সম্পাদকীয়

সে ফেরেনি। ফেরার হয়ে যাওয়ার পর অনেকই ফিরে এসেছে।হাওয়া বদল হলে, হাওয়া বদলে দিলে হয়তো বা। ।কেন ফেরেনি সে? যা গেছে ,তা তো গেছেই……………..! ঘাসের অবাধ চলাচল দখল করেছে শোকভার উঠোন। উৎসব মুখর বাতাসেও ভেঙে পড়ে আছে সেই বেতের ঝুড়িটি—রোদ-বৃষ্টির দাপটে কাহিল হয়েছে তার সর্বাঙ্গ।মাটিতেই গলে-গলে মিশে গেছে মাটির তুলসি মন্দির। শুধু একটি দুর্বল মাড়ুলি মঙ্গল খুঁজে ফেরে সকাল-সন্ধে। শুনশান এক মাটির ঘরে মা আর বাবা। চারপাশে এতো হৈ-হুল্লোড়, ঢাকের কাঠির পরব পরব মাতন- এ ঘরের দেওয়াল স্পর্শ করে না এখন।

শুধু শরীরের উপর চাপিয়ে রাখে সুখ-সুখ মনখারাপ ।ছেলে বাড়ি ফেরেনি। ফিরে আসার কোনও আলো ফুটে ওঠেনি এখনও। সেই যে দেশভাগের পর এদেশে প্রান্তিক জীবনটি গতরের ঘামে গড়েছিল সবুজ -সোনালী খেত।তিলতিল করে করে বুনেছিল দুই-মেয়ে এক-ছেলের রূপোলী দিন ।মেয়েদের বিয়ে দিয়েছে সাধ্যমতো সংসারে।একমাত্র স্নাতক ছেলে সংসার সামলাবে বৃদ্ধ বয়সে। এ প্রত্যাশাও তো অমূলক নয়! মেধাবী ছেলে প্রথমে গৃহশিক্ষকতা করে বাবাকে সহযোগিতা করতো।ছিমছাম সংসার চলতো সুখে-দুঃখে। হঠাৎ-ই বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট হয়ে উঠলো।তারপরের – উত্থান পতনের ঘটনাক্রম তো সকলেরই জানা। যা গেছে তা গেছে, না মানেনি। পাড়া-পড়শি, আত্মীয়-স্বজন কেউই না।এমনিতেই ওপার থেকে আসা মানুষজনদের অবজ্ঞা বাক্য হজম করতে হয়-ই, তারপর গোদের উপর বিষফোড়া। পরিশোধের প্রতিশ্রুতি কাঁধে নিয়ে ঘর ছাড়ে সে। ঘরে ফেরেনি আর। ঘর ফিরতে পারে না।”কেউ কথা রাখেনি…..” সেও রাখতে পারে না। হয়তো মাসান্তে কোনও এক অন্ধকার ডিঙিয়ে মায়ের কোলের কিছু কান্না রেখে যায় । আর আলো ফোঁটার আগেই বেরিয়ে যায় অজ্ঞাতবাসের সন্ধানে।
এভাবেই কত উঠোনে গজিয়ে উঠেছে ঘাসের আস্তরণ? কত তুলসী মঞ্চ মিলে গেছে মাটির অন্তরে! তবে কি শুধু শুধুই “একদিন মাকে দিয়েছিলাম দোষ………… ”

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।