সম্পাদকীয়

আমি তনিমা হাজরা। লিখি কবিতা, গল্প, অনুগল্প, মুক্তগদ্য, প্রবন্ধ।

ফাঁকা ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ডাক নাম ধরে নিজেকে আদর করে ডেকেছেন কোনোদিন? সেই নাম ধরে যে নাম ধরে আপনার খুব কাছের কেউ আপনাকে ডাকলে আপনার সেই ডাক শুনতে খুব খুব ভালো লাগে। আর আপনি সেই ডাক বারবার তার মুখ থেকে শোনবার জন্য ইচ্ছে করে সাড়া না দিয়ে আরও একবার শুনবার লোভ সামলাতে পারেন না।

একবার ডেকে দেখুন তো। দেখবেন বারকয়েক ডাকবার পরে আপনার ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেবে, দেবেই ঠিক — হুঁউউউ, কিইইইই।

দেখবেন সেই মুহুর্ত থেকে আপনার নিজের সাথে নিজের বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।

ভাবছেন আমি অবান্তর কথা বলছি, কিংবা আমার মাথায় পোকা? একেবারেই না। আগে এভাবে নিজের সাথে নিজের পরিচয় শুরু করুন আর তারপর খুব গভীর দৃষ্টিতে একবার আয়নায় নিজের দিকে নিজে তাকান।

না, না, নাক-চোখ-মুখ-রূপ, সাজগোজ এসব জরিপ করে দেখার জন্য নয়। নিজের এক্কেবারে ভেতরটা দেখবার জন্য। তারপর খুব মমত্ত্বভরে নিজেকে নিজে জিজ্ঞাসা করুন, এ্যাই শোন, তুই কেমন আছিস রে?

না এরপর আর আয়না লাগবে না। আপনার সাথে আপনার নিজের কথোপকথন এমনিতেই শুরু হয়ে যাবে।
এই যে নিজের সাথে নিজের দেখা হয়ে গেল এবার ইচ্ছেমত যখন খুশি কথাবার্তা চলতে পারে।

আমাকে আপনাদের পাগল বলে মনে হচ্ছে তাই তো?

আচ্ছা, আপনি সেইসব মানুষদের পাগল বলে মনে করেন না, যারা মন্দির, মসজিদ, গীর্জা কিংবা গুরুদুয়ারার সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ভিতরের পাথরটাকে মনের কথা বলবে বলে বা ফুল, চাদর,গহনা, টাকা দিয়ে তাকে খুশি করে তার কাছে সৌভাগ্য চাইবে বলে।
অথচ আশেপাশে কতো দুঃখীমানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে আর সেই খাদ্য বা অর্থমূল্য দিয়ে সে সহজেই তাদের মুখে হাসি ফোটাবার অসীম ক্ষমতা রাখে, কিন্তু তার মধ্যেকার সেই নিজস্ব যোগ্যতা বা দেবত্ব সম্বন্ধে সে নিজেই সম্পূর্ণভাবে অচেতন এবং তাই অপর এক কল্পিত শক্তির উপর এতটা নির্ভরশীল নিজের সুখ দুঃখ ভাগ্যসৌভাগ্য যাঞ্আ করার জন্য। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই আমরা আমাদের কাছের মানুষের পাত্তা-গুরুত্ব পাবার জন্য সারাক্ষণ উৎকর্ণ হয়ে বসে আছি প্রত্যাশায়। তাই ফললাভ করলে খুশিতে লাফাচ্ছি আর বিফল হলে হতাশায় তলিয়ে যাচ্ছি।

ধরো এইসব ধর্মস্থানগুলির ঠাকুর দেবতারা যদি রোজ মলমূত্র ত্যাগ করতেন আর সেগুলো পরিস্কার করাটা এই ভজনপূজনের একটা বাধ্যতামূলক অঙ্গ হিসেবে রাখা হতো তবে আমার দৃঢ়বিশ্বাস এইসব ধর্মস্থানগুলির ভিড় সব একেবারে হালকা হয়ে যেত।

কারণ আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই যেকোনো সম্পর্কের সুফল, সুন্দরতা বা সুগন্ধিদিকটা বহন করতে যতটা আগ্রহী দুর্গন্ধ বা অক্ষম দিকটা মেনে নিতে বা বহন করতে ততটাই অপারগ ও অনিচ্ছুক।।।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।