সোনা ধানের সিঁড়ি
৫২
জীবনের অনেকটা সময় আমার বিভিন্ন রেল স্টেশনে কেটে গেল। গ্রীষ্মের দুপুরগুলো তো অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। একা একা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছি। কেন এত ভালো লাগে রেল স্টেশন ? অনেক প্রশ্ন করেছি নিজেকে, কোনো উত্তর পাই নি। আজ বুঝতে পারি সে কেন এত প্রিয়। ছোটবেলা থেকে একা একাই থেকেছি নিজের মনে। কাউকে কখনও বিরক্ত করি নি। ছোটবেলায় জ্বর হলে সকলেই মাকে খোঁজে। আমি একা একা বিছানায় শুয়ে থাকতাম। মায়ের এই নিয়ে একটা কষ্ট ছিল। আসলে আমি চাইতাম না আমাকে নিয়ে সবাই খুব বেশি ভাবুক। আজও এই স্বভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় নি। আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। মানুষকে ভাবিয়ে তোলার মতো কোনো কাজই আমি করে উঠতে পারি নি। রেল স্টেশনে বসলে আমার মনে হয়, পৃথিবীর অনেক কিছু থেকে যেন নিজেকে বার করে আনতে পেরেছি। মুক্ত বিহঙ্গের মতো আমি তখন নিজের মনে উড়ে বেড়াতে পারি।
৫৩
ছোটবেলায় মাটি দিয়ে মূর্তি বানাতাম। তখন বোধহয় ক্লাস ফাইভে পড়ি। এঁটেল মাটি হবে সম্ভবত। একটা কাঠের ছোট্ট পাটার ওপর মূর্তিটা তৈরি করতাম। স্নান করে খেয়ে উঠে বসতাম। সেরকম বলার মতো কিছুই নয়। কাদাটাকে নিয়ে হাতের কায়দায় মোটামুটি একটা আকার দেওয়া। ঘন্টা খানেকের পরিশ্রমে কিছু একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা। কি হয়ে উঠত জানি না তবে কাজ শেষ হলে রান্নাঘরের চালে শুকোতে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। মূর্তি তৈরির দিনগুলোতে ঘুম থেকে উঠতে কি ভালো লাগতো। মনে হতো ঘুম থেকে উঠে যেন চোখের সামনে অন্য কিছু দেখব। রোদের ছোঁয়ায় মূর্তিটা যেন অন্য রূপ পেয়ে গেছে। কিন্তু দেখতাম অন্য ছবি। রোদ এসে মূর্তির মাটিটাকে পুরোপুরি ফাটিয়ে দিয়েছে ! মনটা খুব খারাপ হয়ে যেত। সঙ্গে সঙ্গে ওই ফাটা জায়গাগুলোতে মাটি লাগিয়ে দিতাম। তারপর ঘরে তুলে রাখতাম। পরের দিন দুপুরে আবার রোদে দিতাম। ঘুম থেকে উঠে আবার ফেটে যেতে দেখতাম। আবার ফেটে যাওয়া অংশটায় মাটি ধরাতাম। এত মাটি যে কোথায় যেত ! অথচ মূর্তিটা একটুও মোটা হতো না !
ক্রমশ…