সেই কবে কোন এক ভুলে-যাওয়া কবি, বিদেশের কোন এক সুদূর গাঁয়ে বসে লিখে গিয়েছিলেন:
“Rain on the green grass,
Rain on the tree,
Rain on the housetop,
But not on me.”
সেই থেকে নার্সারী রাইমের ছোট্ট ছোট্ট শব্দগুলো এঁকে-বেঁকে, গলি-খুঁজি পার হয়ে লিখেই চলে শিশুদের জন্যে বৃষ্টিভেজা কাব্যিকথা। গাছের ফাঁক দিয়ে টাপুর, টুপুর, সকাল, বিকেল জলের আল্পনা দেখতে দেখতে কেটে যায় ছুটির সকালবেলাগুলো। ছোট্ট শিশুমন খুঁজে চলে শীতল আশ্রয়, চৌখুপি ঘুড়ি আর সোনালী-স্বপ্ন জড়ানো লাটাই নিয়ে অপেক্ষা করে সেই জাপানী রূপকথার পুঁচকেটার মতো, যে সুর করে করে বৃষ্টিতে ভেজার ছড়া বলবে, আর আরেকটা খুদে বান্ধবীকে দেখে মায়ের আনা লাল ছাতা এগিয়ে দেবে তার দিকে:
“As I run to meet mother, (Kakemasho Kaban wo kaasan no)
I can hear the bells on my bag ring (Ato kara ikoiko kane ga naru)
আরো একটু অল্প-স্বল্প ছোট্টটা, যে ঠিক বড় হওয়ার মুখেই পড়ে ফেলেছে দুঁদে গোয়েন্দার মন-টালমাটাল উপন্যাস, সেও তো শনিবারের বৃষ্টি দেখে ভাবে, সেই যে ইংল্যান্ডের যেই গ্রামের ধানের শিসের ডগা ছুঁয়ে টুপুস করে ঝরে পড়লো একটি বৃষ্টি ফোঁটা, আলতামাখা বিকেলগুলো পেরিয়ে সেই বৃষ্টিটা কি চলে আসতে পারবে কলকাতার ইট-কাঠ-কংক্রিটের বারান্দার রেলিংগুলো ঘিরে নাচতে?
“আমাদেরও হাউসটপে বৃষ্টি পড়বে, ঐ যে সেই যে গো, সেই জাপানী নার্সারী রাইমে ঠিক যেমন করে রেইন বাবল হয়ে যেতো, সেই বুদ্বুদটা সব বাচ্ছার গাল ছুঁয়ে উপহার দিতো আনন্দ, আমাদের বাড়িতেও ওই বৃষ্টি-বাবলটা আসবে?”
রং পেন্সিল, ক্যারমের লাল-কালো ঘুঁটি, লুডোর দান গোছানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মা, ছেলের টেবিল, খাট-বিছানা, আলনায় মেলে রাখা মনকেমনের মেঘগুলোকে পরিপাটি করে রেখে দেয়, তার চোখের পাতা বৃষ্টির ছাঁট ছাড়াই ভিজে ওঠে, সেই কবে, কত্তদিন আগে, নবদ্বীপের রথের মেলায় দাদু একটা কাঠের ঘোড়া কিনে দিয়েছিলো, সেটা তো সেই স্টোর-রুমেই পড়ে আছে। না রোদ পেয়েছে, না পেয়েছে জল, মায়ের মনটা কালচে-বেগুনী রং হয়ে একগুঁয়েমি করতে থাকে, সব কাজ বন্ধ রেখে ছোট্টটাকে বলে ওঠে, “চল আজ ছাদের ঘরে যাই, ওই কাঠের ঘোড়াটা।..”
বাকিটা দারুন সুন্দর। কলকাতার যে কোনো একটি ছাদে তুমুল বৃষ্টিতে আঁচল ছড়িয়ে হাসতে থাকে মা, আর খুদে তখন কাঠের ঘোড়ার সাথে টগবগ টগবগ টগবগ…কলকাতা, জাপান, ইংল্যান্ড সব এক করে দেয় বৃষ্টি-বাবল।
আমরা সাহিত্য হৈচৈ-এ প্রত্যেক শনিবার নিয়ে আসছি সেই মন-ভালো করার বৃষ্টি-বাবল, ছোট্ট বন্ধুদের জন্যে তো অবশ্যই, আর সব্বাই যারা যারা ছোট্টবেলাগুলোকে আবার ফিরে পেতে চাও। তোমাদের গল্প, বায়না, কবিতা, আঁকা, ভালোলাগা, মন্দলাগা, দুষ্টুমি সবকিছুর জন্যে আছি আমরা টীম টেকটাচটক শনিবারের ‘হৈচৈ’ নিয়ে।