• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক উপন্যাসে সপ্তর্ষি মণ্ডল (পর্ব – ৩)

অজ্ঞাত

(১০)
ভোপাল রওনা দিলেও সন্দীপন তার হৃদয়ের একটা টুকরো ফেলে গেছিল ফরাসি নগরে । সে সত্যবতীকে প্রচণ্ড ভালোবাসত আর প্রতি মুহূর্তে সেটা বোঝাবে কি করে তাই ভেবে চলেছিল । ট্রেনের কামরায় লোয়ার বার্থে বসে সন্দীপনের মাথায় যখন এসব ঘুরপাক খাচ্ছে তখন মোবাইলের শব্দে বেশ চমকে উঠলো সে । পকেট থেকে ফোনটা বার করতেই দেখে মা ফোন করছে । আস্তে করে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো ,
—- কি রে কতদূর পৌছালি ?
বেশ অন্য মনস্ক হয়েই সন্দীপন উত্তর দিলো ,
—- বিন্দাচল পেড়িয়ে গেছি ।
—- কিছু খেয়েছিস ?
মা প্রশ্ন করলে , সন্দীপন বেশ তাড়াহুড়ো করে উত্তর দিলো ,
—- খেয়েছি । খেয়েছি । এখন ফোন রাখো তো । চার্জ শেষ হয়ে যাবে নাহলে ।
এই বলে সন্দীপন ফোন কেটে দিলো । আসলে সন্দীপনের মন আজ নিজের জায়গায় নেই একটুও । ভালোবাসার সাগরে হাবু ডুবু খাওয়া মানুষের বাস্তবের কোন ঠিকানা থাকে না । সন্দীপনেরও সেই এক দশা । মনের মধ্যে একটাই চিন্তা এখন । সত্যকে কিকরে সত্যটা বলবে সে । তার ফলই বা কি হতে পারে ?
অবশেষে সে ঠিক করলো ফেসবুকে প্রেম পত্র লিখবে , তবে সরাসরি নয় কবিতার আকারে । যেমন ভাবনা তেমন কাজ । ফেসবুক জুড়ে সৃষ্টি হতে লাগলো হৃদয়ের না বলা কথা নিয়ে প্রেমপত্র । দু এক দিনে সন্দীপনের ওয়াল ঢেকে ফেললো প্রেমপত্র সিরিজ কবিতার , যার প্রথমটির জন্ম হয় সেই ট্রেনের এস ২ কামড়ার ; ১৭ নম্বর সিটে ।
এমন কিছু মন আজও আছে এ পৃথিবীতে ,
সহজ , নম্র , সরলতায় ঠাসা
অসংখ্য কথা মনে পুষে রেখেও বলে যায়
না বলা অনেক কটা মনেরই ভাষা ।
আমি দেখেছি তাকে প্রতিদিন
এই পথের ধারে , কাঁচের ওই দেওয়ালের ওপারে
চিনেছি তাকে কাছে গিয়ে ; অপেক্ষায় বসে
এক সুন্দর প্রভাতের আলোর ।
চোখ দুটো তার : যেন অসীম স্বপ্ন বয়ে বেড়ায়
প্রতিদিন , প্রতিবার — কাব্যিক ছন্দে গড়ে ওঠা
সে মনীষী আমার চোখে , অন্ধকারের পথে এক নতুন আলো :
যেন ডাকছে আমায় ।
সাহস হলনা ঠিক , যদি তাড়িয়ে দেয় ;
বিস্বাস টুকু বেশ নেমে গেছে মাটিতে —
তাই ফিরে এলাম নিজের ঠিকানায় উদাস ভাবে ।
তবে দেবী অপেক্ষা কর , একদিন ফিরে আসব ঠিক
বলব সমস্ত গল্প তোমায় ; কিভাবে একটু একটু করে
আবার প্রেমে পড়লাম তোমার ।
এটুকু লিখে সন্দীপন নেট বন্ধ করে দিলো ; উদ্দেশ্য কিছু খাবার জোগাড় ও তারপর একটু দুপুরের ঘুম ; যদিও ভোপালে থাকতে এ অভ্যেস তার মোটেও ছিল না । ভিতরে উদ্বিগ্ন মন , চিন্তায় ডুবে যাচ্ছে যখন ; তখন বাইরে পৃথিবী পিছিয়ে যাচ্ছে সময়ের হাতে হাত রেখে । এখন অপেক্ষা কাটনির ।
(১১)
কাটনি ঢুকতে ঢুকতে দুপুর দুটো বেজে গেলো । ভোপাল এখনো ৫ ঘন্টার পথ । আপাতত এখানে ট্রেন থামবে প্রায় ৩০ মিনিট । সুতরাং , দুপুরের খাবারটা এখান থেকেই কিনে নিতে হবে বলে সন্দীপনের মনে হলো । খাবার কিনে ট্রেনে উঠে মা কে ফোন করে দিলো সে । আজ সকালের মেনু ডাল , ভাত , সবজি আর দুটো রুটি । এছাড়াও পথের জন্য কিছু ফল কিনে নিলো সন্দীপন । ভোপাল পৌঁছাতে প্রায় রাত আটটা বেজে গেলো ।
—- মা , আমি হোস্টেলে ঢুকে গেছি । কোন সমস্যা হয় নি , শুধু একটু খারাপ লাগছে তোমাদের ছেড়ে আসতে ।
হোস্টেলের রুমে ঢুকে মা কে ফোন করে জানায় সন্দীপন ।
ওপাশ থেকে হেসে মা জানায় ,
—- পাগল ছেলে কোথাকার । দরজা লাগিয়ে এবার শুয়ে পড় ।
সন্দীপন নীরব থেকে ফোনটা কেটে দেয় । কিন্তু নীরবতা যে দীর্ঘস্থায়ী হয় নি কোনদিন তার জীবনে । ফোন কাটতে না কাটতেই তাই মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে আবার । এবার শুভ র পালা ।
—- কি স্যার পৌছেছেন ?
শুভ বেশ তাচ্ছিলের স্বরে ফোনের ওপাশ থেকে বললো ।
সন্দীপন সাথে সাথে একটা মুচকি হেসে উত্তর দিলো ,
—– এই জাস্ট । তা তোর খবর কি ?
শুভ এবার গম্ভীর হয়ে উত্তর দিলো ,
—– আমার খবর কি ! শালা লজ্জা করে না তোর , বন্ধু হয়ে অন্যের পোষ্ট বাক্সে চিঠি দিতে লজ্জা করলো না ।
উত্তরটা শোনা মাত্রই হো হো হেসে উঠলো সন্দীপন । ঠিক এমন সময়ে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে একরকম বাধ্য হয়েই ফোনটা কেটে দিতে হলো তাকে । শব্দটা একবার নয় , বেশ কয়েকবার হয়ে থেমে গেল । তারপর আবার কয়েকবার বেজে উঠলো শব্দটা । সন্দীপন আর অপেক্ষা না করেই এগিয়ে গেলো দরজার দিকে । অন্ধকার এই রাত এগারোটার সময়ে দরজায় কড়া নাড়া দেওয়াটা বেশ অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল তার । তবু , রহস্য ভেদ তো হওয়া চাই ; আর তাই ,
—— কৌন হ্যায় ।
সন্দীপন চিৎকার করে বলে উঠলো এবার ।
কথায় আছে অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়। সন্দীপনের জীবন যেন ঠিক সেই অভাগার মতোই আর তার ভাগ্য যেন একটি সাগর যা বারবার শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে । প্রথমে বাবা , তারপর বাড়ি , এখানে এসে থেকে আস্তানা নিয়ে বিপত্তি লেগেই আছে তার ।
সন্দীপনের চিৎকার শুনে দরজার বাইরে থেকে ভেসে এলো একটি পাতলা কন্ঠস্বর , মনে হলো কোন মহিলার ,
—- দরওয়াজা খোলনা একবার ।
সন্দীপন সাহস করে দরজা খুলে দিলো এবার । বাইরে এক ৫০-৫৫ বছরের মহিলা ও সাথে এক পুরুষ দাঁড়িয়ে । পুরুষটিকে সে চেনে । ইনিই এই হোস্টেলের মালিক , বেশ স্বাস্থ্যবান , বয়স ওই ৭০ এর কাছাকাছি হবে । নাম দিননারায়ণ চৌবে ।
চৌবে জি কে দেখে সন্দীপন এক গাল হাসি নিয়ে বললো ,
—- আরে চৌবে জি , আন্দার আইয়ে না ।
চৌবে নিজের চির পরিচিত গম্ভীর মুখ নিয়েই উত্তর দিলো ,
—- নেহি ডট বাবু । ইতনে রাত কো আন্দার নেহি আয়েঙ্গে হম । বস ইতনা কহনা থা , সাহাব কা আদেশ হ্যায় , এক দিন কে আন্দার আপকো কমরা খালি করনা হোগা । তো কল আপ কহি ঔর কমরা তলাস লিজিয়ে ।
সন্দীপন খবরটা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো ।
—- এক দিন মে …. কহা সে …
সন্দীপন বারবার অনুরোধ করে বলে চললেও চৌবে জি সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেলো কোন অনুরোধ না শুনেই ।
(১২)
“সূর্যের কিরণে পুষ্ঠ এ পৃথিবী ,
কত দূরে ! তবু তার উর্যার প্রখর তেজ , পৃথিবী কে চলার শক্তি দেয় ।
অন্যদিকে , অভাগা পৃথিবীর আর, কি আছে তাকে দেবার ! এমনকি , কাছে টেনে নিয়ে জ্বলন্ত বুকের আগুনটুকু ভাগ করে নেওয়ার অধিকারও নেই । তাকে নিজের ভাবার ধৃষ্টতা চিরদিন শুধুই এক দিবাস্বপ্ন এই পৃথিবীর ।
দূর থেকেই দেখে গেলো সে চিরকাল ” ।
পরেরদিন সকালের আলো সন্দীপনের জীবনে নিয়ে এলো নতুন এক সংগ্রামী ব্রত । ঠিক করলো আর কোন হোটেল বা হোস্টেল নয় , একটা ওয়ান বি এইচ কে হলেও ফ্ল্যাট ভাড়া নেবে । কিন্তু অদৃষ্টের পরিকল্পনায় অন্য কিছু অপেক্ষা করছিল যা আগে ভাগে জানা কারুর পক্ষেই সম্ভব নয় , সন্দীপনেরও হয় নি । আজ এজি অফিসের চৌকাঠ পেড়িয়ে সন্দীপন প্রতিদিনের মতোই সই করতে সেকশনে উপস্থিত হয় । তাকে দেখে মুলানি স্যার এই প্রথম হাঁক দিয়ে বলে ,
—- মুবারক হো । তুমহে উজ্জয়িন মিলা হ্যায় । উহা ভূ জল কা ডিভিশন মিলা হ্যায় তুমহে । আজ রাত কে গাড়ি মে রিসার্ভেশন কর লো । কল সুবাহ তক পহচ যাওগে ।
সন্দীপন এক মুখ হাসি নিয়ে উত্তর দিলো ,
—– জ্বি স্যার !
পাশ থেকে গুপ্তা জি বলে উঠলো ,
—– চিন্তা মত করনা । উহা আলী হ্যায় , সিনিয়ার তুমহারা । রহনা , খানা কোই প্রবলেম হো সাম্ভাল লেঙ্গে । বড়ে আচ্ছে আদমি হ্যায় । উস্কা ফোন নম্বর রখ লো । কল কর লেনা ।
একটা চৌকো কাগজে দশ সংখ্যার একটা মোবাইল নম্বর লিখে গুপ্তা জি বাড়িয়ে দিল সন্দীপনের দিকে । সন্দীপন নম্বরটা বুক পকেটে সামলে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিল , কিন্তু গুপ্তা জি পিছন থেকে আবার ডাক দিলে থমকে দাঁড়ায় আর তারপর ঘুরে তাকিয়ে বলে ওঠে ,
—- জ্বি স্যার !
—- তুমহারা পুলিশ রিপোর্ট আ গয়া হ্যায় ।
গুপ্তা জি উত্তর দেয় ।
সন্দীপন জোরে দুবার দম ফেলে সেকশন ত্যাগ করে লিফটের দিকে এগিয়ে যায় ।
ক্যান্টিনে আজ প্রচন্ড ভিড় । বসার জায়গা ফাঁকা নেই আর তাই সবাই তার পাশের রুমে বসে আছে । সন্দীপনকে দেখতে পেয়ে আরিফ হাত নেড়ে ভেতরে আসবার ইশারা করলো । সন্দীপন-ও আস্তে আস্তে এসে ঢুকলো রুমের ভেতর । আর কিছুক্ষন পর এজি থেকে রিলিসিং অর্ডার দেওয়া হবে আর তাই সকলের মুখেই অপেক্ষার ছাপ । ওই ঘরে উপস্থিত সকলেই নিজের নিজের ডিভিশন জেনে নিয়েছে আর আজ সেই নিয়েই আলোচনা তুঙ্গে ।
—- অজিত ভাই কহা মিলা ?
সন্দীপন বেশ হাসি মুখে প্রশ্ন করলো ।
—- জব্বলপুর । ঔর তুমহে ?
উত্তর দিয়েই সন্দীপনের দিকে ফিরতি প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সে ।
—- মেরা তো উজ্জয়িন …
সন্দীপন হাসি মুখে উত্তর দিলো ।
তার উত্তর শেষ হতে না হতেই পেছন থেকে রাকেশ নামে একজন টেবিলে জোরে থাপ্পড় মেরে বলে উঠলো ,
—– মিল গয়া উজ্জয়িন ? আরে ওয়াহ । কোই লিঙ্ক থা তুমহারা ।
বলে রাখি এই রাকেশের পুরো নাম , রাকেশ শর্মা । বাড়ি বিহার । বয়স ২৫ কি ২৬ হবে । তার কথা শুনে সন্দীপনের চোখ মুখ লাল হয়ে গেল । মনে হল দু থাপ্পড় কষিয়ে দিই । কিন্তু পরক্ষণেই নিজের রাগ সংবরন করে , হাসি মুখে উত্তর দিলো ,
—- থে না । মহাকাল সে লিঙ্ক । উহ কেয়া হ্যায় না , হম বাঙালি লোগ ছোটে জগহ হাত নেহি মারতে , সিধে ভগবান সে লিঙ্ক বনাতে হ্যায় । ইহা ভি বানায়া ঔর মিল গয়া উজ্জয়িন ।
উত্তর দেওয়া মাত্রই সন্দীপন নিজের জায়গা ছেড়ে বেড়িয়ে গেল । সবাই হাঁ করে তখনও তাকিয়ে ।
(১৩)
রাতের ট্রেনের গতি আর বয়ে আসা হাওয়ায় আজ এক অন্য আনন্দ । ট্রেনটা প্রধানত ফাঁকাই যায় আর তাই রিসার্ভেশন করতে হয় নি তাকে । সন্ধ্যের অন্ধকার পথে আকাশটা কেমন একটা নতুন বলে মনে হচ্ছে তার । ধীরে ধীরে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফেসবুক খুলে বসলো সন্দীপন । সত্যবতীকে অনলাইন দেখতে পেয়ে ছোট্ট করে একটা ম্যাসেজ লিখে পাঠালো সে ,
—- আকাশের চাঁদ আজ পৃথিবীতে হঠাৎ ।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেও সত্যবতীর দিক থেকে কোন উত্তর এলো না আজ । তাই সে ওদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ফেসবুকে ব্যস্ত হয়ে পড়লো । নানা পোস্ট ভিড় করেছে এসে । হাজার নোটিফিকেশনের স্তুপ জমে আছে । এক এক করে সবই খুলে দেখতে লাগলো সে , তবে কোনটাই সেরকম কাজের নয় তার । এরই মাঝে চোখ এসে থামলো তার আগের দিনে লেখা কবিতাটিতে । সত্যবতী লাভ রিয়াক্ট করে কমেন্ট করেছে সেখানে । একটি নয় , দু দুখানা কমেন্ট ।
প্রথমটিতে লিখেছে ,
—- ভারি সুন্দর লেখো তো তুমি । কলম থেকে বান মেরে দিতে পারো সোজা হৃদয়ে ।
কোন উত্তর না পেয়ে দু দিন পর আবার ওই ছবির তলায় কমেন্ট করেছে ,
—— ভারি দুষ্টু লোক তো তুমি । বান মেরে আর দেখতেও আসো না ।
চলন্ত ট্রেনের কামড়ায় বসে বসে সন্দীপন মনে মনেই হেসে উঠলো । তারপর পুনরায় সত্যবতীর ইনবক্সে টোকা দিয়ে লিখে পাঠায় ,
—– ব্যস্ত ছিলাম । আসলে বাংলা ছেড়ে , বাড়ি ছেড়ে ভিন রাজ্যে পড়ে থাকা ছেলেটির দায়িত্ব যে অনেক । কাজও তেমনি অনেক ।
বেশ কয়েক মিনিট নিস্তব্ধ অপেক্ষা । তারপর স্ক্রিনের ওপর ভেসে উঠলো কিছু কথা সৌজন্যে সত্যবতী তার ,
—– তুমি কোথায় থাকো ?
সন্দীপন তৎক্ষনাৎ লিখে পাঠালো ,
—– থাকি তো হাওড়া । তবে কর্মস্থল মধ্যপ্রদেশ ।
সত্যবতীর দিক থেকে কয়েক মিনিটের নীরবতা আবার ,
—— বাংলায় ফিরবে না আর কোনদিন ।
সন্দীপন উত্তর দিলো ,
—— না । আমি বাংলাকে ঘেন্যা করি । কোনদিন যেন ফিরতে না হয় ওখানে ।
উত্তর গেলো ঠিকই , সত্যও সেটি পড়লো কিন্তু তারপর …. পূর্ণ বিরাম । আর কোন কথা ফিরে এলো না স্ক্রিনে । সন্দীপনের মনে হলো না চাইতেও তার কথায় আঘাত পেয়েছে মেয়েটি । তাই ট্রেনে বসে বসে আর একটি প্রেম পত্র লিখে , পোস্ট করলো সে । উৎসর্গ বর্ণনায় উল্লেখ করা না থাকলেও বিধাতা কিন্তু আজ সব জানে ; এ লেখার গুরুত্ব ।
” বয়ে যাওয়া একটা ঝড়ের মত
আমার চোখে ধরা দিয়েছ তুমি ,
শূন্যতার এক অদ্ভুত খেলায়
মেঘ হয়েই বর্ষে গেছ ভালবাসার চিঠিখানি ।
তোমায় সামনাসামনি দেখি নি কোনদিন
হয়ত সুযোগ হয় নি দেখা করবার —
তবু একটিবার তোমায় সামনাসামনি দেখতে চাই
জানতে চাই এক অচেনা পাখি হয়েও
কেন এত বিস্বাস করতে শুরু করেছি তোমায় ।
কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলতে চাই
ভালবাসি তোমায় , ভালবাসবে তুমি কি আমায় ?
তোমার ছবিটা প্রথম দেখি এই পাতাতেই
ফুটে উঠেছিল আমার এই ঝাপসা চোখের সামনে ,
মনে হয়েছিল আবার একবার তোমার জন্য তো
বাঁচাই যায় ।
তারপর বহু বার পত্রের আদান প্রদান ঘটে গেছে
তুমি আমায় চিনেছ খানিকটা আর অল্প আমি তোমায়
ভাষার মধ্যে দিয়েই প্রথম দৃষ্টি পড়েছিল
তোমার চাউনির দিকে , যেন রাম সিতার প্রাক স্বয়ম্বর মিলন ।
নানা হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি আর কবিতার প্রতি
তোমার ভালবাসা আমাকে আরও কাছে ঠেলে দিয়েছে ।
ডাক হরকরার মত ফেরি করে ফিরেছি এত দিন
নানা সুখ দুঃখ প্রেম যন্ত্রণার কাহিনী ,
তবু অপেক্ষা রয়ে গেছে আজও যখন বসে আছি
এই ভিনদেশে , তোমার থেকে অনেক দূরে ;
অপেক্ষা যেন বন্দিনী সিতার তার ভালবাসার থেকে
একটা চিঠির অপেক্ষা : একটা বার্তার অপেক্ষা ।
ভেবে দেখতে পার , হতে পারে তোমার মনের অনেক গভীরে
আগ্নেগিরির হৃদয় থেকে ম্যাগমা একই ভাবে বেরিয়ে আসতে চায় :
প্রচুর ধাক্কা খেয়ে আমারই মত সাহস হারিয়ে ফেলেছে ” ।
ভিতরের এই চাপা সংগ্রামের মাঝে বাইরের পৃথিবী অন্ধকার হয়ে উঠছে আরও । রাত নেমে আসছে প্রকৃতির কোলে । তবু সময় ছুটে চলেছে দুর্বার গতিতে ; থামছে আবার ছুটছে , উজ্জয়িন এর পথে ।

( চলবে )

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।