• Uncategorized
  • 0

সাতে পাঁচে কবিতায় সৌরভ বর্ধন

কবির জখম

দুর্দান্ত সব ধ্বনি প্রবেশ করছে কানে
অথচ আমি কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছি না
শ্রবণের অতীত হয়ে সেই গান
কোটি কোটি কম্পাঙ্কের চেতনায় ভেঙে যাচ্ছে
আমার চেয়েও পুরনো একটা গাছের কোটরে
বেয়ে যাচ্ছে একাধিক পূর্ণাঙ্গ গোসাপ…
ক্রমে ক্রমে
পীত হরিৎ নীলাভ আলোকে আমার ঘর
যেন একের পর এক মহাসূর্যকে অতিক্রম করছে
ক্লান্ত হয়ে আসছে চোখ
অবসন্ন প্রাণবায়ু পারলে ধুলোদের বালি হয়ে যায়,
অচেতন পড়ে থাকে সাগরতীরে, অনন্তের ভারে অসহ্য
আমি খুঁজে ফিরি আমারই ঘরের শেষতম বিন্দু
দেখি একটা ঘুঘুপাখি এই সমস্ত রাতটুকু শুষে নিয়ে
হেঁটে যাচ্ছে ভাটার দিকে, চোখ বন্ধ করে…
আমি স্বপ্নের কথা বলিনি তোমায়,
বলেছি শাস্তির ভেতর ঢেউয়ের রং
সর্বদা কালো নয়, কখনও কখনও
উজ্জ্বল আক্রমণ তৈরি করে;
অযথা আমার জন্য বুক ভেঙো না
এই দুঃস্থ সময়, এই লৌকিক মুহূর্ত
একজন কবির কাছে বিরলতম…
আমি নির্ঝঞ্ঝাট চোরাগলি খুঁজতে চাই
আমার নিজস্ব যে বিবেক
নিঃসন্দেহে তাঁকে শুকিয়ে মারতে তোমার
পা কাঁপবে না!
জখমের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আমি উদ্ধতপ্রায়
বিবিধ পোকামাকড়ের উপদ্রব
বেড়ে যাওয়ার দম্ভে শুধু প্রবল আক্রোশ কার্যকরী নয়
থরথর পায়ের ছাপ আমি ভালোবাসি
আমাকে বহুবচনের রূপ দাও
দেখবে সেই পায়ের কাছে ছাপ ও ষাঁড়
জীবনের অর্থ খুঁজে পাবে
আমি জানলার কাছে দাঁড়িয়ে দেখলাম
বৃষ্টিরত গাছের ডালে অন্ধকার গিরগিটি হেঁটে যায়
যেহেতু আমি একজন স্বাধীন কবি
আমি নির্দ্বিধায় নিজেকে আহত করতে পারি
এমনকি নিহত করার অধিকারও আমার আছে
ফিতাকৃমির বুকের কাছে কবিতাকে
গুটিয়ে রেখে আমি পারি চাবুক টেনে আনতে
বস্তুত রক্তে আমার কোনো ছুঁৎবাই নেই
তবে কারেন্ট চলে যাওয়া লেখার জন্য অনুকূল
এসময় টর্চ জ্বেলে অক্ষর খোঁজার নাটক চলে
অথবা হ্যারিকেনের সেপিয়া আলোর সামনে
ফিনকি দেওয়া জলের কণা হেগে দিয়ে যায়
স্বাধীকার ভঙ্গের দাবীতে
কোনো সরীসৃপ এসে দাঁড়ায় কবির দরজায়
কবিও ভয় পায়
ঢোঁক গিলে অস্ত্র খোঁজে
প্রবল বৃষ্টিপাতে সঙ্গীত একপ্রকার নিলীন
তবু সে দেখতে পায় ভিজে যাচ্ছে ভবিষ্যতের খাতাটি
এসময় প্রাণীটিকে মেনে নেওয়া উচিত হবে কি
যে কোনো নদীর নীচে বালি জমার কথা
প্রথম জানতে পায় একজন কবি
চাইলে এই সমস্তটাকে সে পরাভূত করতে পারে
কিছু পরাবাস্তব কবিতায় টুকে রাখতে পারে সব হিসেব
সর্বপ্রকার মাফিয়াদের সাথে লড়ার তাকত্
একমাত্র তার আছে —– এই আত্মতুষ্টি তাকে
কবিত্বে উত্তীর্ণ করে। আর তখনই
বিস্তীর্ণ অমল জগতের কাগজ তার সামনে
কাল্পনিক নৃত্যের মুখোশ তুলে ধরে ———
পরাঙ্মুখ করার অধিকার
কথার বদলে ধ্বনি
শব্দের বদলে ভাষ্য
তাকে খাঁটি ভ্যাগাবন্ড তৈরি করে
বিপুল চৌচিরে মানুষ তার মাথা খেয়ে নেয়…
আমিই তো লিখেছিলাম :
চোঁয়া ঢেক তুলে সমাজবাবু বেসামাল শকট ছোটায়!
নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রজ্ঞায়
আমি সুগন্ধমুক্তি ছাড়া আর কিছুই হতে চাইনি
তোমার সাধের চেয়েও কোনো সুখ আমি দেখিনি আর
আদিম ও মহাদ্রাবক স্বপ্নের খাতিরে
তুমিই আমার শেষ আলিঙ্গন!
বৃষ্টিস্নাত ঘৃতকুমারীর শরীরে আলো ফেলে
আমি অতিনিশ্চিত শিল্পের পৃথিবীতে সুদৃশ্য
প্রতিমুহূর্তে ক্ষয়প্রাপ্ত প্রাণের স্পন্দন নিয়ে
কলম ধরেছি
সহজাত স্তম্ভের ন্যায় অন্ধকার
নিজে হাতে আহূতি দিয়েছি
আমি অন্তিম প্রেম ভস্মসাৎ করে লুকিয়ে নিয়েছি
দুর্বিপাক। চোখের ঘোলা জল, নিজের গায়ের গন্ধ
আমার সবচেয়ে বেশি উত্তেজক লাগে। ফলত
আমি অনুমান করি প্রায় পঁচিশ লক্ষ
শব্দ দিয়ে আমার দেহ সুগঠিত
তবে মুশকিল হয় মৃত্যুর স্থায়িত্ব ও শব্দের মোহ নিয়ে
এঁদের মধ্যে সংঘাত শক্তির মতো, অবিনশ্বর
জন্ম ও মৃত্যুর সকল নিয়ম স্থির হয়েছে যার জন্য
তাকে তুমি আমার নামে ডাকতে পারো
জেনো, কবির নামের অক্ষরে সুগন্ধ লেগে থাকে
পর্যাপ্ত আলোয় তা দৃশ্যমান হয় আকাশে
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।