মেহেফিল -এ- কিসসা মুহাম্মাদ শরিফুজ্জামান বাপ্পি (কিশোর গল্প)

মধ্যবিত্ত বাবার ঈদ

ফোনের ওপাশ থেকে, রাজশাহী থেকে নীলফামারি যাবো। কত নেবেন?
শফিক সাহেবের উত্তর, চৌদ্দ হাজার পড়বে। কয় তারিখে যাবেন?
জনৈক ব্যক্তি বলল, কাল ভোরে।
শফিক সাহেব বিস্মিত, কাল তো ঈদ! কাল যাওয়া সম্ভব হবে না।
জনৈক ব্যক্তি বলল, খুবই ইমারজেন্সি। আমার শ্যালক মারা গেছে দুর্ঘটনায়। কিছু টাকা বাড়িয়ে দিলে কি যেতে পারবেন? প্লিজ জানাবেন আমাদের।
শফিক সাহেব পেশায় গাড়িচালক। বছর সাতেক আগে একটা মাইক্রোবাস তিনি কিনেছিলেন ভাড়ায় খাটানোর জন্য। সার্ভিস ভালোই দেয়। বউ-বাচ্চার শখ আবদার তো মেটানো যায়!
শফিক সাহেব ভাবতে থাকেন, চৌদ্দ হাজার ভাড়া মানে বড় একটা লভ্যাংশ থাকবে হাতে। কিন্তু তাই বলে ঈদের দিনে! ঈদের নামাজে যেতে হবে না! পরিবারের সঙ্গে সেমাই খাওয়া হবে না!
আমাকে ছাড়া ছেলে-মেয়েগুলো তো ভালোভাবে খেতেও পারবে না। প্রশ্নগুলো মাথার ভেতরে ঘোরপাক খাচ্ছে শফিক সাহেবের। পরক্ষণে ভাবল, এতো বড় অঙ্কের ভাড়া তো আর প্রতিদিন আসে না।

পশ্চিম আকাশে চাঁদের দেখা মিলেছে। কাল ঈদ। এদিকে নয়টার মধ্যেই জানাতে হবে, তিনি যেতে পারবেন কিনা। এশার নামাজের সময় হয়ে আসল। নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শফিক সাহেব।
চিন্তামগ্ন শফিক সাহেব মোবাইলটা সাইলেন্ট করতেও ভুলে গেছেন। জনৈক ব্যক্তি বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। নামাজের ডিস্টার্ব হয়েছে বেশ ভালোই। মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত তার ওপর। তিনি মাথা নিচু করে ছিলেন।
আলতো করে চোখের পানি মুছে শফিক সাহেব সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি কাল যাবেন। পরিবারের কথা ভেবে মুখে শোভা পেল মিষ্টি হাসি। কোনো এক মনীষী বলেছেন, শত কষ্টের মাঝে যে হাসি সে হাসি অনেক দামি।
ভোর চারটায় শফিক সাহেব জনৈকের বাড়িতে হাজির। ফজরের নামাজ পড়েই রওনা দিলেন৷ যেতে যেতে অনেকবার ফোন দিয়েছেন বাসায়। কষ্ট চেপে রেখে কথা বলেছেন স্বাভাবিকভাবেই। খুব তাড়াতাড়ি ফিরবেন সেটাও বলেছেন।
দেহ আর মনের যুদ্ধে সবসময় মনেরই জয় হয়। কিন্তু শফিক সাহেবের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। মন পড়ে আছে বাসায়। কিন্তু দেহ দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যে।
১২টার আগেই সেখানে পৌঁছে গেলেন। জানাজা শেষ হতেই আবার রওনা দিলেন বাসার উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যার আগেই চলে এলেন বাসায়। সন্তান ছুটে এলো কাছে। হৃদয়ে চাপা কষ্ট, কিন্তু মুখে হাসির কমতি নেই শফিক সাহেবের। স্ত্রীর চোখও জলে ছলছল করছে। সবকিছু স্বাভাবিক হতে দেরি লাগল না।
পৃথিবীর আনাচে কানাচে এভাবেই কেটে যায় মধ্যবিত্ত বাবার ঈদ। ইনারাই একমাত্র মাথা উঁচু করে বলতে পারেন, আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।