সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ২৬)

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ২৬

পুরীর সাইট সিন গুলোর অদ্ভুত একটা মাদকতা আছে। আপনি যতবারই যান না কেন পুরীর সাইট সিন গুলোতে বেশীরভাগ মানুষের প্রতিবারই যাওয়া চাই। সেই চেনা ছন্দ, পরিচিত রুট, হাতে গোনা চিরদিনের স্পট সবকিছুই অনেকবার করে জানা, দেখা। তবুত প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নানান বাস বা গাড়িতে করে বেরিয়ে পরেন সাইটসিনগুলো দেখতে।
বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সির নিজেদের বাস। পারমিট নেওয়াই ছিলো। তাই কয়েকদিন উড়িষ্যার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরির কোনো অসুবিধে ছিলো না। শুধু নিয়ম অনুযায়ী গাইড নেওয়াটা বাধ্যতামূলক। বল্টুদাও গাইড নিয়েছেন। গাইড যতটা ইতিহাস বলেন তারচাইতেও বেশী মাইথোলজী বলেন। অনেকসময় ইতিহাসের কিছু অদ্ভুত মিসিং লিঙ্ক ধরা পরে তাদের কথায়। যদিও তারা প্রপার ট্রেনিং নেওয়া। তবুও এ সমস্ত ঐতিহাসিক স্থানে সঠিক ইতিহাস জানানোটা দরকার।
চন্দ্রভাগার সেই জায়গা থেকে কোনারকের সূর্য মন্দির খুব একটা দূরে নয়। তিন কিলোমিটারের মধ্যেই। গাইড ডেসক্রিপশান দিয়ে যাচ্ছেন, অন্যদিকে বাসের অনেকেই গুগুল খুলে বসলেন। পুরাণ মতে শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্‍ব ‌রূপে অত্যন্ত নয়নভোলানো ছিলেন। সব মহিলাদের নজর কাড়তেন। শাম্‍ব একদিন নারদের ডাকে সাড়া দিতে ভুলে গেলে নারদের মনে প্রতিরোধ স্পৃহা জাগে। একদিন কৃষ্ণ যখন গোপিনীদের সঙ্গে লীলায় ব্যস্ত তখন নারদের মন্ত্রনায় শাম্‍ব সেখানে ঢুকে পড়ে। সেইসময় গোপিনীদের নজর তার ওপর গিয়ে পড়ে। তখন কৃষ্ণ প্রচুর রেগে গিয়ে তাকে অভিশাপ দানের প্রয়োজনে শাস্তি দেন যে তার রূপ হারিয়ে যাবে। তখন মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে সে কোনারকে সমুদ্রের তীরে এসে সূর্যদেবকে কঠোর তপস্যায় মুগ্ধ করে নিজের হারানো রূপ ফিরে পেয়ে সমুদ্রতীরে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আবার অনেকে বলেন পূর্বগঙ্গ রাজবংশের নরসিংহদেব বাংলা জয়ের স্মারকরূপে চন্দ্রভাগা নদীর তীরে প্রাচীন মিত্রাবনে অর্থাৎ আজকের কোনারকে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
এই সাইট ট্যুর গুলোয় একেকটা স্পটে খুব বেশী সময় থাকে না দেখার। তারমধ্যেই যতটুকু। এই অসাধারণ স্থাপত্যশিল্প এবং বিজ্ঞান দেখতে গেলে সময় প্রয়জন হয়, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখবার প্রয়োজন হয় সূর্য মন্দিরের সামনে বসে। সাইট ট্যুরে এলে সেই সময়টুকু পাওয়া যায় না। তারমধ্যে আবার মার্কেটিং লেগে থাকে। কোনারকে প্রচুর কাজু, পোস্ত এসব বেশ কমদামে বিক্রি হয়। একেবারে প্রায় অবাক হওয়ার মত কম দামে। তো কি হলো বেশ কয়েকজন প্লাস্টিকের প্যাকেটে মোড়া কাজু কিনলেন খুব কম পয়সায়। বাইরে থেকে খুব সুন্দর লাগছিলো কাজুগুলো। হঠাৎ বৌদির কি একটা যেন মনে হলো। বৌদির কৌতুহলী মন কেমন নড়ে চড়ে বসলো। গুহ দা কাজু কিনেছিলেন। বৌদি গুহদার কাছে গিয়ে বললেন “একবার প্যাকেটটা খুলুন তো দেখি।” গুহদা ভাবলেন বুঝি বৌদির কাজু খেতে ইচ্ছে হয়েছে, তাই বৌদিকে বললেন “আপনার জন্যে আমি এটা গিফট করলাম, আমি আর একটা কিনে নিচ্ছি। ” বৌদি বেশ গম্ভীর। বললেন, “সে পরে হবে, আগে প্যাকেটটা খুলুন তাড়াতাড়ি। ” গুহদা আর কি করেন খুলে ফেললেন প্যাকেটটা, এবং খুলেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন। একিঃ…..বাইরের দিকে কয়েকটা ভালো কাজু সাজানো, ভিতরে একেবারে খারাপ পোড়া কাজুতে ভর্তি।”
সাংঘাতিক রাগ হলো সবার। এমন ঠকে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। প্রথমে গুহদা গেলেন প্যাকেট ফেরত দিতে। দোকানদার দূরছাই করে তাড়িয়ে দিলেন। দোকানদার উড়িয়াতে গালাগালি দিচ্ছেন,গুহদা বাংলায়, কে আর বোঝে কার টা। ব্যর্থ হয়ে গুহদা ফেরত আসতেই এবার বৌদি দায়িত্ব নিলেন, সামনে বৌদী, পাখী, রিয়া আরো অনেকে। পিছনে কাজুর প্যাকেট হাতে সবাই। এবার যাকে বলে আক্রমণ তাই আর কি। দোকানদার পালানোর জায়গা পেলেন না। গুহদার বৌ চেঁচাচ্ছেন “ইয়ার্কি পায়া হ্যায়? মজাকি পায়া হ্যায়? বাঙালিকো বোকা পায়া হ্যায়?” হ্যায় তো হ্যায়…কিন্তু এত লোককে ঠকালে কি হয় সেটা বুঝলো দোকানদার। সমস্ত টাকা ফেরত দিতে হলো, সঙ্গে বৌদি এবং আর সবাই প্যাকেট খুলে সব খারাপ কাজু ফেলে দিলেন রাস্তায়। জয়ের আনন্দে মনটাকে ভালো করে সবাই বাসের সীটে এসে বসলেন।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।