• Uncategorized
  • 0

রাধানাথ শিকদার প্রয়াণ সার্ধশত বর্ষ।

লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী।

আজ ১৭ মে রাধানাথ শিকদার প্রয়াণ দিবস।
এভারেস্ট শিখরের কথা বললে রাধানাথ শিকদারের কথা আসে। এভারেস্ট শিখরকে স্থানীয় মানুষ স্মরণাতীত কাল থেকে চিনতেন। তাকে
নেপালের অধিবাসীরা বলতেন সাগরমাথা। তিব্বতের মানুষ বলতেন চোমোলাংমা। স্থানীয় লোকজন জানত দেওডাঙা বলে। কেউ বলত গৌরীশংকর। আর খুবই যে উঁচু, সেটাও মানুষের জানা ছিল। কিন্তু উচ্চতার গাণিতিক বৈজ্ঞানিক হিসেবটা কারো কাছে ছিল না। ১৮০২ সালে ভারতে গ্রেট ত্রিকোণমিতিক সার্ভে শুরু হল। কাজ শুরু হয় দক্ষিণ ভারত থেকে। ১৮৩০ নাগাদ উত্তর ভারত জুড়ে কাজ আরম্ভ হল। ১৮৪৭ এর নভেম্বরে  ব্রিটিশ ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল অ্যাণ্ড্রু ওয়া নিজে গেছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছনে আরো উঁচু শিখরটি পরিমাপ করতে। সাথে ভারি ভারি থিওডোলাইট যন্ত্র। পাঁচশো কিলো ওজনের জিনিসটা ব‍ইতে বারোটা কুলি লাগে। ১৮৪৯ সালে কর্তৃপক্ষ পাঠালেন জেমস নিকলসনকে। সাথে পাঠানো হল সবচেয়ে ভালো থিওডোলাইট যন্ত্র। পিক বি, ওটাই তখন নাম ভাবী সর্বোচ্চ শৃঙ্গের। তো পিক বি মাপতে গিয়ে ম‍্যালেরিয়া বাধালেন নিকলসন সাহেব। মারা পড়লেন। এরপর বাঙালি গণিতবিদ রাধানাথ শিকদারের উপর ভার পড়ল। ততদিনে পিক বি হয়েছে পিক XV, পনেরো নম্বর শৃঙ্গ। রাধানাথ দরদী মন নিয়ে নিকলসন সাহেবের খাতাপত্র খু্ঁটিয়ে পরীক্ষা করলেন। হিসেবের কিছু ভুলচুক সংশোধন করতে গিয়ে নিশ্চিত হলেন সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গের সন্ধান মিলেছে। সেটা ১৮৫২ সাল। ছুটলেন বড়কর্তা অ্যাণ্ড্রু ওয়ার কাছে। মাপজোকের কাগজ খুঁটিয়ে দেখে রায় দেবেন তিনিই। রাধানাথ শিকদারের কাজ দেখে বড়কর্তা আহ্লাদিত। পিক XV এর নাম তিনি দিলেন মঁ এভারেস্ট। ইউরোপের মঁ ব্লাঁ এর অনুকরণে। আর রাধানাথকে দায়িত্ব দিয়ে রাখলেন বাকি শৃঙ্গগুলির নামকরণের। পিক পনেরোর প্রস্তাবিত নাম এভারেস্ট জেনে সার্ভেয়ার সমাজের আনন্দ আর ধরে না। জর্জ এভারেস্ট যে সার্ভেয়ার জেনারেল হিসাবে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু বেঁকে বসলেন এভারেস্ট সাহেব নিজে। তিনি স্থানীয় নাম ব‍্যবহার করার পক্ষপাতী ছিলেন। কর্মরত সার্ভেয়ার জেনারেল অ্যাণ্ড্রু ওয়া  তাঁর পূর্বসূরী এভারেস্ট সাহেবকে বোঝালেন যে পিক পনেরোর স্থানীয় নাম নানাবিধ। একটি সর্বজনস্বীকৃত নাম দরকার। শেষে ১৮৬৫ থেকে পিক পনেরো শিখরটি এভারেস্ট হিসেবে পরিচিত হতে থাকল। পরের বছর ১৮৬৬ তে এভারেস্ট সাহেব প্রয়াত হলেন। ১৮৭০ এ প্রয়াত হলেন রাধানাথ শিকদার। আর ১৮৭৮ এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন অ্যাণ্ড্রু ওয়া।
১৯৫৩ সালে, ২৯ মে, তেনজিং নোরগে ও এডমণ্ড হিলারি এভারেস্ট জয় করেন।
 ফিরে আসি গণিতবিদ রাধানাথের কথায়। তিনি ছিলেন ডিরোজিওর ছাত্র। গণিতে বিশেষ প্রতিভাবান।
বিদ্যাসাগর মশায়েরও সাত বছর আগে, ১৮১৩ সালের অক্টোবর মাসে রাধানাথ শিকদার  জন্মেছিলেন। পিতার নাম তিতুরাম শিকদার। মায়ের নাম কি ছিল জানতে পারি নি।
১৮৩১ সালে তিনি সার্ভের কাজে যোগ দেন। মাসিক বেতন ছিল ত্রিশ টাকা। ১৮৫২ সালে বৈজ্ঞানিক গণনা করে জানান যে ১৫ নম্বর চূড়াটি সবার উপরে। মেপে দেখা গিয়েছিল তার উচ্চতা ২৯০০০ ফুট। কিন্তু এমন মাপ দেখলে লোকজন সন্দেহ করতে পারে ভেবে, সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ অ্যাণ্ড্রু ওয়া সিদ্ধান্ত নিলেন ওটা ২৯০০২ ফুট উঁচু।
সেই সময়ে সার্ভেয়র জেনারেল অফ ইণ্ডিয়া ছিলেন স্যার জর্জ এভারেস্ট ।  পরবর্তী সার্ভেয়র জেনারেল এর উদ্যোগে ১৮৬৫ সালে রয়্যাল জিওগ্রাফিক  সোসাইটি এই ১৫ নম্বর চূড়াটির নাম রাখেন এভারেস্ট। যদিও স্যার জর্জ এভারেস্ট  তাতে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
১৮৭০ সালের ১৭ মে তারিখে হুগলীর চন্দননগরের গোদলপাড়ায় রাধানাথের মৃত্যু হয়।
১৯০২ সালে ১০ এপ্রিল তদানীন্তন ভারত সরকার একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে রাধানাথের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এই সুযোগে আমি এভারেস্ট চূড়ার উচ্চতার প্রথম গণনাকারী জেমস নিকলসনকেও শ্রদ্ধা জানাতে কার্পণ্য করব না।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।