাম। এই করতে করতে এক সময় খাবার ডাক এল প্যান্ডালে। “গণেশ জননী ক্যাটারার” ছিল দায়িত্বে, ওলাইচণ্ডিতলা, শুঁড়েদূর্গাপুর নাকি কোনদিক থেকে আগত। পিছনের দিকে লাগানো ব্যানার দেখে সেরকমই মালুম পেলাম।

গুটিগুটি পায়ে সাইডের দিকে একটা টেবিলে গিয়ে ঠাঁই নিলাম – চার জনের টেবিল, আমার সাথে টেবিলে ছিল পিসির ছেলে জগা। জুত করে বসে জল দিয়ে প্লেট ধুয়ে ভেজিটেবল চপের জন্য ওয়েট করছি। ব্যাপার হল আমি তখনও মেনু কার্ড দেখি নি, কিন্তু যে বিয়ে বাড়িতে টিফিনে গুটকে কচুরী খাওয়ানো হয়েছে, সেই বিয়ে বাড়িতে প্রথম পাতে ভেজিটেবল চপ আসবে না এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। এক চামচ কাসুন্দী ঢেলে দিয়ে গেল পাতে কালো জামা পরা ক্যাটারিং ছোকরা। তার পরে এল বহু প্রতীক্ষিত সেই চপ। তবে মাল ততক্ষণে ঠান্ডা হয়ে গ্যাছে – এবং দরকোঁচা মেরে ওভাল আকৃতি দেখতে হয়ে গ্যাছে প্রায় লাল-মুখো ধেড়ে বাঁদর গুলোর বীচির মত। এখন মনযোগী পাঠক প্রশ্ন তুলতে পারেন যে লাল-মুখো বাঁদরের বীচি কেমন দেখতে হয় কেমন করে জানলাম বা সেই জিনিস নিয়ে নাড়াঘাঁটা করেছি কি? এই প্রসঙ্গে বলে রাখি আমি সত্যিই কিন্তু দীর্ঘদিন বাঁদর-দের কাছাকাছি ছিলাম ব্রুনাই -এ। বার বার তাদের তাড়া খেয়ে এবং বাড়ির বারান্দা, বাগান থেকে বাঁদর খেদিয়ে বাঁদর বিষয়ক সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট। কোন বাঁদর অ্যাগ্রেসীভ, কোন বাঁদর শান্ত, কার বীচি কেত বড়, কি রঙের হতে পারে, সে সব দূর থেকেই বলে দিতে পারি আজকাল। তবে বাঁদর বিষয়ক গল্প অন্য কোন সময়।

সেই ঠান্ডা ভেজিটেবল চপে কামড় দিয়ে জগাকে বললাম, “কি রে, বিয়ে-থা কর এবার একটা”। জগা সেই কবে মাষ্টার্স ডিগ্রী কমপ্লিট করে এখন কাপড়ের ব্যবসা সামলাচ্ছে। প্রশ্ন করেই বুঝতে পারলাম, খুব সেন্সিটিভ জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছি। জগা বলল, “আর বলো না সুকান-দা, বিয়ে যে করব মেয়ে কোথায়?” আলোচনায় যা বুঝতে পারলাম, সে বড় করুণ অবস্থা গ্রামে গঞ্জে – চাকুরী না করলে মেয়েরা বিয়ে করতে রাজী হচ্ছে না, আর সরকারী চাকুরী না করলে মেয়ের বাবারা বিয়ে দিতে রাজী হচ্ছে না। আগে থেকে প্রেমে জড়িয়ে না পড়লে ব্যবসা করছে এমন ছেলের বিয়ে হওয়া প্রায় অসম্ভব।

আর সেই অসম্ভব কেই সম্ভব করে নিয়মিতই আমার পিসতুতো বৌদি। আমার আরেক পিসির ছেলে সুবু-দার বৌ। এই যে বাবু-র বিয়ে খাচ্ছি, এই বিয়েও সম্ভব হয়েছিল বৌদির জন্য। না হলে বাবু-ও ব্যবসা করে – সূত্র মেনে বাবুর-ও বিয়ে হওয়া চাপের ছিল। বিয়ের সমন্ধ করে বেড়ানো বৌদি-র এখন হবি হয়ে গ্যাছে প্রায়। অবিবাহিত ভাই, দেওর ইত্যাদি ইত্যাদি দের বিয়ে দেবার পণ নিয়েছে বৌদি।
আমার আর জগার আলোচনা চলছে রাধাবল্লভী দিয়ে ঘুঘনী খেতে খেতে – এমন সময় দেখি বৌদি হন্তদন্ত হয়ে প্যান্ডেলে ঢুকছে একটা লোকের সাথে। আমাদের দিকেই এগিয়ে আসতে লাগল – একেবারে আমাদের টেবিলের কাছে এসে জগা-কে বৌদি বলল, “এই জগা, চট করে একটু উঠে দাঁড়াও তো”। জগাও দেখি প্রশ্ন শুনেই তথমত খেতে তড়াং করে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালো সেই যেমন সিনেমায় আমেরিকার সৈন্য গুলো ‘ইয়েস স্যার’ বলে ঠুকে দাঁড়ায় তেমন। এবার সেই তড়াং করে উঠে দাঁড়ানোয় টেবিল গ্যাছে নড়ে, প্লাষ্টিকের জলের গ্লাস গ্যাছে উলটে আমার থালায় যেখানে তখনো ঘুঘনী উদরস্থ হবার জন্য ওয়েট করছিল। সেই ঘন ঘুঘনী ডায়লিউট হয়ে তুরন্ত টেবিল দিয়ে গড়িয়ে ডিজাইনার পাঞ্জাবীর কোলে। পাঞ্জাবী সামলাতে সামলাতে শুনলাম বৌদি লোকটাকে বলছে, “দেখে নিন তা হলে ভালো করে”। আড়চোখে দেখলাম লোকটা জগা-কে আগাপাস্তালা দেখে নিচ্ছে। আর জগাও হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কেস কিছুই বুঝতে পারছি না – একটা লোক রাতের বেলায় দুম করে একটা একটা ছেলে চেয়ে চেয়ে দেখবে কেন, আর সেই ছেলেই বা হাসি হাসি মুখে থাকবে কেন। প্রায় ৪০ সেকেন্ড মত দেখাদেখি শেষে বৌদি আর সেই লোকটা পিছু ফিরে চলে গেল। যেতে যেতে গুনি বৌদি বলছে, “দেখে নিলেন তো সব ঠিক ঠাক, বলেছিলাম না আমার সব দেওর-রাই লম্বা চওড়া, সেই নিয়ে আপনাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না! তা হলে হয়ে যাবে তো?”

জগা-কে বললাম, “এ্যাই খ্যাপাচোদা, বৌদি দাঁড়াতে বলল, আর তুই আগাপাস্তালা না দেখে হুড়ুম করে দাঁড়িয়ে গেলি? ব্যাপারটা কি?” জগা বলল সে নিজের স্বার্থেই দাঁড়িয়েছে, ওই লোকটা ঘটক। বরযাত্রী আসার আগে বৌদির সাথে কথা হয়ে গিয়েছিল যে বিয়ে বাড়িতে ভালো মেয়ে দেখলেই যেন সমন্ধ চালু হয়ে যায়। বাবুর বৌ-এর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি-মেয়েকে বৌদি অলরেডি স্পট করে ফেলেছে – চেষ্টা চালাচ্ছে মোবাইল নাম্বার হাতানোর জন্য। হাতাতে পারলেই জগা-কে ট্রান্সফার করবে সেই নাম্বার এবং তারপর জগার নিজের ক্যালি। তবে সোনায় সোহাগার মতন সেই বিয়ে বাড়িতেই বৌদির দেখা হয়ে যায় চেনাশুনা এক ঘটকের সাথে। মেয়ে খোঁজার নেটওয়ার্ক আরো বাড়াবার জন্য বৌদি সেই ঘটকের সাথে কথা বলে নেয় এবং ফলত ঘটক নিজের আঁখো দেখা ছেলে যাচাই করতে আসে খাবার প্যান্ডেলে।

আমি তাও জগা-কে বললাম, “সে ঘটক ঠিক আছে, কিন্তু তাবলে তুই এমন ভাবে নিজেকে দেখাবি? মান সম্মান নেই নাকি তোর?” জগা বলল, “তোমার আর কি? গোপাল ভাঁড় পড় নি? – গরু-হারালে এমনই হয় মা”।

ফেরার সময় গাড়িতে জিজ্ঞেস করলাম – “বৌদি, তাহলে জগা-র হয়ে যাবে তো কনফার্মড?” বৌদি বলল, “হবে না মানে, স্পট করে ফেলেছি তা কটা সুন্দর মেয়েকে। তুমি তো জানো না, অমৃতা-কেও তো আমি একটা বিয়ে বাড়িতে এমন ভাবেই স্পট করেছিলাম। গিয়েই বড়-মামাকে (আমার বাবা) বলেছিলাম যে মানানসই মেয়ে পাওয়া গ্যাছে। বড়-মামা তখন বলেছিল, আমি সুকানকে ঘাঁটাতে পরব না, ইংল্যান্ডে কি একটা করছে এখন!”

আমি আর কিছু জিঞ্জেস করলাম না – আবার কি গল্প বেরিয়ে পরে বৌদির ঝুলি থেকে! তবে মনে হচ্ছে জগার গতি হয়ে যাবে – বৌদি যেমন ভাবে উঠে পরে লেগেছে! এই বছর শেষের আগেই মনে হচ্ছে ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে আবার।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।