যে যার ঘরে চলে গেলেন। হোটেলটা ভালোই। তার উপরে ঘরের চাবি নিয়ে লটারি হওয়ায় কারো কিছু বলার থাকলো না। শেষ বেঁচে থাকা রুমটায় বল্টুদা এবং বৌদি। ওদিকে রান্নার লোকজন জিনিসপত্র নামিয়ে রান্না শুরু করে দিয়েছেন। গতকাল বাসের মেঝেতে বসেই আনাজপাতি কেটে নিয়েছিলেন ওরা। প্রথমদিন সকালে বিশেষ কিছু নয়,হিং দেওয়া কচুড়ি আর আলুর তরকারি, সঙ্গে শুকনো সন্দেশ। যে যার মত ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছেন। গতরাতে কারোরই প্রায় ঘুম হয় নি বলা চলে। ধাবায় খাওয়াদাওয়া করে বাস ছাড়তেই রাত হয়ে গিয়েছিলো। তারপর আবার রাস্তায় সেই পেঁয়াজের গল্প। প্রায় মহাকাব্যের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো যাত্রাপথ।
ঘরে গিয়ে সকলে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে খাবার ঘরে এলেন। ঘুম পাচ্ছে অনেকেরই। কিন্তু প্রথম দিনের সকালটা নষ্ট করতে চান না তারা। খাওয়াদাওয়া করে বেরিয়ে পরবেন সমুদ্রের কাছে। প্রথম দিন অন্য কোথাও ট্যুর নেই। সবাই যে যার মত ঘুরে বেড়াবেন। শুধু বলে দেওয়া, দুপুরের খাওয়া,বিকেল কিম্বা রাতের খাওয়া যেন নিয়ম করে হোটেলে এসে খেয়ে যান। রান্নার ঠাকুরের রান্নার স্বাদ বড্ড ভালো। সবাই খুব খুশী। যে যার মত ঘুরতে চলে গেলেন সমুদ্রের দিকে। হনিমুনে এসেছেন যে নবদম্পতি,তারা শুধু গেলেন না। সব মিটিয়ে দিয়ে, বৌদিকে অন্য সবার সঙ্গে সমুদ্রের ধারে পাঠিয়ে বল্টুদা বাজারে গেলেন। সঙ্গে হেল্পার আরো দুজন। বল্টুদা একটা চার-পাঁচজনের টিম কলকাতা থেকে নিয়ে এসেছেন। বল্টুদার পাশে দুজন,হাতে মস্ত বড় ব্যাগ। পঞ্চাশ-ষাট জনের জন্যে দু-তিন বেলার বাজার করা,চাট্টিখানি ব্যপার নয়।
পুরীর বাজারে দরদাম করা একটু চাপের। সবাই যে বাংলা বুঝবে এমনটা নয়,বল্টুদা আবার উড়িয়া বোঝেন না। হিন্দিতে দু-পক্ষই প্রায় সমান সমান। বল্টুদা কলকাতার বাড়ির পাশের বাজারে দরদাম করে কিনতে অভ্যস্থ। এখানে ভাষা সমস্যা হওয়ায় দরদাম প্রায় জমলই না। মাছের বাজারে আবার অন্য সমস্যা। কাঁকড়া কিনেছেন বড়বড়,কিন্তু সে আবার ছাড়িয়ে দেবার লোক নেই। এখানকার বাজারে মাছ,কাঁকড়া কেটে দেবার লোক থাকে,ওখানে নেই। পেঁয়াজ বাদ দিয়ে প্রায় সব কিছুই নিলেন দু ব্যাগ ভরে। বাজার করার একটা অদ্ভুত মজা আছে,দরদাম করে বাজার করার আবার মজা অন্যরকম। দরদাম করতে পারলেননা বলে সেই মজাটুকু অধরাই থেকে গেলো বল্টুদার। কাল থেকে ঠিক করলেন স্থানীয় ভাষা জানে এমন কাউকে সঙ্গে করে বাজারে নিয়ে আসবেন।
বাজার শেষ। বল্টুদার সঙ্গে যারা গেছেন,তাদের হাতে ভারী ব্যাগ। বল্টুদা ফুরফুরে মেজাজে হেঁটে আসছেন। এই প্রথম এমন একটা ট্রাভেল এজেন্সির ভাবনাচিন্তা এসেছে বল্টুদার মাথায়। তাই সাধারণত ঘুরতে গেলে যে আলস্যটা থাকে, যে প্রকৃতি উপভোগের আবিষ্টতা থাকে, এবারের পুরী ভ্রমনে বল্টুদার কাছে সেটা কোথায় যেন অনুপস্থিত।
হোটেলে ফিরে এসেছেন বল্টুদা। রান্নার টিম সঙ্গে সঙ্গে সব আনাজপাতি,মাছ,কাঁকড়া এসব নিয়ে ধোয়াধুয়ি করে রান্নার আয়োজন শুরু করে দিলেন। বল্টুদা হোটেলের রুমে গেলেন বিশ্রাম নিতে। হোটেল প্রায় ফাঁকা। সবাই ঘুরতে গেছেন সমুদ্রের দিকে। বৌদিও গেছেন। একমাত্র মধুচন্দ্রিমায় আসা নব দম্পতি ছাড়া।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন