সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৩৩)

তেত্রিশ

তার মানে ব্যাপারটাই সাজানো। আমার অজ্ঞান হওয়ার সুযোগ নিয়ে পুরোটা স্ক্রিপ্টেড ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আচ্ছা আমার বাবার দল মানে কি? বাবা কোনো দুষ্ট চক্রের মেম্বার ছিলেন? ভাবতেই ভীষণ খারাপ লাগছে। কিন্তু বাবার মতো লোক মানে আমি যতটুকু তাঁকে চিনেছি তিনি এমন হতে পারেন? কি জানি !হয়তো তাই। আমার আর কোনো কিছুতে বিশ্বাস নেই। চারপাশে যা ঘটে চলেছে তাতে আমার আর কোনো কিছুর ওপর ভরসা হচ্ছে না। আমার নিজের ওপরেই প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। আমি এত বড় নির্বোধ যে তিনদিন আমায় স্রেফ বোকা বানিয়ে বন্দি করে রাখা হল আর ঘুণাক্ষরেও টের পেলাম না। গত তিনদিনের ব্যথা বেদনা সবই ছিল কৃত্তিম। হয়তো ইনজেকশন দিয়ে ব্যথা সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেডেটিভ দিয়ে হয়তো আমাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল এই কদিন বেশির ভাগ সময়।
পুরো গল্পটা প্রথম থেকে মনে মনে সাজিয়ে যা দাঁড়ালো তা হল ডঃ চোঙদার আর আমার বাবা দুজনে কলিগ ছিলেন। হয়তো তারা দুজনেই কোনো গ্রুপ এর মেম্বার ছিলেন। কোনো গোপন তথ্য ছিল ডঃ চোঙদার ও বাবার কাছে। বাবা মারা যাওয়ার পর তথ্যটা ডঃ চোঙদারের কাছেই ছিল। ডঃ চোঙদার খুব সম্ভবত সেই তথ্যটা আমার হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। সেই তথ্যের পেছনে কোনো আন্তর্জাতিক চক্র আছে। বাবারা দুজন হয়তো সেই চক্র বা গ্রুপ এর মেম্বার ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ডঃ চোঙদার এতদিন তথ্য গুলো নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন। বয়স বাড়ায় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বাবার উত্তরিধাকারী হিসেবে তথ্য গুলো আমাকে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাই কবিতাটা বাংলায় লেখা। উনি জানতেন আমি একসময় মেনসার মেম্বার ছিলাম। যা বুঝেছি উনিও মেনসার মেম্বার ছিলেন। তাই উপহার দেওয়া বইতে লিখে ছিলেন” ওয়েলকাম টু মেনসা “। তাই তথ্য গুলো কোডিফাই করে আমার উদ্দেশ্যে রেখে গেছেন। কিন্তু একটা কথা ভাবার আছে। উনি দুবছর কলকাতায় থেকেও কেন আমার সাথে যোগাযোগ করলেন না। মরে যাওয়ার আগে আমার মোবাইল নাম্বার লিখে গেছেন মানে উনি ভালো করেই আমার হদিস জানতেন। তবে এটাও ঠিক উনি তো ভাবেননি যে হঠাৎ ওনাকে মরতে হবে। মরতে যখন হল তখন উনি মৃত্যুশয্যায় ধাঁধা দিয়ে আমার উদ্দেশ্যে মেসেজ দিয়ে যান রক্তলেখায়। যেহেতু ট্যাক্সির সিটের পিছনে আমার নাম্বার লেখা ছিল তাই খুনিরা ক্লু গুলো যথাসম্ভব অক্ষত রেখে আমাকে ধাঁধাটা কমিউনিকেট করে। ট্যাক্সির সিটের পেছনের ধাঁধা টা যাতে আমার চোখে পরে তাই ওই ট্যাক্সি নিয়েই আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল।
আমি ধাঁধাটা সমাধান করেও কিন্তু ওদের জানায়নি। তবে বোধহয় ওদের কোনো ক্ষতি নেই। ধাঁধা মামুলি ছিল। হয়তো ওদের মধ্যে কেউ ধাঁধা সমাধান করে ফেলেছিলো। তাই আমাকে কিডন্যাপ করেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডঃ চোঙদারের বৌ সেজে আসা ভদ্রমহিলাকে দিয়ে, ওরা প্ল্যান করে আমায় সিডিটা দেয়। ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা ডাকাতদের হাতে খাকি খামটার মধ্যে হয়তো এই সিডিটাই ছিল। ওই ভদ্রমহিলার হাত দিয়ে ওটা আমার হাতে পৌঁছে দেয়। ওরা বোধহয় ভাবতে পারেনি।
ডঃ চোঙদার ঠিকানা আমার হাতে চলে আসবে আর আমি সেখানে গিয়ে বুঝে যাব যে ওই ভদ্রমহিলা আদৌ ডঃ চোঙদারের স্ত্রী নয়। ওদের চাল ভেস্তে গেল। কিন্তু ওরা চাইছিল আমি যেন সিডিটা উদ্ধার করতে পারি। তাই হয়তো জগাকে ফেলে দিয়ে গিয়ে, ওর মুখ থেকে ডঃ চোঙদারের মৃত্যুর আগের ঘটনা আমাকে জানিয়ে দেওয়া হল। যাতে আমার ধাঁধা সমাধান করতে সুবিধা হয়। ওরা ভেবেছিলো যে শেষ মুহূর্তের ঘটনাগুলো বললে সিডির ধাঁধা সমাধান করতে আমার সুবিধে হবে। ওদের ভাবনাটা ঠিকই। কারণ আমি আগে বেশ কনফিউসড ছিলাম তাই সিডি নিয়ে ভাবতেই পারছিলাম না। আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার লজিকগুলো পরিষ্কার হওয়াতেই হয়তো আমি সিডির কবিতাটা নিয়ে ভাবতে আর সমাধান করতে পারলাম। কিন্তু এখন আমি পুরো পুরি ওদের কব্জায়। শ্রেয়ানকে বাঁচাতে আমাকে ওদের কথা শুনতেই হবে। ওদের কথা মেনে চলতে হবে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।