বিতর্কের সূচনাখানা সন্ধান করা কঠিন নয় ;
“ছাতা কোথায়?” বিপদের আশঙ্কা আমার বিরাট গুন।
ভাগ্নে বলল, “ওসব রাখো ; বৃষ্টির এখন কিসের ভয়?
‘ইয়াহু ওয়েদার’ বলছে দেখ, নো ক্লাউড টিল দি আফটারনুন।
গলা চড়াই, “অত ভরসা কিসের বাপু যন্ত্রতে?
বছর ষাটেক বয়স হল, দিব্যি আছি ওই ছাড়া।
কতদিন আর থাকবি ব’সে আরামের এই গন্ডিতে?”
ঠোঁট ফুলিয়ে ভেতরে গেল, বাপ মায়েদের আস্কারায়।
অগত্যা পাঞ্জাবি প’রে একাই বেরোই ছাতা হাতে।
খুব সহজেই দিদির অভয়বাণী করি উপেক্ষা।
সকল দুর্গমতা কি আর জয় করা যায় একসাথে!
দিদি-জামাইবাবুর কেবল আমার ফেরার অপেক্ষা।
যত্তখানি সহজ ভেবেছিলুম, ততই ঘাম ঝরে ;
ঠিকনাটা খুঁজতে গিয়ে শরীরটা না খারাপ হয়!
একজন ছোকরাকে দেখি ব্যাস্ত, হাত কয়েক দূরে।
কাগজ দেখিয়ে প্রশ্ন কর’তেই উত্তর এল, “অবশ্যই!”
ম্যাপ একখানি দেখতে পেলুম, মোবাইলেতে লিখ’তেই।
ব্যাপারটা এর আগে ভাগ্নে দেখিয়েছে বহুবার।
কত সহজ সমস্তটাই আঙ্গুলের কারসাজিতেই!
চোখ ঠিকরে বিস্ময় তাই বেরিয়ে আসে প্রতিবার।
বাড়িখানা দেখিয়ে দিতে অদ্ভুত এক প্রশান্তি।
আমার মতই বিন্দু বিন্দু ঘামের দাগ ওর জামাতে!
মোবাইলের অভাবেতে অহেতুক সব ভোগান্তি।
ইস! বেমালুম ভুলে গেছি ‘ধন্যবাদ’টা জানাতে।
আবার একটু এগিয়ে আসি, “কী ভুলোমন আমার, ভাই!”
“অন্য কোনো বাড়ি যাবার ছিল নাকি এই পাড়ায়?”
“না! না! অজস্র ধন্যবাদ! এই জানানোর ছিল তাই!”
এক চিলতে হাসির পরের প্রশ্নতে থমকে দাঁড়াই।
“একটা কথা জিজ্ঞেস যদি করি আমি আপনাকে?”
ব্যাপারটা কি? আমার এতক্ষনের খোঁজা সন্দেহের!
দুঃখ প্রকাশ করে বলে, “কষ্ট দিয়েছি বাবাকে!
বলেছি, টেকনিক্যাল জিনিস না শেখা দল মূর্খদের!”
হঠাৎ এসব কথার কারণ কী? অপরিচিতকে?
সকাল থেকে এক বিষয়ের ঘূর্ণিঝড় আমার শিরায়!
“আপনি আমার বাবার মত, সমান পরিস্থিতিতে,
মানতে কষ্ট হলেও, টেকনোলজি ছাড়া অসহায়!”
চোয়াল শক্ত করি! এরা কী ভেবেছে নিজেদের!
স্মার্টফোনকে বুকে জড়িয়ে জীবনটা কাটাতে চায়!
সামান্য বিষয়েতে এই বিভেদ বড়ই বিপদের!
অথচ আমায় বলছে এসব অনুশোচনায়।
বলে চলে, “ভুল হয়েছে! দুর্বল কে অপমান!
আয়াম স্যরি।” হাতটা ধ’রে বলল একটুখানি হেসে।
ঝাঁকুনি দিয়ে ছাড়িয়ে ফেলি, “ধন্য তোমার স্বাভিমান!”
কথা আর না বাড়িয়ে চলে এলাম রাগে, অবশেষে।
নেমপ্লেটটা দেখে বুঝি, গন্তব্য এইটা না,
আর দু-তিনটে বাড়ি পরে সঠিকটা পেলাম খুঁজে।
দীর্ঘ কুড়ি বছর পরে সহপাঠীর আস্তানায়!
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আরামেতে চোখ বুজে!
“ওরাও তবে এক্কেবারে নির্ভুল বলতে পারে না!
নাকি, আমিই অন্ধকারে, ওরা সব প্রভাতে?”
“জয় আমারই, ওসব শুধু বয়স্কদের বাহানা!
নাকি, আমারই উচিত ছিল এগোনো একসাথে?”