মেহেফিল -এ- শায়র ভ্রমণ কথায় জবা চৌধুরী

আইসল্যান্ড : আগুন এবং বরফের দেশ

অনেকটা ব্যস্ততা থাকে ভ্যাকেশনে যাবার আগে।  বিশেষ করে আমেরিকার বাইরে অন্য কোনো দেশে যাবার আগে। শেষ মিনিটের কিছু টেনশন থেকেই যায়। সকলের পাসপোর্ট নেওয়া হয়েছে তো? এক্সট্রা বড় সাইজের লিকুইড (পারফিউম ইত্যাদি ) হাত-ব্যাগে নেই তো? বাড়ির চাবি ? গাড়ির চাবি? ওয়াটার হিটার, AC, Heat ? এরকম কিছু চেনা-জানা প্রশ্ন ফুল-স্পীডে আমার মুখ থেকে বেরোতে থাকে অনেকটা কুইজ মাস্টারের মতো। জাভেদভাই যখন আমাদেরকে এয়ারপোর্টে নিয়ে যেতে এসে ওঁর ভ্যানে আমাদের লাগেজ তোলা শেষ করে, আর আমি “দুগ্গা দুগ্গা” বলে সিটে গিয়ে বসি — তখন গিয়ে ওই কুইজ শেষ হয়। একটা বড় শ্বাস নিই আমি নিজে, আর তারচেয়েও বড় করে শান্তির শ্বাস নেয় তৃষা আর তুতাই — আমাদের মেয়ে আর ছেলে — দু’জনে।
২০১৯ এর  জানুয়ারী মাসের তখন মাঝামাঝি। ইন্ডিয়ার ভ্যাকেশন শেষ করে আমরা সপরিবারে আটলান্টা ফিরছি। দিল্লিতে বেশ কয়েক ঘন্টা অপেক্ষার পর আমাদের আটলান্টায় ফেরার ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট। এয়ারপোর্টে ওই অপেক্ষাটা খুব কষ্টের। তার ওপর দেশ থেকে ফেরার সময় মনটাও ভালো লাগে না। লাউঞ্জে সার্ভ করা খাবার খেয়ে, টিভি দেখেও সময় যেন আর শেষ হয়না। ঠিক এমনি সময়ে তুতাইকে দেখে কিছু নিয়ে খুব চিন্তায় আছে মনে হলো। জিজ্ঞেস করতেই বললো, “ভাবছি এই সামারে আমরা কোথায় যাবো l”
হা করে রইলাম ছেলের চিন্তার কথা শুনে। লাউঞ্জের অন্য পাশে বসা স্বপনক (বর) বললাম গিয়ে সে কথা । কোথায় আশা করছিলাম ছেলেকে ডেকে বোঝাবে, পুরো পরিবার নিয়ে বারবার বেড়ানো চাট্টিখানি কথা নয় ।  স্বপন উল্টো আমাকে বললো, “Not a  bad idea !” বলেই ওর ল্যাপটপে ‘bucket list’ খুলে নিয়ে বসে পড়লো । ঠিক এভাবেই, দিল্লি এয়ারপোর্টে বসেই ঠিক হলো গরমের ছুটিতে আমরা আইসল্যান্ড বেড়াতে যাবো ।
ডেল্টা এয়ারলাইন্সের হেড-কোয়ার্টার হলো আমাদের শহর আটলান্টা। দিনভর এখানে ডেল্টার ফ্লাইট চলতে থাকে দেশের টাউনবাস সার্ভিসের মতো। তো, দুপুরের এমনি এক shuttle ফ্লাইটে, জুলাই মাসের মাঝামাঝি গরমের ছুটির শেষভাগে আমরা রওয়ানা দিলাম আইসল্যান্ড। আমরা প্রথমে গেলাম নিউইয়র্ক এবং সেখান থেকে দু’ঘন্টা পর ছিল ডেল্টারই অন্য আরেক ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট, যেটা আমাদেরকে নিয়ে গেলো আইসল্যান্ড।
নর্থ আটল্যান্টিক মহাসাগরের একটি আইল্যান্ড হলো এই আইসল্যান্ড । বলা হয়ে থাকে, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে এই ছোট্ট দেশটির গুরুত্ব অভাবনীয় । আমেরিকার ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম (EST) অনুযায়ী গরমকালে আইসল্যান্ডের সাথে সময়ের পার্থক্য থাকে চার ঘন্টার। আইসল্যান্ডের সময় অ্যাটলান্টার থেকে চার ঘন্টা আগে চলে। ডেল্টার সিটে বসেই নিয়মের রাতের ঘুম মোটামুটি শেষ করলাম। যদিও মাঝে মাঝেই বিমান-মাতাদের মিষ্টি গলার নানা অ্যানাউন্সমেন্ট-এ ঘুম ভেঙেছে। যাইহোক, প্লেনের চাকা যখন আইসল্যান্ডের মাটি ছুঁয়েছে তখন ওদেশের সকাল ছ’টা। নিরিবিলি সাদামাটা ধরণের এয়ারপোর্ট। তবে একটা জিনিস প্রথমেই আমার মন কেড়ে নিলো এয়ারপোর্টের দেওয়াল- জোড়া ওদের ট্যুরিজমের ছবিগুলো।
দুটো জিনিস আমার একদম ভালো লাগে না — মুভি দেখার আগে তার রিভিউ ঘাঁটানো আর নতুন কোনো দেশ দেখার আগে google থেকে সেই দেশের ছবিসহ বিস্তারিত মুখস্থ করে যাওয়া। আসলে মুভি দেখা আর বেড়ানো — দু’টোই আমার ভীষণ প্রিয়। যখনই কোনো নতুন দেশে যাই, ইচ্ছে করে, একটা বিস্ময় নিয়ে দেখবো  — একটা অজানা খোলা মন নিয়ে দেখবো অন্য একটা দেশকে।  কিন্তু সে হবার নয়। কপালে জোটে একটা রুটিন বকুনি l সে বকুনি আমাকে খেতেই হয় আমার বরের কাছ থেকে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া। ও সব-সময় বলে,“নতুন কোথাও যাবার আগে সেই জায়গার সব ইম্পরট্যান্ট জিনিস জেনে, খোঁজ-খবর নিয়ে তবে বেরোতে হয়”। শুনতে শুনতে বকুনিটাও আমার মুখস্থ হয়ে গেছে — কিন্তু আমার আর পরিবর্তন হলো না। যাইহোক, আমাদের ছেলে সায়ক হয়েছে ঠিক তার বাবার মতো। এক্কেবারে চলমান GPS. কোথাও যাবার আগে সেই জায়গার ক্লাইমেট থেকে শুরু করে নদী-নালা, খানা-খন্দ — সব ঠোঁটের আগায় নিয়ে বেরোয়।
এয়ারপোর্টের দেওয়ালের ছবিগুলো দেখেই তুতাইয়ের শুরু হয়ে গেলো বলা —ছবির জায়গাগুলো এয়ারপোর্ট থেকে কতটা দূরে আর, দিনের কোন সময়ে কোথায় থাকতে পারলে সবচে’ ভালো হয়। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আমাদের প্রথম স্টপ আগে থেকে বুক করে রাখা রেন্টাল- গাড়ি নেওয়া। আমি আর স্বপন নিজেরাই ড্রাইভ করবো সেভাবেই ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি নেওয়া হলো। আমাদের ভাড়া করা SUV’র ট্রাঙ্কে জিনিস-পত্র তুলে নিয়ে স্বপন ড্রাইভ করা শুরু করলো। রাজধানী রেকিয়াভিক (Reykjavik) এর এয়ারপোর্ট এরিয়া ছেড়ে রওয়ানা দিলাম আমরা শহরের দিকে।
খুব ছোট্ট এই আইল্যান্ড। কিন্তু এই ছোট্ট দেশটিতে পা রেখে অব্দি মনের ভেতরে চলছে এক্সসাইটমেন্টের তোলপাড়। জুলাই মাসে মধ্যরাতে এখানে সূর্যাস্ত হয়, আবার তিন ঘন্টা পর অর্থাৎ তিনটে বাজতেই আবার সূর্যোদয়। তার মানে একুশ ঘন্টা দিনের আলো থাকবে ! এ কথা যতবার ভাবছিলাম, আমার ধৈর্য্যের আর তর সইছিলো না, কখন রাত হবে।
প্রথমেই আমরা হোটেলে গেলাম। রুমগুলো সব ইউরোপীয়ান স্টাইলের আর ওয়ালগুলোতে আইসল্যান্ডের ঐতিহাসিক নানা কাহিনীর ওপর করা পেইন্ট। বেশ অদ্ভুত একটা অনুভূতি। জিনিসপত্র রেখে একটু ফ্রেশ হয়ে আমরা ‘ব্রেকফাস্ট বার’-এ চলে এলাম। বিশাল সে আয়োজন। বিভিন্ন রকমের ফল থেকে শুরু করে, ব্রেকফাস্টে যত কিছু আমি ভাবতে পারি — তার সবই ছিল। জানিনা লোক্যাল লোকেরা ব্র্যাকফাস্টে কি খায়। কিন্তু মনে হলো ট্যুরিস্টদের পছন্দের কথা ভেবেই সেরকম ব্যবস্থা ছিল। আমাদের জন্য অবশ্যই সেটা খুব ভালো। কারণ আমাদের চারজনের মধ্যে দু’ জন নতুন খাবার ট্রাই করতে খুব সহজে রাজি হয় না। আর বাকি দু’জন নতুন দেশের নতুন খাবার ট্রাই করে উৎসাহী। যাক, কোন দু’জন কোন দলের —এসব উল্লেখ করে বিতর্কে যেতে চাই না।
Hallgrimskirkja চার্চ ! রাস্তা থেকে ২৪৪ ফুট উঁচু এই চার্চ অনেক দূর থেকেই ট্যুরিস্টদের নজর কাড়ে । প্রথম দিনের বিকেলে যখন আমরা ওখানে গিয়ে পৌঁছলাম —- মনে হচ্ছিলো ঝকঝকে নীল আকাশের নীচে সাজানো এক টুকরো স্বর্গ ! ঠিক তার সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে Leif Erikson এর স্ট্যাচু, ১৯৩০ সালে United States এর দেওয়া একটি উপহার ।
ট্যুরিস্টদের ভিড় বাঁচিয়ে কিছু ভালো ছবি তুললো আমার বর, স্বপন । এসব শেষ হতেই ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম রাত আটটা বেজে তিরিশ মিনিট হয়ে গেছে । এখানে বেশির ভাগ রেস্টুরেন্ট রাত ন’টায় ডিনার সার্ভ করা বন্ধ করে দেয় । কাজেই সময়মতো রেস্টুরেন্টে পৌঁছতে না পারলে রাতের খাবার জুটবে না — সেটা আমাদের হোটেল থেকেই জানিয়ে দিয়েছিলো । বড় বড় পায়ে ছুটলাম তখন রাতের খাবারের সন্ধানে । আমাদের যে দু’জন নতুন কোনো খাবার ট্রাই করতে চায় না — তাদেরই একজন বড় বড় পায়ে চলতে চলতে কোথায় যাবো বুঝতে না পেরে google এর দ্বারস্থ হলো । বেরিয়ে পড়লো ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ‘Bombay Bazaar’, হাঁটা পথে মাত্র দুই ব্লক দূরে । চিকেন বিরিয়ানি, বাটার-নান আর ‘চিকেন-65’  দিয়ে রাতের খাওয়া হলো ।
নর্থ আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে Sun Voyager এর পাশে দিনের শেষ ভাগটা কাটাবো এই ছিল প্ল্যান। আইসল্যান্ডীয় ভাস্কর Jon Gunnar Arnason তাঁর এই ভাস্কর্যকে বলেছেন ‘ড্রিম বোট’ — যা ছিলো স্থানীয় লোকেদের কাছে অনাবৃত অঞ্চলের প্রতিশ্রুতি, আশা, অগ্রগতি এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন। সমুদ্রের পাড়ে Sun Voyager এর বাঁধানো জায়গা জুড়ে তখন প্রচুর ট্যুরিস্ট। রাত ন’টা নাগাদ ডিনার শেষ করে ‘মধ্যরাতের সূর্য’ দেখতে সবাই তখন ওখানে আসতে শুরু করেছে।
রাত যখন প্রায় এগারোটা, ম্যাজিকের মতো ধীরে ধীরে আকাশের রঙ পাল্টাতে লাগলো। দেখে মনে হলো কেউ তুলির ছোঁয়ায় সোনালী আর গভীর লাল মেশানো কমলা রঙ দিয়ে আকাশটাকে সাজিয়ে দিয়েছে । ওই অপূর্ব দৃশ্য দেখে মুখ থেকে প্রাণ জুড়ানো শুধু একটাই শব্দ বেরোলো, “আহ্” !
আইসল্যান্ডের আবহাওয়া একেবারেই ভরসা করার নয়। যখন তখন আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। বৃষ্টি কখনো দু’পশলা হয়ে বিদায় নিতে পারে, আবার কখনো তা চলতে পারে দিনভর। সেদিনের অবিশ্বাস্য সুন্দর বিকেলের জন্য ভগবানকে ধন্যবাদ জানালাম — অসংখ্যবার। চোখের সামনে ‘Midnight Sun’ আর তার অস্ত যাওয়া দেখে প্রায় দেড়টা নাগাদ হোটেলে ফিরলাম হৈ হৈ করতে করতে। ভোরের আলোয় আবার তখন আকাশ চেয়ে গেছে। সারাদিনের ক্লান্তি, রাতের ঘুম — কী করে যেন সব তখন উধাও। হোটেলের জানালার পর্দা সরিয়ে বসলাম খানিকক্ষণ। নিচে চলে যাওয়া রাস্তাটায় তখনও লোকের ভিড়।
ছোট্ট দেশ। ম্যাপ ধরে চলাচলের যোগ্য এরিয়া ধরে প্লানটা বানিয়েছিলো স্বপন  অত্যন্ত সুন্দর ভাবে। রাজধানী ReykJavik থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি দেখার মতো জায়গায় এক এক রাত করে ১০টি হোটেলে কাটিয়ে, ১১ দিনের দিন আবার রাজধানীতে থেকে সকালের ফ্লাইটে বাড়ি ফেরা।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ দেখার পরও, আইসল্যান্ড দেখে মনে হয়েছে এই সৌন্দর্য্য শুধু অনুভবের, একে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ তাদের নিজস্বতায় আমাদেরকে অবাক করে দিয়েছে। মানুষের তৈরী চোখ ধাঁধানো সৌন্দৰ্য্য ওখানে হয়তো খুবই বেমানানই হবে।
আইসল্যান্ডে ছুটি কাটানোর অভিজ্ঞতার সবচে’ কঠিন জিনিসটি হলো — ভীষণ এক্সসাইটেড হয়ে ফোন তুলে কাউকে বলতে পারলাম না শহরের নাম কিংবা, Falls এর নাম, Volcano কিংবা Galcier এর নাম। নামগুলো দেখতে ঠিক এরকম —- Bláskógabyggð, যেখানে সামনে দাঁড়িয়ে এনজয় করলাম Geysir. সাউথ আইসল্যান্ডের অসম্ভব সুন্দর জলপ্রপাতগুলো হলো — Seljalandsfoss, Skógafoss & Gljúfrabúi. অনেক অনেক পথ পেরোলাম শুধু পাথরের চাঁই ফেলা রাস্তা ধরে। ওরকম রাস্তায় গাড়ি চালানো আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা।
ভয়ঙ্কর বাজে ঝড়-বৃষ্টি পেয়েছিলাম আমরা Norourping যাবার পথে। খুব অল্প ভিসিবিলিটিতে প্রায় এক ঘন্টা স্বপন গাড়ি চালালো। রাস্তাগুলো খুব ছোটো। কোথাও থামার জায়গা নেই আর উল্টোদিক থেকে আসা গাড়িগুলোকে পেরোতে হচ্ছিলো ভগবানের নাম নিতে নিতে। এ ধরণের নানা অ্যাডভেঞ্চার আর চ্যালেঞ্জ আসছিলো যখন-তখন। ভয় আর ভালো-লাগার এক আশ্চর্য্য সমারোহ !
আমাদের বলিউডের নাম পৃথিবীময় ! আইসল্যান্ডের মতো দেশে যেখানে কোনো কোনো জায়গায় মানুষের চেয়ে ভেড়ার সংখ্যা বেশি, কোনো কোনো জায়গায় রাস্তায় চলা মানুষের চেয়ে জলপ্রপাতের সংখ্যা বেশি —- সেখানেও বলিউডের শাহরুখ খান আর কাজলের ‘দিলওয়ালে’ মুভির গান “রঙ দে তু মোহে গেরুয়া” অকপটে বেজে গেলো আমাদের মনে। সাউথ আইসল্যান্ডের Black Beach এ US মিলিটারির ভেঙে পড়া সংরক্ষিত ফ্লাইট আর Skogafoss Waterfalls অত্যন্ত ধার্মিক মন নিয়ে ঘুরে বেড়ালাম। “গেরুয়া” — গানটির শুটিং হয়েছিল ওই অসম্ভব সুন্দর জায়গাগুলোতে।
কোথাও volcano আবার কোথাও মাইলের পর মাইল রাস্তার দু’পাশ ধরে ফুটে থাকা ফুল। কোথাও ঝর্ণার জলের অবিরাম শব্দ, কোথাও নিঃশব্দ আইসল্যান্ডের ধ্যান ভাঙানো পাখির ডাক —- এমনি সুন্দর দেশ বোধহয় আর কোথাও পাওয়া যাবে না। Whale Watch থেকে শুধু করে ফেরীতে সাউথ আইসল্যান্ড বেড়ানো, ছেলের পছন্দে Puffin watch ট্যুর নেওয়া — সবকিছু মিলিয়ে এতো বৈচিত্র্যের মধ্যে কিছুদিন থাকার শুধু একটা তৃপ্তি।
আইসল্যান্ড দেশটাই একটা আইল্যান্ড। অন্য দেশ থেকে আমদানি করা জিনিস-পত্র দিয়েই ওদের চলা। এই কারণে খাবারের দাম ভীষণ বেশি। একই কারণে ওদেশে গিয়ে কোনো শপিংও করা গেলো না।
এতো ভালো লাগার পরও যে জিনিসটা আমাদেরকে এই ভ্যাকেশনে পদে পদে ভয়ে রেখেছে, তা হলো ওখানে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধে খুব কম। হঠাৎ প্রয়োজনে, কোনো বিপদে, ডাক্তার তো দূরের কথা, একটা ফার্মেসি খুঁজে পাওয়াও প্রায় অসম্ভব। সেই একটা ভয় আমাদের মনে ছিল সব-সময়। ওই একটি মাত্র বিষয় ছাড়া এরকম সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, নিশ্চিন্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকার অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে বিরল।
বারোদিনের দিন সকালে এয়ারপোর্টের সব ফর্ম্যালিটি শেষ করে ঘর-মুখো যাত্রা শুরু হলো। যাবার দিনের মতো এক্সসাইটমেন্ট আর কারোর চেহারাতেই ছিল না। দুপুরে পৌঁছোলাম নিউইয়র্কে। পরের ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে হলো অনেকটা সময়। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে এসে সকলেরই শুরু হলো নিয়মের চলা। মনের গভীরে তখনও চলছে আইসল্যান্ডের প্রকৃতির নানা রূপের হাতছানি দেওয়া সৌন্দৰ্য্যের এক স্লাইড -শো।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।