মৌমিতার কলমে এই সংখ্যার স্পেশাল গল্প

ফিফটি ফিফটি

হাতেনাতে ধরেই ফেলল বন্দনা। বহুদিন ধরে সন্দেহ হচ্ছিল, বহুদিন। “প্রচণ্ড জ্বর আজকে বোধ হয় মারা যাবে অমিতাভ”, বলে ছুটে যাওয়া হাসপাতালে । আসলে হাসপাতালে ছুটে যাওয়া না, অমিতাভ যে সময়টা জ্বরে ঘুমিয়ে থাকবে তখন তৃষার সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়া এটাই মূল কারন। আবার নামটিও খাসা, না “তৃষা”।  বন্দনা নামটা তো মৈনাকের পছন্দ হয় না। পুরনো নাম, পুরনো বৌ, পুরনো শাঁখা পলা, পুরনো সিঁদুর, পুরনো শরীর পছন্দ হবে কেন, ওই জন্য তৃষা। প্রথম প্রথম বন্দনার সন্দেহ হয়নি কিন্তু সেদিন যখন চক্রবর্তীদাদের বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোয় খেতে গিয়ে মৈনাকের শার্টে খিচুড়ি পড়ে গেছে, আর ওই অসভ্য মহিলা সামনে এসে কী  একটা ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ঘষে ঘষে রঙ তুলে দিচ্ছে শার্ট থেকে, তখনই বন্দনার সন্দেহটা জেগেছিল। আর শুধু কি তখন, সেই যে ওরা বেড়াতে গিয়েছিল চিল্কাতে , সূর্যোদয়ের আকাশ দেখেই অন্য একটা ফোন থেকে অত তাড়াতাড়ি মেসেজ। বন্দনা দু চারবার ফোনটা হাতে পেয়েছে, কিন্তু সব ডিলিটেড। এত বড় শয়তান, কোথায় কি করেছে সমস্ত কিছু ডিলিটেড। ভয়েজ মেসেজ থেকে পাঠানো ছবি পর্যন্ত। কী এমন দেখতে মেয়েটাকে, কপালটা ফুটবল মাঠের মত চওড়া, নাকটা বোঁচা , সারাক্ষণ স্লিভলেস ব্লাউজ পড়লেই যদি সুন্দরী হত, তাহলে ওরকম সুন্দরী রাস্তাঘাটে অনেক ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু পুরুষমানুষের মন বোঝা দায়। পুরুষ মানুষ জন্মায়ই জালিয়াতি করতে। ও শালারা জানেই না বিশ্বাসের মর্ম। কিন্তু বন্দনা স্বামী বলে শিল্পী বলে অনেকটা ছাড় দিয়ে রেখেছে। গান গাইতে যায় , শো করে, অনেক ফ্যান, লোকের সঙ্গে আলাপ ক’রে সিডি কেনানোর ব্যবস্থা করে, সমস্ত কিছু বন্দনা মেনে নিয়েছে। মেয়েটা বাড়িতেও আসত।  খারাপ লাগত যেটা, মেয়েটা বাড়িতে এসে হেঁসেলে ঢুকবে , ও রান্না করবে। কেন রে বাবা! তুমি একজনের বাড়িতে এসেছ, তুমি অতিথি, যা খেতে দেওয়া হবে খাবে , যেখানে বসতে বলা হবে বসবে, গপ্পো গুজব করবে, তারপরে চলে যাবে। তা না, এসব আদিখ্যেতা দেখলে বন্দনার মা ঝাঁটা দিয়ে মেরে দিত। বন্দনার মায়ের ভয়ে রানাঘাটে বাঘ আর গরু এক ঘাটে জল খেত। এখনও সবাই প্রতিমা গুহর নাম করে। কিন্তু বন্দনা মায়ের ওই জোশটা অতটা পায়নি।  না পেলেও মায়ের রক্ত তো। ছাড় দিয়েছে, অনেক দিন ছাড় দিয়েছে। দু একদিন প্রচণ্ড চিৎকার করেছে। কিন্তু তখন ‘ছি ছি তুমি এরকম ভাবতে পারলে, এত নীচে তোমার মন নামতে পারে, এরকম সন্দেহ তোমার, আমি গানই ছেড়ে দেব’, বলে উঠেছে । “ওই গানই ছেড়ে দেব”টা হচ্ছে ব্রম্ভাস্ত্র, যেটা শুনলেই বন্দনা চুপ করে যাবে। শিল্পী মানুষ, গান ছেড়ে দিলে বাঁচবে কী করে, যদিও সেই গানের পয়সায় তো সংসার তিনদিনও চলে না। সেই চাকরি তো করতেই হয়, ট্যুরে তো যেতেই হয়, সেই ট্যুরগুলোতেও কি ওই মহিলা সঙ্গে যায় নাকি? বন্দনার সন্দেহ হতে লাগল। কিন্তু এই মোবাইলটার খোঁজ বন্দনা এতদিন পায়নি। আজকে পেয়েছে। কালকে ট্যুর থেকে ফিরেছে, তখন একটু নেশা করে ছিল, এবং এগুলো মুছতে ভুলে গেছে।  এখন বন্দনার সামনে মোবাইলটা, বন্দনা চেক করতে গিয়ে পেয়েছে। আবার “ট্রি” নামে শেভ করা। ‘মাই ট্রি’।  তৃষাকে আবার ট্রি বলে। ওই গাছেই তোমার গলায় দড়ি দিয়ে ঝোলাব আমি। হাঁ করে ঘুমচ্ছে মৈনাক। বন্দনা রাগে একবার ঘর থেকে ঘুরে গেল। মনে হল তখনই নাকের মধ্যে একটা ঘুষি লাগিয়ে দেয়। ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগে এই মেসেজগুলো সমস্ত কপি করে রাখতে হবে। জানেও না বন্দনা সমস্তটা। এসব টেকনিকাল ব্যাপারে বন্দনা একটু অপটুই। পাশের বাড়ির লোপা সব জানে। ওর অনেক বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড আছে। স্বামীকে লুকিয়ে তাদের সাথে চ্যাটিং- ফ্যাটিং করে। আরও কী কী করে কে জানে! ওই সমস্তগুলো লোপাকে দিয়ে সেভ করিয়ে রাখতে হবে, যাতে পরে বাবু অস্বীকার না করতে পারে। ভাবতে ভাবতে বন্দনা মেয়েকে স্কুল বাসে চড়িয়ে দিয়ে এসে রান্না ঘরে ঢুকল। রান্না পরে হবে। আজকে ঘুম থেকে উঠুক। তার মধ্যে সমস্ত কিছু করে নিতে হবে। একটা ফোনই লাগিয়ে দিল লোপাকে। কিন্তু তারপরই মনে হল লোপার কাছে ব্যাপারটা ফাঁস করা কি উচিত হবে? আফটার অল সংসারের ব্যাপার। মনে হতেই লাইনটা কেটে দিল। তার চেয়ে মোবাইলটা নিয়ে ও নিজেই খুট খুট করে দেখুক। এই তো প্রথম মেসেজটা।

-আমি সাবধানে পৌঁছে গেছি ট্রি।

ট্রি! দেখেই বন্দনার মাথায় আগুন জ্বলে উঠল । ওই গাছে যেমন পাখি আছে, তেমনি সাপও আছে। এবার সাপ পাখিকে গিলে খাবে।

তবু মাথা ঠাণ্ডা রেখে ,পরপর মেসেজগুলো পড়তে থাকল বন্দনা।

-আজ যাচ্ছি গান করতে। আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সুর । সেই সুরগুলোকে নিজের ভেতর টানতে হবে। কিন্তু সেই সুর নিজের ভেতর টানার জন্য যে শরীরের জোর দরকার, যে মনের হিম্মত দরকার কোথা থেকে পাব?  সেই জোর দাও তুমি। যেভাবে উনুনের আগুণকে জ্বালিয়ে তোলে আঁচ , যেভাবে তারাকে জাগিয়ে তোলে সন্ধ্যা (ওরে বাবা কি কবিতা) , সেভাবে স্টেজে উঠলে আমাকে জাগিয়ে তোল তুমি। আমি বুঝতে পারি সামনের দর্শকাসনে তুমি থাকো বা না থাকো, কোথাও আমার গান তোমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।

উত্তরে সেই ট্রি লিখছে, আমি সব সময় তোমার শ্রোতা হিসেবে তোমার জোর হিসেবে থাকব।

 থাকা বের করছি। তোমার বরের কাছে গিয়ে এগুলো দেখাব আমি।

 তার পরের মেসেজে ট্রি আবার লিখছে,

-কালকে পেট খারাপ হয়েছিল। আজকে কিন্তু তুমি হোটেলে গিয়ে ওই তন্দুরি ,কষা মাংস, রুটি এগুলো অর্ডার করো না। কালকে তোমার শো। পারফরমেন্স ভালো হতে হবে।তুমি একটা বয়েলড ভেজ খেয়ে নেবে। সঙ্গে কম স্পাইসি কোনও একটা মাছ। এই কথাটুকু রেখো।

বাবা ডাক্তার এসেছে। বন্দনা কোনদিন বলেনি, কি খাবে না খাবে। খেতে ভালবাসে যা খুশি খাক না।

পরের দিন আবার মেসেজ।

-গান আজকে ভালই হল। তোমার জন্যই আজ সপ্তসুরের সেই সপ্ত আকাশটা ছুঁতে পারলাম। যেতে যেতে ঠাণ্ডা বাতাস কানে লাগছে। আর মনে হচ্ছে তুমি যেন ছুঁয়ে যাচ্ছ আমাকে।

-না আমার ছুঁয়ে যাওয়ার এভাবে দরকার নেই। কারন পরের প্রোগ্রামটা আবার আটদিন পরে। টনসিলের ব্যথা আছে ভুলে যেও না। মাফলারটা জড়িয়ে নাও। জানলাটা তুলে দাও। প্লিজ লক্ষ্মীটি কথা রাখো।

টনসিল আছে? হ্যাঁ মৈনাকের যে টনসিল আছে বিয়ের পরে শুনেছিল। ও গরম জল খেত, আইসক্রিম খেত না। কিন্তু বন্দনা নিজেই ভুলে গেছে। মৈনাকের টনসিল এই মেয়েটা মনে রেখেছে। বাবা। এত কথা তো বন্দনার নিজের মনে ছিল না।

তারপরের একটা মেসেজে আবার মৈনাক লিখছে, রাত জেগে কম আলোয় কম্পিউটারে বোসো না। চোখে কদিন আগে প্রবলেম হয়েছিল ভুলে যেও না। মনে করে প্রত্যেক  দিন চার ড্রপ করে ওই ওষুধটা নিও কিন্তু  ।

ওদিক থেকে ও লিখছে,

-আবার তুমি ওসব ছাই ভস্ম খেলে? এই জন্য এত পেট খারাপ হয় তোমার। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, আর এতে গানের কতটা ক্ষতি হয়, তুমি কল্পনা করতে পারো না, তাই না?

পরের একটা মেসেজে মৈনাক আবার লিখছে,

– তোমার মাইগ্রেনের মাথা ধরা আছে, কাজগুলো সকালে করলে হয় না? রাত জেগে লিখতেই হবে?

-স্লিপ ডিস্ক তো হয়েছিল, ভুগেছিলে তো, বাড়ির লোককেই কষ্ট দিয়েছিলে, এখন ওই ভারী সেতারটা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে না উঠলেই নয়?

বাবা, কত চিন্তা ভাবনা, এর জন্য ওর কনসার্ণ , ওর জন্য তার কনসার্ণ ,  মেসেজগুলো পড়তে পড়তে লোপার একবার ফোন চলে এল বন্দনার কাছে। বন্দনা ফোনটা  ধরে ‘হ্যাঁ একটু পরে করছি’বলে রেখে দিল। মৈনাকের ঘরে গিয়ে দেখল মৈনাক হাঁ করে ঘুমোচ্ছে। কতদিন ওরা বেড়াতে যায়নি কোথাও, কতদিন সংসারের কি কি লাগবে , কোন আটাটা কিনতে হবে, মেয়ের কোন ড্রেসটা কিনতে হবে,মেয়ের মাইনে দিতে কতদিন বাকি থাকছে, এর বাইরে কোনও কথাই বলেনি। এমনকি স্বামী আর স্ত্রীর সেই অন্তরঙ্গতম মুহূর্তেও কোনও প্রেমের কথা বলেনি, শুধু কোথায় ফ্ল্যাট বিয়াল্লিশশো টাকা স্কয়ার ফিট, আর কবে এই ঘুপচি ড্যাম্প পরা বাড়িটা ছেড়ে যেতে পারবে, কিভাবে সেই ঘর দোর কেনা যাবে, সঙ্গমের সময়েও তাই নিয়ে কথা হয়েছে ওদের। কতদিন ওদের কথার মধ্যে কোনও গান, কোনও পাখি, কোনও শিল্প, কিচ্ছু ছুঁয়ে যায়নি। বন্দনা যে অতকিছু ভাল বুঝত তাও নয়, কিন্তু বিয়ের পর পর ওর তো গানের প্রতি বাজনার প্রতি একটা ইন্টারেস্ট ছিল। কোথায় গেল সেসব সংসার করতে করতে?এমনকি কেমন আছে লোকটা, তার শরীর কেমন জানা হয়নি। এমনকি লোকটাও জিজ্ঞেস করেনি ওকে, ও কেমন আছে। তাহলে পরকীয়া বলতে ও যেটাকে ভাবছে  সেটা নয়? তৃষা যে কথাগুলো লিখেছে, একজন স্ত্রী হিসেবে ওরই লেখার কথা ছিল। উল্টোদিকে মৈনাক আবার ওকে যেগুলো বলছে সেগুলো হয়তো তৃষার স্বামীর থেকে তৃষা এক্সপেক্ট করেছিল। তাহলে পরকীয়া ব্যাপারটা কি?  দাম্পত্যের একটা নিরাপত্তা না পেলে পরকীয়া যেমন দাঁড়াতে পারে না , পরকীয়ার একটু চার্ম না পেলেও কি দাম্পত্যটা থাকে না? দুটোর সঙ্গেই দুটো অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত? ভাবতে ভাবতে আগুনটা যেন একটু নিভে এল বন্দনার। মোবাইলটা যেখানে ছিল, সেই ব্যাগের ভেতর সেটা ঢুকিয়ে দিল। অনেক জায়গায় অনেক বড় বড় ফাঁড়ি হয়ে গেছে , সেগুলো টপকে লাফিয়ে পার হওয়া যাবে না। তার জন্য হাল্কা করে করে  অনেক শ্রমে অনেক দিন  ধরে সেতু গড়ে তুলতে হবে। সেই সেতুগুলো চোখে দেখা যাবে না। কিন্তু চোখে না দেখা গেলেও সেগুলো বানাতে কম পরিশ্রম হবে না। প্রেমের ভেতরকার সেই চার্ম আর নিরাপত্তা দুটোকে মিশিয়ে একটা ককটেল তৈরি করতে হবে।  ভাবতে ভাবতে ওর ঘরে গিয়ে দেখল মৈনাক পাশ ফিরে শুয়েছে।  লোকটা নাক ডাকে অনেক। তৃষার একটা মেসেজ ছিল , ওর একবার হার্টের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার। বেশি নাক ডাকার সঙ্গে নাকি হার্টের সমস্যার একটা লিঙ্ক থাকতে পারে। ওর মনে হল, লোকটার হৃদ স্পন্দনের শব্দ অনেক দিন শোনেনি বন্দনা।  ওকে শুনতে হবে শব্দটা । বন্দনা ঘরে গিয়ে মৈনাকের বুকে মাথা রেখে খানিকক্ষণ বসল। মৈনাক হটাত ঘুম ভেঙ্গে ওকে ওইভাবে দেখতে পেয়ে চমকে উঠল ।

-কী হয়েছে? কী হল?

-কিচ্ছু হয়নি।

বন্দনার হাতে একটা বাটিতে হাল্কা উষ্ণ একটু গরম জল ছিল।  সেটা দিয়ে মৈনাকের চোখ দুটো মুছিয়ে দিল বন্দনা।

মৈনাক হাঁ করে তাকাল।

-অনেক দেরী হয়ে গেছে। আজ তো অফিস আছে।

-না আজ অফিস নেই। তুমি উঠবে, রেডি হবে, আজ আমরা বাইরে একসঙ্গে খেতে যাব ।

মৈনাক যেন আকাশ থেকে পড়ে জিজ্ঞেস করল,  আজ? কেন আজ স্পেশাল কী?

-তোমার মনে নেই? আমার মনে আছে । আজকে প্রথম তুমি আমাদের বাড়িতে আমাকে দেখতে এসেছিলে।

একদম বানিয়ে বলে দিল বন্দনা। দিনটা ভুলে গিয়েছিল বলে মৈনাক খানিকক্ষণ অবাক হয়ে এদিকে ওদিকে ভেবে বলল আজকে? আজকেই গিয়েছিলাম?

-হ্যাঁ আজই  প্রথম দেখা হয়েছিল। আজকের দিনটাকে সেলিব্রেট করতে হবে না? আজ বাইরে খেতে যাব আমরা। প্লিজ না কোরো না।

মৈনাক একবার দাঁত কামড়ে কি একটা ভেবে বলল, ঠিক আছে। একটা  ছুটি নেওয়াই যায় । নো প্রবলেম। আমি বাথরুম থেকে আসছি।

মৈনাক ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বন্দনা ভাবল জলজ্যান্ত একটা মিথ্যে কথা ও বলে দিল কীরকম। কথায় কথায় এটা যদি বেরিয়ে যায় যে আজকে প্রথম দেখতে আসেনি । কথাটা মনে হতেই একটু হাসল বন্দনা।  তারপরেই ভাবল যেদিন নতুন করে চিনতে শেখে মানুষ মানুষকে , যেদিন নতুন করে বুঝতে শেখে মানুষ মানুষকে সেদিনটাই কী প্রথম দেখার দিন নয়?

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।