“ তুমি এখানে নিরাপদ উটকো মানুষ। আমার নাম দ্রেওটিন। আমি তোমার মতই একজন বাকুদের বন্দী। গোটা ব্রহ্মাণ্ডে আমিই সম্ভবত শেষ টানুকা। “
“ আর ও হচ্ছে ফ্রালহাস। ভালো ফ্রালহাস।“ এই বলে তেচোখা বেড়ালটার দিকে শকুনটা একবার ঘাড় নাড়ালো।
বলা বাহুল্য রাজপুত্র এর আগে টানুকা দেখে নি। ছবিতেও নয়। বলা যেতে পারে টানুকারা প্রাচীন যুগের ভগবান বিশেষ। টেকনোলোজি তে অত উন্নত প্রাণী নাকি এখনো ব্রহ্মাণ্ডে নেই। রাজপুত্রের আতঙ্ক টা একটু কেটেছে এতক্ষণে।
“ আচ্ছা, তা বেশ দ্রে- দ্রেওটিন বাবু , কিন্তু আমি বাকুদের বন্দী নই। আর আপনাকেও বন্দী বলে মনে হচ্ছে না। আমাকে এখানে নিয়ে আসবার কারণ জানতে পারি?
ভেতর ভেতর ধাতস্থ হয়ে রাজপুত্র সরাসরি প্রশ্ন করলো টানুকা শকুনকে। একটা চোখ লেন্সে ঢাকা বলে, সেটার দিকেই বারবার চোখ চলে যায়। টানুকা শকুন নিজের হাড়গিলে গলাটা রাজপুত্রের দিকে ফেরাতেই টানুকা শকুনের আরেকটা চোখ রাজপুত্র এতক্ষণে খেয়াল করল । এত অদ্ভুত চোখ যে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়। অজস্র বলিরেখার কোটোরে একটা উজ্জল মণি যেটা ধীরে ধীরে রং বদলাচ্ছে ! গোলাপি থেকে সবুজ, নীল থেকে কমলা হয়ে বেগুনী … ঘোর লেগে যায় বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকলে।
“ বন্দী আমরা দুজনেই উটকো মানুষ। তুমি মানো বা না মানো। তুমি কি ভেবেছিলে তেইশ তোমাকে এত সহজে ছেড়ে দিতো? ”
“কে তেইশ? কে আমাকে সহজে ছাড়বে না ?“ রাজপুত্রের দুটো ভুরু ধনুকের মতন বেঁকিয়ে প্রশ্ন
করলো।
“তোমরা উটকো মানুষ” এই অব্দি বলে শিস দিয়ে উঠলো দ্রেওটিন।
“কি আমরা?”
“তোমরা বিশ্ব জালি , প্রথাগত ভাবে বলতে হয়, তোমরা ব্রেহসভাস্তুলিভাতু, মানে নাক টিপলেই সর্দি বেরোয়। কাঁচা জাত। এখন বলতো, সব বাকুদের মধ্যে নীল রঙের কে? খোকা?”
“বাকু মোড়ল”
“তারিফ। আর বাকু মোড়লের নাম কি?”
“তেইশ ?” ঢোক গিলে রাজপুত্র প্রশ্নচিহ্ন মাখিয়ে শব্দ বের করলো।
“ আমাদের প্রথম প্রোডাকশান পঞ্চাশ পিস ছিলো। এই হারামিটা তেইশ নম্বর। বাকুদের বানাতে আমার সবকিছু, আমাদের সবকিছু শেষ। তোমাদের মতন ব্রেহসভাস্তুলিভাতুদের ভগবান আছে। আমাদের নেই। আমরা নিজেরা যখন গ্রহ ধরে ধরে প্রাণ সৃষ্টি করেছি তোমরা তখন ছিলেনা। আমরা বাকুদের তৈরি করেছি। আদি নক্ষত্রের দিব্বি, হাস্খখ … বাকুদের মতন প্রোডাক্ট বানানোর ক্ষমতা আজ অব্দি কারো হয়ে ওঠেনি।“
“ আমি তাতে কি করবো? আপনাদের বি সি টাইপ সৃষ্টি আপনারা করেছেন।আমার অনুমতি নিয়ে তো করেন নি ” আয়না ধরলে দেখা যেতো রাজপুত্রের ঘিলুর ওপরেই যেন কেউ চা বসিয়েছে।
“অনুমতিহহহ?“ হাড়গিলে গলা বাঁ দিকে নাড়িয়ে দ্রেওটিন গলার স্বরে একটা টান দিলো।
হ্যাঁ অনুমতি। আপনারা … ইয়ে আপনাদের মতন জ্ঞানী শকুন জাতি দুমদাম রাক্ষস বানাবে তারপর তাদের কন্ট্রোল করতে না পেরে সুবিধা অনুযায়ী হঠাৎ আপনারা বিধবা সাজবেন সেটাও তো ঠিক নয় তাই না?
“আমরা শকুন পাখি ?”
“শকুন আপনাদের থেকে অনেক সুন্দর দেখতে পাখি। কারো ক্ষতি করে না, আমাকে ফেরত পাঠালে ফেরান নয়ত মেরে ফেরে ঝামেলা চোকান, আমার বোর লাগছে ”
কথাটা বলে ফেলেই রাজপুত্র পায়ের তলায় হাল্কা ভূমিকম্প টের পেলো। মনের ভুল?