মেহেফিল -এ- কিসসা মোস্তফা তোফায়েল (অনুবাদ)

শেকসপিয়রের ‘জুলিয়াস সিজার’ নাটকে মার্ক অ্যান্টনির বক্তৃতা

শেকসপিয়রের ‘জুলিয়াস সিজার’ থেকে মার্ক অ্যান্টনির বক্তৃতার অনুবাদ নিচে উপস্থাপন করা হলো। লিখিত সাহিত্যে যতো বক্তৃতা আছে, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত এটি। শেকস্পিয়রের নাটকসমূহে যতো বক্তৃতা আছে, তার মধ্যে সর্বোত্তম এই বক্তৃতাটি রাজনৈতিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিতে, অশিক্ষিত ও উন্মত্ত জনতার অবিবেকী অবস্থান কুশলি বক্তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের একটি বড় জায়গা। নাটকটিতে মার্ক অ্যান্টনি যেভাবে রোম নগরীর অশিক্ষিত, অবিবেকী জনতাকে তাদের বিপক্ষ অবস্থান থেকে সপক্ষে ইউটার্ন করিয়ে নেন এবং গৃহযুদ্ধের দাবানলে তাদের নিক্ষেপ করেন, তা ইতিহাসের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বটে :
অ্যান্টনি :
বন্ধুগণ, রোমানগণ, দেশবাসীরা, আমার কথায় কান দিন – আমাকে কৃতার্থ করুন :
এখানে আমার আসা সিজারের শেষকৃত্য করতে, তার প্রশংসা করতে নয়।
নিন্দনীয় যত কর্ম মানুষরা করে, বেঁচে থাকে সেইসব তাহাদের মৃত্যুরও পরে;
প্রশংসার কাজগুলো প্রায়শই মিশে যায় তাহাদের হাড়হাড্ডির সাথে।
তা-ই হোক সিজারের বেলায়। সম্মানীয় ব্রুটাস
বলেছেন, সিজার ছিলেন ক্ষমতাগরবী :
তা-ই যদি হয়ে থাকে সেটা ছিল গুরুতর দোষ,
এবং, গুরুতর দণ্ডে তার মূল্যশোধ করেন সিজার।
আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে
ব্রুটাস এবং তার অনুগামী বন্ধুদের অনুমতি নিয়ে
( কারণ, ব্রুটাস তো সম্মানীয় জন,
এবং তারা সবাই, সবাই খুউব শ্রদ্ধাভাজন)
এসেছি তো আমি আজ সিজারের শেষকৃত্যে বক্তৃতা দিতে।
বন্ধু আমার তিনি, বিশ্বস্ত, ন্যায়নিষ্ঠ আমার বিচারে;
ব্রুটাস বলেন, তবু তিনি ছিলেন ক্ষমতাগরবি,
এবং ব্রুটাস বটে সম্মানীয়জন।
বহু রাজবন্দি বেঁধে এই রোমে আনেন সিজার,
তাহাদের মুক্তিপণ সাধারণ কোষাগার পুষ্ট করেছে।
এতেই কি মনে হয় সিজার ছিলেন খুব ক্ষমতাগরবি?
যেইমাত্র একজন সামান্য দরিদ্রজন করেছেন কষ্টে আর্তনাদ, কেঁদেছেন সিজার;
যার নাম দাম্ভিকতা সে-পদার্থ আরও বেশি শক্ত ধাতে গড়া।
ব্রুটাস তবু বলেন, সিজার ছিলেন এক ক্ষমতাগরবী,
এবং ব্রুটাস বটে সম্মানীয়জন।
আপনারা সবাই জানেন, লিউপার্কাল উৎসবের দিনে
তিন তিনবার আমি দিতে চাই তাকে এক বাদশাহী মুকুট,
তিন তিনবারই তিনি সেটা নিতে অসম্মত হন। এটাই কি ক্ষমতালিপ্সা?
ব্রুটাস বলেন তবু, সিজার ছিলেন খুবই ক্ষমতাপিপাসু,
এবং নিশ্চয়ই তিনি একজন সম্মানীয়জন।
ব্রুটাসের সব যুক্তি খণ্ডন করে দিতে বলছি না কিছু,
কিন্তু যেটুকু জানি সেটুকুই শুধু আজ বলিব এখানে।

একদা সবাই তাকে আপনারা ভালোবাসিতেন, অকারণে নয়,
কোন সে কারণ তবে শোক প্রকাশের পথে বাধা হয় আজ?
হায় রে বিচারবুদ্ধি, পলাতক তুমি আজ জঘন্য পশুদের মাঝে,
মানুষ তো ভুলে গেছে ন্যায়বোধ।
একটু বিরতি দিন, আমার সাথে থাকুন।
আমার আত্মা চলে গেছে সিজারের আত্মার কাছে,
আমাকে থামতেই হবে সেটা ফিরে না-আসা পর্যন্ত।
১ম আমজনতা : আমার মনে হয় তার কথায় অনেক যুক্তি আছে।
২য় আমজনতা : তুমি যদি সঠিকভাবে ভেবে দেখো, সিজারের অনেক বড় বড় দোষ ছিল।
৩য় আমজনতা : আসলে কি তাই?
আমার তো আশঙ্কা হয় এখন তার জায়গায় আরও খারাপ কেউ আসবে।
৪র্থ আমজনতা : তার কথাগুলো সব লক্ষ করেছ তো? তিনি মুকুটটি গ্রহণ করতে চাননি; এতেই বুঝা যায় তিনি ক্ষমতালিপ্সু ছিলেন না।
১ম আমজনতা : সেটাই যদি সত্য হয়, কিছু লোককে তো এর পরিণাম ভোগ করতেই হবে।
২য় আমজনতা : হায় পোড়া কপাল, কাঁদতে কাঁদতে ওর চোখ আগুনের মতো লাল হয়ে গেছে।
৩য় আমজনতা : রোম নগরীতে অ্যান্টনির চেয়ে গুণবান ব্যক্তি আর দ্বিতীয়টি নেই।
৪র্থ আমজনতা : ঐ দেখো, ও আবার ওর বক্তৃতা শুরু করেছে।
এই তো গতকাল মাত্র
সিজারের মুখ থেকে শব্দ মাত্র উচ্চারিত হলে
কক্ষ্যপথে চলা এই পৃথিবীর গতি, থমকে দাঁড়িয়ে যেত।
সেই তিনি এইখানে ধুলায় শায়িত,
নগণ্য মানুষও কোনো নেই তাকে সম্মান জানাতে।
হে জনতা প্রভু! সুযোগ থাকিত যদি জনচিত্ত উস্কে দেওয়ার,
রোষানলে, বিদ্রোহে আপনাদের মন-প্রাণ ক্ষেপিয়ে তোলার,
তা হলে তো সেটা হতো ব্রুটাসের প্রতি, ক্যাশিয়াসের প্রতি,
গুরুতর অন্যায়,
যাদের আপনারা মানেন সম্মানীয় জন।
আমি অবশ্যই তাদের প্রতি অন্যায় করব না। আমি বরং পছন্দ করব ওই মৃতের প্রতি অন্যায় করা, আমার নিজের প্রতি অন্যায় করা এবং আপনাদের প্রতি অন্যায় করা,
ঐসব সম্মানীয়দের প্রতি অন্যায় করার চেয়ে সেটা অনেক ভালো।
তবে দেখুন এই দানপত্রটি, সিজারের হাতের সিলমোহর অঙ্কিত,
আমি এটি পেয়েছি তার খাসকামরায়। এটি তার দানপত্র উইল।
এদেশের আমজনতা যারা তারাই কেবল এ-উইলের কথা শুনতে পারেন –
মাফ করবেন, আমি সত্যি সত্যি এটা পড়ে শোনাতে চাই না-
এটা পড়ে শোনানোমাত্র ওরা দৌড়ে যাবে, এবং সিজারের আঘাতের চিহ্নগুলিতে চুমু খাবে,
এবং তাদের হাতের রুমালে তার পবিত্র রক্ত ভিজিয়ে নেবে,
আর পেতে চাইবে তার একটিমাত্র কেশ, স্মৃতি হিসেবে,
এবং তারা তাদের নিজনিজ মৃত্যুর প্রাক্কালে হেবানামায়
লিখে দেবে
এই মূল্যবান উত্তরাধিকারের কথা
তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
৪র্থ আমজনতা : আমরা ওই উইলটা শুনতে চাই; তুমি ওটা পড়ে শোনাও, অ্যান্টনি।
সকল আমজনতা : উইল! সেই উইল! আমরা সিজারের দানপত্রের উইল শুনতে চাই।
অ্যান্টনি : আপনারা ধৈর্য ধরুন, প্রিয় বন্ধুরা। এটা অবশ্যই আমার পড়ে শোনানো ঠিক হবে না।
সিজার আপনাদের কী পরিমাণ ভালোবাসতেন, তা জানা মোটেই ঠিক হবে না।
আপনারা তো কাঠ নন, আপনারা পাথর নন, আপনারা শুধুই মানুষ;
আপনারা যেহেতু মানুষ, সিজারের উইল শোনার অর্থ হবে দাউদাউ করে আপনাদের জ্বলে ওঠা,
এটা আপনাদের পাগল করে দেবে।
এটা না জানাই ভালো যে আপনারা তার উত্তরাধিকারী হয়ে গেছেন,
যদি এ-বিষয়টা জেনে ফেলেন, তা হলে কী যে ঘটে যাবে!

৪র্থ আমজনতা : উইলটা পড়, আমরা এটা শুনবো, অ্যান্টনি।
এ-উইল তোমার পড়তেই হবে, সিজারের উইল।
অ্যান্টনি : আপনারা কি ধৈর্যধারণ করবেন? আপনারা কি একটু থামবেন?
উইলের উল্লেখ করে আমি কিছুটা বাড়াবাড়িই করে ফেলেছি।
আমার ভয় হয় আমি সম্মানীয় লোকদের অসম্মান করে ফেলেছি
যাদের ড্যাগার সিজারকে খুন করেছে; আমি এটা করতে ভয় পাই।
৪র্থ আমজনতা : ওরা তো বিশ্বাসঘাতক; সম্মানীয় কারা
সকল আমজনতা : সেই উইল, সেই দলিলটা, দানপত্রটা!
২য় আমজনতা : ওরা খল, ওরা খুনি। উইল কোথায়? উইল পড়ে শোনাও।
অ্যান্টনি : আপনারা তাহলে উইলটা পড়ে শোনাতে আমাকে বাধ্য করবেন?
তাহলে সিজারের মৃতদেহের চারিদিকে সবাই গোল হয়ে বসুন, এবং আমাকে সুযোগ দিন তাকে দেখানোর যিনি এ-উইল করে গেছেন। আমি কি নেমে আসতে পারি?
আপনারা কি আমাকে অনুমতি দেবেন?
সকল আমজনতা : নেমে এসো।
২য় আমজনতা : নামো।
(অ্যান্টনি মঞ্চ থেকে নেমে আসে)
৩য় আমজনতা : তুমি অবশ্যই আমাদের অনুমতি পাবে।
৪র্থ আমজনতা : গোল হও। সবাই গোল হয়ে দাঁড়াও।
১ম আমজনতা : কফিন থেকে সরে দাঁড়াও, লাশ থেকে সরে দাঁড়াও।
২য় আমজনতা : অ্যান্টনিকে জায়গা ছেড়ে দাও, সবচেয়ে সম্মানীয় অ্যান্টনি।
অ্যান্টনি : না, আমার গায়ের ওপর ভিড় করে দাঁড়াবেন না। সরে দাঁড়ান।
সকল আমজনতা : আরও সরে দাঁড়াও। জায়গা ছেড়ে দাও। পিছাও।
অ্যান্টনি :
চোখে যদি অশ্রু থাকে, তৈরি হোন সে অশ্রু ঝরাতে।
এই আলখেল্লাটি তো চেনেন সকলে। মনে পড়ে,
যেদিন প্রথমবার সিজার পরেন এটা, সেদিনের কথা।
বসন্তের মনোরম সন্ধ্যাবেলা, সিজারের আপন তাঁবুতে,
যেদিন নারভাই জয় করলেন তিনি।
দেখ, ঠিক এইখানে ঢুকেছিল ক্যাসিয়াস ড্যাগার;
কত বড় গর্ত এক, হিংসুটে ক্যাসকার কাজ;
এখানে ব্রুটাস হানে, অতি প্রিয় ব্রুটাস তাহার,
এবং যখন তিনি ধারালো ইস্পাত টেনে নেন,
এখানে তাকিয়ে দেখো সিজারের রক্ত কত বেগে
ছুটেছিল দরজামুখে নিশ্চিত চিনে নিতে তাকে-
এমন নির্মম আঘাত ব্রুটাসই করেছিল কিনা;
সিজারের পরমাত্মা ছিলেন এ-ব্রুটাসই-
আপনারা সবাই জানেন।
হে দেবতাগণ, তোমরা বিচার কর,
তাকে কতটা ভালোবাসতেন সিজার!
এটাই ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম আঘাত;
মহান সিজার তাকে দেখলেন ঘাতকের সেই ভঙ্গিমায়,
কৃতঘ্নতার বাহু মনে হলো দীর্ঘতর, বিশ্বাসহন্তারক এক
ধরাশায়ী করে দিল সিজারকে;
তখন বিস্ফোরণ শব্দে প্রাণ তার বের হয়ে গেল।
মাথার টোপরে তার মুখখানি লুকিয়ে লজ্জায়,
পম্পেইর মূর্তির পাদদেশে পড়িলেন ঢলে;
তখন সেখানে চলে রক্তের ঢল অবিরত,
সিজার গেলেন পড়ে।
আহা! কী ভীষণ ছিল সে পতন, প্রিয় দেশবাসী!
তখন, সে-ক্ষণে আমি, আপনারা, আমরা সবাই ধরাশায়ী,
বিদ্রোহের রক্তক্ষয়ী বন্যাস্রোত ভাসালো তাহারা।
আহা! আপনারা অশ্রুসিক্ত, বুঝি আমি, আপনারা সবে
আঘাতের এই দাগে মর্মাহত; করুণার বিন্দু অশ্রুমালা।
দয়ালু আত্মারা সব, কেন এত কান্নায় বিভোর,
সিজারের কাটাছেঁড়া আলখেল্লা স্বচক্ষে দেখে?
বরং, দেখুন এখন,
সশরীরে, স্বয়ং তাকেই এইখানে,
বিশ্বাসহন্তারক হাতে পড়ে শত ছিন্ন তিনি।
১ম আমজনতা : এ কী মর্মান্তিক দৃশ্য!
২য় আমজনতা : আহা! মহান সিজার!
৩য় আমজনতা : কী অভিশপ্ত দিন আজ!
৪র্থ আমজনতা : ওরে বিশ্বাসঘাতকের দল! ওরে খল সব!
১ম আমজনতা : ভয়াবহতম রক্তাক্ত দৃশ্য!
২য় আমজনতা : আমরা প্রতিশোধ নেবো।
সকল আমজনতা : প্রতিশোধ! ছড়িয়ে পড় চারদিকে! ওদের খুঁজে বের কর! জ্বালিয়ে দাও! আগুন জ্বালো! ওদের মেরে ফেলো! জবাই করো! একজন বিশ্বাসঘাতকও যেন রেহাই না পায়।
অ্যান্টনি : প্রিয় দেশবাসী, আপনারা থামুন।
১ম আমজনতা : চুপ কর এখন, মহান অ্যান্টনি কি বলেন, শোন।
সকল আমজনতা : আমরা তার কথা শুনবো, তিনি যা বলেন তা-ই করবো, তার সাথে জীবন দেবো।
অ্যান্টনি :
প্রিয় বন্ধুগণ, সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমি আপনাদের উত্তেজিত করতে চাই না
এমন কোনো ঝটিতি গৃহযুদ্ধের বন্যায় ঝাঁপ দিয়ে পড়বার জন্য;
যারা এ কাজটি করেছেন তারা সম্মানীয় ব্যক্তি।
আমার দুঃখ যে আমি জানি না কী ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল তাদের যে, তারা এটা করেছেন;
তারা জ্ঞানবান মানুষ, এবং সম্ভ্রান্ত; –
এবং আমার কোনো সন্দেহ নাই যে যুক্তিসঙ্গত জবাব তারা দেবেন।
বন্ধুরা, আমি সব মানুষের মন চুরি করে নিতে আসিনি।
আমি তো বক্তাও নই, যেমন ব্রুটাস,
বরং, যেমনটা আপনারা সবাই জানেন, একজন সাদামাটা ভোঁতা মানুষ আমি, যে তার বন্ধুকে ভালোবাসে,
আর এ খবরটি তারা খুব ভালোই জানে
যে-কারণে প্রকাশ্যে বক্তৃতা করার অনুমতি তারা আমাকে দিয়েছেন।
যেহেতু আমার চতুর বুদ্ধিমত্তা নেই, কথায় কৌশল নেই,
গুরুত্ব নেই, বিপ্লবের সামর্থ্য নেই, উচ্চারণ ভঙ্গিমা নেই,
বাচনিক যাদুকরী নেই
যা মানুষের রক্ত টগবগিয়ে তুলতে পারে।
আমি সোজাসাপ্টা কথা বলি।
শুধু সেটুকুই আমি আপনাদের বলেছি যা আপনারা নিজেরাই জানেন।
আমি শুধু প্রিয় সিজারের শরীরে ছুরির দাগগুলোই আপনাদের দেখিয়েছি,
এবং সেগুলোতে ভাষা দান করেছি যেন তারা আমার হয়ে কথা বলতে পারে।
আজ আমি যদি ব্রুটাস হতাম
আর ব্রুটাস যদি অ্যান্টনি হতো
তাহলে একজন অ্যান্টনি আজ আপনাদের অন্তরে ঘৃণার আগুন ছড়িয়ে দিতে পারতো,
এবং সিজারের প্রতিটি ক্ষতচিহ্নে একটি করে কণ্ঠস্বর
যোগান দিতে পারতো,
যা রোম নগরীর প্রতিটি প্রস্তরখণ্ডকে উত্তেজিত করে তুলতো বিদ্রোহের দাবানলে।

সকল আমজনতা : আমরা বিদ্রোহ করব।
১ম আমজনতা : আমরা ব্রুটাসের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেব।
৩য় আমজনতা : তাহলে বেরিয়ে পড়, এসো, এসো।
বিশ্বাসঘাতকদের খুঁজে বের করো।
অ্যান্টনি : একটু শুনুন, প্রিয় দেশবাসী, আমার আরও কিছু বক্তব্য আছে।
সকল আমজনতা : চুপ করো, থামো! সুমহান অ্যান্টনি কী বলেন, শোনো।
অ্যান্টনি : বন্ধুগণ, আপনারা কী করতে চলেছেন, তা আপনারা জানেন না!
সিজারের প্রতি আপনাদের এই ভালোবাসা কীজন্য, তা আপনাদের জানা নেই।
হায়! কী দুঃখ! তা আপনাদের অবশ্যই জানানো হবে।
আমি যে উইলের কথা আপনাদের বলেছিলাম, আপনারা ইতোমধ্যেই তা ভুলে গেছেন।
সকল আমজনতা : খুব-ই সত্য কথা – সেই উইল – তোমরা থামো, থামো, উইলটা শুনবো।
অ্যান্টনি : (একটা লিখিত কাগজ হাতে নিয়ে) এটাই সেই উইল, সিজারের নিজের হাতে সিলমোহর করা।
প্রত্যেক রোমান নাগরিককে তিনি দিয়ে গেছেন,
জনে জনে বণ্টন করে দিয়েছেন,
মাথাপিছু পঁচাত্তর ড্রাকমা।
২য় আমজনতা : মহান হৃদয় সিজার! আমরা তাকে হত্যার প্রতিশোধ নেবো।
৩য় আমজনতা : হে রাজসিক সিজার!
অ্যান্টনি : আপনারা আমার কথা ধৈর্য্য সহকারে শুনুন।
সকল আমজনতা : আপনারা চুপ করুন।
অ্যান্টনি :
এ ছাড়া গেছেন রেখে তিনি, তার ভ্রমণ বীথিকা,
পুষ্প উদ্যান তার, ছায়াঘেরা নতুন বাগান,
টাইবার নদীর এই পাড়ে। এইসব উৎসর্গ
তোমাদের প্রতি তার, আর এর উত্তরাধিকারী
তোমাদেরই সন্তানরা। উন্মুক্ত প্রমোদ বিহার,
বিনোদন উদযাপন তোমাদেরই।
সিজার এমনই শ্রেষ্ঠ; সিজারের দ্বিতীয় কি আছে?
১ম আমজনতা : কখনোই না, কখনোই না! চলো, চলো।
পবিত্র শ্মশানে গিয়ে দেবো তাকে চিতায় জ্বালিয়ে,
চিতার কাঠের দণ্ড হাতে ধরে মশাল বানিয়ে
বে-ইমান সকলের বাড়ি পুড়ে ছাই করে দেবো।
নাও, মৃতদেহ উঠিয়ে নাও।
২য় আমজনতা : আগুন নিয়ে আস।
৩য় আমজনতা : বেঞ্চিগুলো নামিয়ে ফেলো।
৪র্থ আমজনতা : ঘরের কাঠামো, জানালা, যা কিছু পাও, সব ভেঙে ফেলো!
( আমজনতা মৃতদেহ নিয়ে হুড়মুড় করে চলে যায়)
অ্যান্টনি : এখন আপনাআপনিই কাজ হবে।
অঘটন, চলো পথ, নিজের পায়েই;
তোমার যেমন খুশি, পথ বেছে নাও তবে তুমি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।