রক্তাক্ত লোকটা কেমন যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে। মরে যাবে নাকি? আমি বাইক থেকে নেমে লোকটার কাছে গেলাম। মুখ থুবড়ে পরে আছে লোকটা। শ্রেয়ান বাইকটা স্ট্যান্ড করে নেমে এল। আমি লোকটাকে সোজা করে শুইয়ে দিলাম। মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। হেঁচকি ওঠার মতো করছে। আর মুখ দিয়ে ঝলকে ঝলকে রক্ত বের হচ্ছে। লোকটাকে চিনি না, কোনোদিন দেখিনি। লোকটা ঘড়ঘড়ে জড়ানো গলায় বলল, ‘মাফ করে দিবেন বাবু।’আমি ও শ্রেয়ান লোকটাকে ধরে তুললাম। শ্রেয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করলাম লোকটাকে মাঝে বসিয়ে বাইকে করে হসপিটাল নিয়ে যাব। লোকটার কথা এবার বুঝতে পারলাম অস্পষ্ট জড়ানো ভাবে ও বলল ‘আমি জগা। আমিই আপনাকে উঠিয়েছিলাম।’থেমে থেমে বেশ কষ্ট করে জগা কথা গুলি বলল। শ্রেয়ান উত্তেজিত হয়ে বলল,’ জগা, তুই রামদাকে মেরেছিস? ‘জগা বলল ‘না’ সাহেব। জল, জল।’আমি ধমকে উঠলাম ‘শ্রেয়ান ওকে কথা বলাস না। জলদি ওকে হসপিটালাইজ করতে হবে।’ বাইকে জগাকে মাঝে বসিয়ে আমরা কাছাকাছি কোনো হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। জগা অনেক কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু ওর পেটে ঢোকা গুলিটা ওর কণ্ঠ রোধ করছে। রক্তের চিহ্ন দেখলেই বোঝা যায় জগাকে পেটে গুলি করা হয়েছে। সাদা রঙের ময়লা গেঞ্জিটা রক্তে লাল হয়ে গেছে। ও কিন্তু অবিরাম বিরবির করেই চলেছে। আমি বাইকের ইঞ্জিনের শব্দ ছাপিয়ে যেটুকু বুঝতে পারলাম তা হল যে ও অনুতপ্ত। ও আর ওর শাগরেদ মিলে আমাকে কিডন্যাপ করেছিল। আর ওই ট্যাক্সিতেই মারা হয়েছিল ডঃ চোঙদারকে। চোঙদারকে গুলি করেছিল বিদেশি শয়তান যে ওকে ভাড়া করেছিল। ট্যাক্সিতে মারা যাওয়ার আগে ডঃ চোঙদার নিজের রক্ত দিয়ে একটা সংকেত আর আমার মোবাইল নাম্বারটা লিখেছিলেন। ওকে বলা হয়েছিল শুধু দুটো কিডন্যাপ করতে হবে। কিন্তু বিদেশিটা ডঃ চোঙদারের সঙ্গে ইংরেজিতে অনেক ঝগড়া করে রেগে গিয়ে গুলি করে। জগা নিজে ট্যাক্সিটা চালাচ্ছিল ও কিছুই বোঝেনি। বিদেশি শয়তানটা সামনের সিটে ওর পাশেই বসেছিল। জগা মনে হয় আর বাঁচবে না। শ্রেয়ানকে বললাম বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিতে।
শ্রেয়ান বাইকের স্পিড যতটা সম্ভব বাড়িয়ে দিল। জগা বোধহয় নিজের মৃত্যুর আসন্ন বুঝতে পেরে সব কিছু বলে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। আমিও কৌতূহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলাম রামদাকে ও মারলো কেন?ও বলল ও মারেনি। আমায় ধাপার মাঠে নিয়ে আসার দিনই ওকে আটকে রাখে বিদেশি শয়তান গুলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ও ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত ছিল কিনা। ও স্বীকার করল যে ও যুক্ত ছিল। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে জগার। আমি শ্রেয়ানকে সল্টলেকের একটা হসপিটালের দিকে নিয়ে যেতে বললাম। কিন্তু শ্রেয়ান বলল, ‘না অর্কদা, কসবার গোলপার্কের হসপিটালে নিয়ে যাওয়াই ঠিক হবে।’জগা জ্ঞান হারাবার মুখে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘ডঃ চোঙদার কি একা ছিলেন খুন হওয়ার দিন?’জগার কথা আরও বেশি করে জড়িয়ে যাচ্ছে। কি বলল কিছু বোঝা গেল না। মাথা এলিয়ে দিচ্ছে ক্রমশ, শরীরটা ছেড়ে দিচ্ছে যেন। আমার সামনের দিক আর শ্রেয়ানের পেছনের দিক জগার রক্তে ভিজে যাচ্ছে। আমি শ্রেয়ানকে আরও স্পিড বাড়াতে বললাম। শ্রেয়ান স্পিড আরও বাড়িয়ে দিল, কিন্তু উত্তেজনার বশে বাইকটা কন্ট্রোল করতে না পেরে রাস্তার ডিভাইডারে উঠে একটা লাইটপোস্টের গায়ে সজোরে ধাক্কা মারল। আমি সামলাতে না পেরে একেবারে চিৎ হয়ে রাস্তায় পড়লাম। একটু দূরেই একটা স্টেট্ বাস ছুটে আসছে আমার দিকে। বুঝলাম মৃত্যু অনিবার্য। ঘ্যাঁচ করে আমার কাছে এসে ব্রেক কষে দাঁড়াল।মাথাটা ভারি হয়ে এসেছে। আমি ভয়ে ও আশঙ্কায় চোখে অন্ধকার দেখে জ্ঞান হারালাম। আমি জ্ঞান চিরতরে হারালাম কিনা তা বোঝার শক্তি আমার ছিল না।