মেহেফিল -এ- কিসসা গদ্যে এম উমর ফারুক

ভাঙা স্বপ্ন

অনেকদিন পর আজ দেখা হচ্ছে প্রিয়তমা মেঘলার সঙ্গে। তাই ওর দেওয়া আকাশি রঙের শার্টটা পরেছে আবির। তাড়াহুড়ো করে হয়ে বাড়ির গেটে এসে দেখা হলো তিথির সঙ্গে। বাড়িওয়ালার মেয়ে তিথি।
এড়িয়ে চলার জন্য তিথিকে দেখেই সালাম দেয় আবির।
ভালো আছেন ভাইয়া?- হ্যাঁ ভালো।
তুমি?
জি ভালো। আজকেও সালাম দিলেন? আমি আপনার ছোট। তাতে কী, সালাম সবাইকেই দেওয়া যায়।
তাই?
হ্যাঁ।
কোথাও যাচ্ছেন বুঝি?
হ্যাঁ,
এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করব।
হুম দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অনেক সাজগোজ করে বের হয়েছেন আজ। প্রতিদিন তো একটা হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায়, আপনাকে দিনের শুরুতে দেখি। আবির একটু লজ্জা পেল। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই, একটু হাওয়া বাতাস খেতে বের হয় আবির। আসলে হাওয়া বাতাস না, তিথির লাগানো ফুল গাছের, ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসে। ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে দিন শুরু করলে, দিনটা অনেক ভালো যায়। মনটা অনেক পবিত্র লাগে। আর এই কাজটা ঘুমানোর সময় পরে থাকা থ্রী কোয়ার্টার পরেই করে। ঠাণ্ডার মধ্যেও তাই পরেই আসে। আর ঘ্রাণ নেবার পরে, পিছন ফিরে তিথির সঙ্গে দেখা হয়। একটা সালাম দিয়ে আবির চলে যায়। কোনোদিন টুকটাক কথা হয়।
না আসলে, ওভাবেই চলে আসি তো। আচ্ছা কাল থেকে ফুল প্যান্ট পরে বের হব সকালে।
হিহি, ওটা আপনার ইচ্ছা।
ভাইয়া, আজ কিন্তু ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসেননি।
আজ একটু ব্যস্ত ছিলাম, সকালে উঠে। আর প্রতিদিন চুরি করে তোমার গাছের ফুলের ঘ্রাণ নেই, এটাও ঠিক না।
আমার কিন্তু ভালোই লাগে ভাইয়া। আজও আসতাম, তবে তাড়াহুড়ায় আসতে পারিনি। আজ অনেকদিন পর ওর সঙ্গে, বুঝই তো। কত কাজ। কার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, প্রেমিকা?- না মানে।
হিহি, বুঝতে পারছি তো। হঠাৎ তিথির মনটা খারাপ হয়ে গেল। মুখ ভার।
আবির একটু তাড়া দেখিয়ে বলল, তিথি, আমি আসি। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ও হ্যাঁ ভাইয়া। আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে। যান তাহলে।
ভাইয়া, একটা কথা বলব?- হ্যাঁ বল।- আপনাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। আপু অনেক পছন্দ করবে। ধন্যবাদ। আর একটা কথা বলি?
হ্যাঁ বল।
আপনি প্রতিদিন আমার বাগানের, ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসবেন কিন্তু। আচ্ছা আসব। তিথি মেয়েটার চোখে জল চলে এসেছে। কোনোমতে কান্না আঁটকে রেখেছে। আবির এই চোখের জলের মানে জানে না। জানতেও চায় না। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
মেঘলা এসে আবার অপেক্ষা করবে। আবির চলে গেল অনেক দ্রুত।
আজ সীমাহীন ভালো লাগছে আবিরের। মনের সুখের পরশ। ভীষণ পুলকিত সে।
মেঘলার সঙ্গে আজ প্রথম দেখা, আবির চলে যাচ্ছে। আর তিথি পিছন থেকে দেখছে। হয়ত হারিয়ে যাচ্ছে কিছু। বুকের ভেতর কষ্ট হচ্ছে তিথির। চোখের ভেতর ব্যথা করছে। আসলেই কিছু হারিয়ে ফেলছে তিথি রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে, ফুল গাছ গুলোর যত্ন করে তিথি অপেক্ষা করে। কখন আবির আসবে। আবির ঘুম ঘুম চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে, লুকিয়ে লুকিয়ে ফুলের ঘ্রাণ নেয়। তিথি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে। কেন যেন দেখতে অনেক ভালো লাগে, এভাবে ছেলেটাকে। ঘ্রাণ নেওয়া শেষ হলেই, আবির বের হয়ে আসে। আবির মুনাকে দেখে বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে, একটা সালাম দেয়। আবিরের এই বোকা বোকা চেহারা দেখে বড্ড হাসি পায়। কিন্তু হাসি প্রকাশ পায় না তিথির। হাসি লুকিয়ে রাখে, একটু-আধটু কথা বলে।
এভাবে কোনো দিন যে আবিরের প্রেমে পড়েছে মন জানে না তিথি। কখন যে আবিরকে ভালোবেসে ফেলেছে, টের পায়নি। অনেক দিন বলতে গিয়েও বলা হয়নি। একটা ছেলে হাফ প্যান্ট পরে, বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে। তাকে ভালোবাসি বলা যায় নাকি?
তিথির জন্মদিনে চেয়েছিল আবিরের সঙ্গে সারাদিন ঘুরবে। আবির একটা পাঞ্জাবি পরবে, যে কোনো রঙের। আর তিথি আকাশি রঙের শাড়ি। ঘুরতে ঘুরতে কোনো এক আনন্দঘন মুহূর্তে তিথি বলে দেবে আবির ভাইয়া, আপনাকে আমি ভালোবাসি। সারাজীবন এভাবে হাত ধরে থাকতে চাই? রাখবেন তো? কেন রাখবেন না? রাখতে হবে। আমি কি দেখতে অসুন্দর? কত মিষ্টি একটা মেয়ে।
তিথির মনে ডায়রিতে সাজানো এ কথাগুলো আর বলা হলো না। বুকের ভেতরের ভালোবাসা, বুকের ভেতর রয়ে গেল। ফুল গাছগুলোর ওপর খুব রাগ হচ্ছে। কেন হচ্ছে, তিথি জানে না। সব গাছ গিয়ে নষ্ট করে ফেলল। নষ্ট করে কাঁদছে তিথি। অনেক যত্নে রেখেছিল ফুল গাছগুলো। দু’চোখে ঝরছে অশ্রু। অনেক যত্নে বুকের মাঝে জমিয়ে রাখা, ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়াতে কাঁদছে। আবিরের আসতে হবে না ফুলের ঘ্রাণ নিতে। তিথি এটা চায় না আর। ভালোবাসতে সবাই পারে। ভালোবাসার কথা বলতে সবাই পারে না। কেউ বলে দেয় মনের কথা। কেউ বুঝিয়ে দেয় না বলেও। কেউ বুকের মাঝে জমিয়ে রাখে। জমিয়ে রাখতে রাখতে একদিন হারিয়ে যায় ভালোবাসা। চোখের জলে সেই ভালোবাসা ফিরে আসে না। আবির পার্কে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলার অপেক্ষায়। কয়েক বছর সম্পর্ক তার। প্রায় দু বছর পর আজ দেখা হচ্ছে। মেঘলা দু’চোখ ভরে দেখবে আবির। বলবে মনের জমানো কথা। ক্ষণপরে মেঘলা এলো। সঙ্গে একজন ছেলেকে নিয়ে। এগিয়ে গেল আবির। মুচকি হাসি দিয়ে মেঘলা বলে কেমন আছ আবির। অনেক শুকিয়ে গেছ তুমি। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে তোমার। এখনো রাত জেগে কবিতা লেখ তাই না।
শোন আবির
হ্যাঁ বলো
তোমাকে তো পরিচয় করে দেওয়া হলো না।
ও হচ্ছে অন্তর। আমার স্বামী। গত মাসে আমরা বিয়ে করেছি…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।