সাতে পাঁচে কবিতায় আর্যতীর্থ
by
TechTouchTalk Admin
·
Published
· Updated
দিওয়ার
কটা দিন, মাত্তর কটা দিন দেশের কথা ভেবে,
হে হদ্দ গরীব, দেওয়ালের ওইপাশে থাকো।
ওহে চন্ডাল ভারতবাসী,
মুচি মুদ্দোফেরাস ভিখিরি দলিত যত বস্তিনিবাসী,
আর একটু ধৈর্য রাখো,
রাজাধিরাজ ঘোষণা করতে চলেছেন এই দেশ শীল ছেড়ে পেয়ে গেছে পুরো উন্নয়ন,
দেখো হে মূর্খ ভারতবাসী, দেখো খুলে তোমার তৃতীয় নয়ন,
এ এক অন্য দেশ।
এখানে আবর্জনা নেই, পানের পিকে রঞ্জিত নয় ঝকঝকে নগরপ্রাচীর,
মোড়ে মোড়ে বাজে মঙ্গলশঙ্খ,
সুসজ্জিত বালিকারা ফুলের পাপড়ি ছোঁড়ে অতিথির ওপরে। অবশ্য গতকালই বালিকার ছ’বছুরে বোন ঘুম থেকে তুলে ধর্ষিতা লাশ,
ওসব ভাবতে নেই, ওদের ওই দেওয়ালের ওইদিকে বাস, আলোর ব্যবস্থা নেই, করাটা জরুরিও নয়,
ভোটের আগেই কিছু খয়রাতি করে দিলে হয়।
তার চেয়ে উন্নত দেশটার দিকে দেখো
হে দরিদ্র ভারতবাসী,
হে দলিত পিঠ চাবকানো ভারকবাসী,
দেখো কেমন হাসি হাসি মুখে মহাত্মাদের ছবি,
প্রতিটি ল্যাম্পপোস্ট থেকে ঝুলছে সাতরঙা সুখের নিশান, রাজারা যে পথ দিয়ে যাবেন, বেজে উঠবে দুন্দুভি বিষাণ।
এ সময় মনে করা বারণ
ওই ল্যাম্পপোস্টের রোজের সঙ্গী খোঁড়া ভিখিরি,
আধোআলোয় ঠোঁটে রঙ মেখে দাঁড়ানো নদীয়ার নারীটির কথা,
যার কাছে বাড়ির ঠিকানা আছে, কিন্তু ফেরার পথ নেই। নিতান্তই যদি খোঁজ করো,
ওরা আছে, দেওয়ালের ঠিক ওধারেই।
হে বেকার কর্মহীন ভারতবাসী,
এখন কোনো দাবীদাওয়া চলবে না,
পেটে ভাত ও হাতে কাজের অসঙ্গত চাহিদাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
উন্নত দেশে এসবের বালাই নেই,
টুঁ শব্দটি হলে দেওয়ালের ওইপারে নির্বাসন পাবে।
এখানে থাকতে হলে হাসিমুখে জয় দেশ বলো,
পেট খালি হোক,
রাষ্ট্রের কল্যাণে ওটুকু মেনে নিতে পারোনা, হে হাঘরে ভারতবাসী ?
দেখো আজ এখানে বিরল গাড়ির ঝাঁক,
বিরলতম মানুষদের সওয়ারি নিয়ে শোভাযাত্রা হবে,
তারা অনুপম হাত নাড়াবেন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে,
সাথে কোটি টাকার হাসি বিলকুল বিনামূল্যে।
ওহে ক্লিন্ন ক্ষয়িষ্ণু ভারতবাসী,
ভুললে চলবে না এমন সুযোগ জীবনে একবারই আসে, করতালি দিয়ে ফেটে পড়ো উল্লাসে।
আর যদি এই সব নাই ভালো লাগে,
যদি বিরুদ্ধমত পুষে ফুঁসে ওঠো রাগে,
তবে হে ক্ষুব্ধ ভারতবাসী,
হে দেশ-অপ্রেমিক ভারতবাসী,
তোমাদের ঠাঁই নেই এ ভূমিতে আর,
‘এক কে পাস বাংলা হ্যায়, গাড়ি হ্যায়, মাঁ ভি।
দুসরে কে পাস কুছ নেহি।’
দেখো হে সিনেমাপাগল ভারতবাসী,
দেশ জুড়ে মুক্তি পাচ্ছে এক নতুন ‘দিওয়ার’।