সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ২৮)

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ২৮

খারবেল প্রাচীন কলিঙ্গ রাজ্যের মহামেঘবাহন রাজবংশের তৃতীয় এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন। ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বর শহরের নিকটবর্তী উদয়গিরি পাহাড়ের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত হাথিগুম্ফা নামক চৌদ্দ নম্বর গুহার দেওয়ালে প্রাকৃত ভাষায় ও ব্রাহ্মী লিপিতে উত্কীর্ণ একটি প্রাচীন শিলালিপি থেকে খারবেল সম্বন্ধে ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন ভাবে এই লিপির বিশ্লেষণ করেছেন।
উদয়গিরি এবং খণ্ডগিরি গুহা হলো কিছুটা প্রাকৃতিক এবং কিছুটা কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট কতগুলি গুহার সমষ্টি যার প্রত্মতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং এর অবস্থান ভারতের ওড়িশা প্রদেশের ভুবনেশ্বর শহরের নিকটে। গুহাগুলি উদয়গিরি এবং খণ্ডগিরি নামক পাশাপাশি অবস্থিত দুটি পাহাড়ের গায়ে সৃজিত, যাদেরকে হাথিগুম্ফা শিলালিপিতে কুমারী পর্বত নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই গুহাগুলো চমৎকারভাবে খনন করা। এগুলো কলিঙ্গ রাজ খারবেলের রাহত্বকালীন সময় জৈন সাধুগণের আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত্ হত বলে ধারণা করা হয়। উদয়গিরি পাহাড়ে ১৮ টি এবং খণ্ডগিরি পাহাড়ে ১৫ টি গুহা রয়েছে।
গাইড প্রায় মুখস্তর মত করে ইতিহাস বলে চলেছেন। বাসের কয়েকজন নিয়মকরে উইকিপিডিয়া সার্চ করে দেখলেন মোটামুটি একই রকম বিবরন রয়েছে সেখানে। এর পর গাইড প্রত্যেকটা গুহার নাম বলে যেতে থাকলেন। কার আর এত মাথায় রাখার ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং গুহাগুলির নাম মন থেকে গেলো মুছে। কিন্তু প্রকৃতি যে এখানে খুব সুন্দর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এক পাহাড়ে উঠতে হলো অনেকটা পাথর আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। আর এক পাহাড় সাজানো। ছোটো ছোটো গুহা। বেশ দম লাগে এই দুই পাহাড়ে। বাস প্রায় গুহার কাছাকাছি চলে যায়। তবুও কিছুটা করে তো উঠতেই হয়।
বল্টুদা সতর্ক খুব, বৌদি, নদী, গুহ দা এবং আরো সকলে এক এক করে চারিপাশে ঘুরে দেখছেন। একবার পাহাড়ে উঠছেন, একবার নামছেন। বৌদি উপর থেকে নীচের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলেন বল্টুদা একটি পুলিশের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। গাড়ী থেকে পুলিশের ড্রেস পরা দুজন নেমে এলেন। গভীর আলোচনা হচ্ছে। বৌদি দূর থেকেই বুঝতে পারলেন বিষয়টা খুব জরুরী কিছু। অনেকে উঠেছেন বৌদির সঙ্গে। তাদের নিয়ে আস্তে আস্তে গুহা দেখে নামছেন বৌদি। চারপাশে বাঁদর। অনেকেই কেমন ভয় পাচ্ছেন। বাদাম, কলা এসবের দোকান রয়েছে। আর কি অদ্ভুত, সেই সব দোকানে বাঁদর গুলো ঝাঁপিয়ে পরে না। বরং যারা ঘুরতে যায় আবদারটা তাদের কাছেই থাকে। কেউ কিনে দেন কিছু, কেউ দেন না। একটু এদিক ওদিক করলেই দু চারটে দুষ্টু বাঁদর চাটি মেরে যায়, কখনো চশমা বা টুপি কেড়ে নেয় তারা। বৌদিকে এর আগে একবার কে যেন বলেছিলো, উদয়গিরি আর খন্ডগিরির বাঁদরদের ট্রেনিং দেওয়া হয়। আর সেটা দেয় এ সমস্ত স্থানীয় দোকানদারেরা। যাতে করে বিক্রি হয় বেশী।
ওরা সবাই আস্তে আস্তে নীচে নেমে এলো। বল্টুদা উপরে যায় নি। বৌদি যেখানে পুলিশ দের সঙ্গে বল্টুদাকে কথা বলতে দেখেছিলো তার আশেপাশেই বল্টুদাকে খুঁজে পাওয়া গেলো। বল্টুদা খুব সিরিয়াস মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। সবাই একে একে যে যার মত বাসে উঠে গেলো। বৌদি আস্তে আস্তে বল্টুদার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “পুলিশ দের সঙ্গে কথা বলছিলে কেন?
বল্টুদা চারিপাশে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিলেন। কেউ নেই। সবাই বাসে। যতটা সম্ভব মাথা ঝুঁকিয়ে বৌদির মাথার কাছে মাথা নিয়ে এসে বললেন কলকাতা পুলিশ আর উড়িষ্যা পুলিশ মিলে হীরে চুরির তদন্ত করছে। যে দুজনকে দেখলে তারা কলকাতা পুলিশের লোক। ওদের ধারনা হীরে চোর আমাদের গাড়িতেই আছে। ওদের প্রাথমিক তদন্ত তাই বলছে। তবে সেই হীরের দোকানের ক্যামেরা আগে থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো, তাই কোনো স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায় নি। বাইরে একটি ক্যামেরা লাগানো ছিলো। সেই ক্যামেরা থেকে চোরের মুখের একটা অবয়ব পাওয়া গেছে শুধু। যদিও সেটা যে খুব একটা ভালো তেমন নয়। প্রাথমিক ভাবে সেটাকে বেস করে এবং তদন্তে নেমে একজন লোককে সনাক্ত করা হয়। তার পিছনে পুলিশ লেগে পরে। এবং আশ্চর্য, যেদিন চুরি করা হয়েছিলো তার ঠিক পরের দিন থেকেই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না সাসপেক্টেড সেই লোকটির।
এক দমে সব কথাগুলো বৌদিকে বলে গেলেন বল্টুদা। এবং শেষে বললেন ওদের ধারনা এবং অনুসন্ধান বলছে এই বাসে করেই সেই চোর এসেছে এবং হীরে গুলোকে এখানে কোথাও বিক্রি করে দেওয়ার ধান্দায় রয়েছে। বিষয়টা বেশ গুরুতর। বৌদি প্রথমে আতঙ্কিত হয়ে পরেছিলেন। তারপর আস্তে আস্তে ধাতস্থ হলেন। চোখের সামনে ভাসতে থাকলো বেরাতে আসা একেক জনের মুখ। একেক জনের কথা ভাবছেন, আর নিজেই কেমন চমকে চমকে উঠছেন। কে সে, কে সে?এমন এক ভয়ঙ্কর চোর তাদের সঙ্গে ঘুরছে। বল্টুদা বৌদিকে আস্তে করে বলে দিলেন, “বাসের আর কেউ যেন বিষয়টা জানতে না পারে। তাহলে বাকীরা ভয় পাবে, আর চোর সতর্কিত হয়ে যাবে। তারচাইতে চুপচাপ থাকাই ভালো। আমি নজর রাখছি “। বল্টুদার নজর রাখার উপরে বৌদির ঠিক কতটা ভরসা বোঝা গেলো না। তবে বৌদির মুখের হাসি চলে গেলো আর তিনি মুখে কুলুপ আঁটলেন।
বল্টুদা আর বৌদি যখন কথা বলছেন, তখন বাসের মধ্যে থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ পাওয়া গেলো। বল্টুদা বাসে উঠে দেখলেন বাগবাজারের কাপড়ের দোকানের মালিক দাস দা আর বৌদির জুতো হাওয়া, মানে চুরি হয়েছে। ওদের বুঝতে আর বাকী রইলো না য্যে চোর বাসের মধ্যেই আছে। বল্টুদা এই সিরিয়াল জুতো চুরি দেখে কয়েক পাটি স্যান্ডেল কিনে রেখে দিয়েছিলেন বাসে। পায়ের মাপ যেমনই হোক, মোটামুটি কিছুক্ষনের জন্য স্যান্ডেল পরতে বাকী জুতোর থেকে অসুবিধে কম হবে। দাস দা আর বৌদি কি আর করেন, গলিয়ে নিলেন জুতো। কানাই বাস ছেড়ে দিলো। বাইপাসে বাস পরবার সময় বল্টুদা দেখলেন সেই পুলিশের ভ্যানটা রাস্তার একধারে দাঁড়িয়ে আছে।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।