সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ২৭)

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ২৭

প্রথমবার বল্টুদার এই বেড়ানোর ট্যুরটা, সকলের মনে থেকে যাবে বহুদিন। ঘটনার পর ঘটনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে চারপাশের এত সমস্ত ঘটে যাওয়া অপ্রস্তুত মুহূর্ত, এই সবে মিলে এ যাত্রাটা একেবারেই অন্যরকম। এর সঙ্গে বল্টুদার অমায়িক ব্যবহার। প্রত্যেকে ভালোবেসে ফেলেছে বল্টুদাকে। সমস্ত খুঁটিনাটির দিকে বল্টুদার সর্বক্ষণ নজয়। কারো রাগ করবার কোনোরকম সুযোগই নেই।
কোনার্কের কাজুবাদাম কিনলো না কেউ। বেশ যুদ্ধ জয়ের মেজাজ নিয়ে সকলে উঠে পড়লেন বাসে। এর পরে ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির, তারপর ধবলগিরি, খণ্ডগিরি, উদয়গিরি, এবং সবশেষে নন্দনকানন। কোথাও খুব বেশী সময় দেওয়ার ব্যাপার নেই। সকলকেই সময় দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গাইড যাচ্ছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সবাই ফিরে আসছেন। এটুকুই। জুতো খুলে যে যার সিটে পা ঝুলিয়ে আরামে বসে পড়লেন। এবারের দূরত্বটা অনেকদূর। যেতে যেতে এটা ওটা খাওয়া দাওয়া চলছিলো। হঠাৎ বল্টুদা লক্ষ্য করলেন বাসের পাশে পাশে একটা পুলিশের গাড়ি চলেছে। বল্টুদা একটু অবাকই হলেন। যতবারই বাস ড্রাইভার কানাই গাড়িটাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে জায়গা ছেড়ে দিতে চায়, কিন্তু পুলিশের গাড়িটা কিছুতেই ছেড়ে এগোয় না। একটা দূরত্ব বজায় রেখেই বাসটার পিছনে পিছনে আসছে পুলিশের গাড়িটা।
বাস এসে পৌঁছলো লিঙ্গরাজ মন্দিরে। কিছুক্ষন সময়, বাস থেকে নেমে মন্দির দর্শন। ভুবনেশ্বর শহরে পৌঁছে গেছে ওরা। মন্দির দেখে বাস ছেড়ে দিলো। শহরের মধ্যে থেকে গিয়ে এবার বাইপাশে উঠবে। ভুবনেশ্বর শহর এবং শহর ছাড়িয়ে কিছুদূরের মধ্যে নানান ইতিহাস আর পুরান ঘটনাবলী, স্মৃতি, ইতিহাস মিশে আছে। চারিপাশ দেখতে দেখতে চলেছেন সবাই। সূর্য মাঝ আকাশে। লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। প্যাকেট লাঞ্চ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন বল্টুদা। যেহেতু আজ প্রায় সারাদিন প্রায় নানান মন্দির আর ঐতিহাসিক স্থান দর্শন, তাই মেনুতে নিরামিশ। হোটেলে ফিরে রাতে মাছ মাংস আছে। তবুও মেনু খারাপ না। মিষ্টি পোলাও, কষা আলুর দম, পনীর। এবং সঙ্গে মিষ্টি। সকলের জন্যেই বাস জার্নির সময় সাফিসিয়েন্ট জল দেওয়া হয়। বাস চলছে, বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে দারুন খাওয়া দাওয়াও চলছে।
বল্টুদা কিন্তু লক্ষ্য রাখছেন রাস্তার দিকে। বাস চলেছে বাইপাস ধরে ধবলগিরির উদ্দেশ্যে। ঠিক যে খানটা থেকে রাস্তা বাঁক নিয়েছে ভিতরের দিকে, বল্টুদা লক্ষ্য করে দেখলো সেই পুলিশের ভ্যানটা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। বাকীদের চোখে পড়ছে না খুব কিন্তু বল্টুদা সমানে নজর রাখছেন। বাস ঢুকে গেলো ধবলগিরির দিকে। অনেকগুলো সিঁড়ি, তারপর মন্দির। শ্বেতশুভ্র মন্দিরে দাঁড়িয়ে দূরের দৃশ্য অসাধারন। এই সেই দয়া নদী। জল প্রায় নেই। কিন্তু ইতিহাস আছে। কলিঙ্গ যুদ্ধ হয়েছিলো এই নদীর ধারেই। তারপর থেকেই সম্রাট অশোকের পরিবর্তন আসে। এই প্রেক্ষাপট টা ইতিহাসের দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধবলগিরিতে খুব ভালো আখের রস পাওয়া যায়। কেউ কেউ খেলো। তারপর নেমে এলো নীচে। গাড়িতে উঠে অন্য কোথাও। বল্টুদা আজ শুরু থেকেই দুজন লোক কে লক্ষ্য করছেন। যেখানে বল্টুদারা যাচ্ছেন, সেখানে তারাও আছেন। প্রথম দিকে বল্টুদা খুব একটা গুরুত্ব দেয় নি। কিন্তু ক্রমশ সন্দেহ বাড়ছে। একদিকে পুলিশের গাড়ি, অন্যদিকে রহস্যময় দুজন লোক।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।